শিশু একটু জ্বর, কাশি বা সর্দিতে আক্রান্ত হলে বাড়ির পরিবেশই বদলে যায়। বাবা–মায়ের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। তখন হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তাই দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এই তাড়াহুড়োতে অনেক সময় এমন কিছু করা হয়, যা শিশুর সুস্থ হয়ে ওঠার গতি কমিয়ে দেয়।
বেশিরভাগ ভুল হয় ভালোবাসা থেকে, কিন্তু ভুলটাই যখন ক্ষতি ডেকে আনে তখন সেটি জানা জরুরি। ঠিক কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চললে শিশুর সেরে ওঠা আরও সহজ হয়- এ নিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মিলিন্দ জামবাগি এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। চলুন সহজ ভাষায় দেখে নিই বাবা–মায়েদের কোন পাঁচ কাজ একদমই করা উচিত নয়-
১) ওভার-দ্য-কাউন্টার ঠান্ডা–কাশির ওষুধ দেবেন না: শিশুর কাশি শুরু হতেই অনেকেই দোকান থেকে ঠান্ডা–কাশির ওষুধ কিনে দেন। ডা. জামবাগি বলছেন, ছোট বাচ্চাদের ঠান্ডা–কাশির সিরাপ বা কাশি বন্ধ করার ওষুধ দেয়া ঠিক নয়। এসব ওষুধ ভাইরাল কমাতে পারে না, বরং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
শিশুকে আরাম দিতে ভালো উপায় হলো—নুন–পানির স্প্রে, স্যালাইন নেবুলাইজেশন, গরম ভাপ, আর এক বছরের বেশি হলে একটু মধু। এগুলো প্রাকৃতিকভাবে শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
২) অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা পুরোনো প্রেসক্রিপশন ব্যবহার করবেন ন : শিশু অসুস্থ মানেই অনেকে ভাবেন, অ্যান্টিবায়োটিক দিলে দ্রুত সুস্থ হবে। কিন্তু ভাইরাল হলে এসব কাজই করে না। উল্টো ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক কম কাজ করে এমন অবস্থাও তৈরি হতে পারে।
ডা. জামবাগি বলেন—শরীরকে ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার সময় দিতে হবে। ডাক্তার না বললে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। আগের অসুখের পুরোনো ওষুধ ব্যবহার করাও খুব বিপজ্জনক।
৩) খেতে না চাইলে জোর করা যাবে না: ভাইরালে ক্ষুধা কমে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। জোর করে খাওয়ালে শিশু আরও বিরক্ত হয়। এ সময় খাবারের চেয়ে বেশি দরকার জলীয় খাবারের মাধ্যমে শরীরকে ঠিক রাখা। শিশুর শরীর হাইড্রেট রাখতে পানি, খাবার স্যালাইন, গরম স্যুপ (গলা ব্যথা থাকলে টক স্যুপ বাদ দিন), ডাবের পানি, ডাল-ইত্যাদি তরল জাতীয় খাবার দিন। শিশু সুস্থ হলে খিদে এমনিতেই ফিরে আসবে।
৪) খুব তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠাবেন না: অনেক সময় মনে হয় জ্বর কমেছে, এবার স্কুলে পাঠানো যায়। কিন্তু ডা. জামবাগি বলেন—এসময় বিশ্রামই সবচেয়ে জরুরি।
শিশুর যদি জ্বর থাকে, দুর্বল লাগে, ঠিকমতো খেতে–পান করতে না পারে, অবসন্ন বা দুর্বল দেখায়,
তাহলে বাসায়ই রাখা উচিত। তাড়াহুড়ো করলে সুস্থ হতে আরও দেরি হবে, আর অন্য বাচ্চারাও সংক্রমিত হতে পারে।
৫) রুটিন নষ্ট হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না: অসুস্থ হলে শিশুদের ঘুম–খাবার–স্ক্রিন টাইম সবই গুলিয়ে যায়। এতে বাবা–মা ভাবেন শিশুর অভ্যাস নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ডাক্তার বলেন—এ সময় নিয়ম নয়, আরামটাই বেশি দরকার।
শিশু যদি কাছাকাছি থাকতে চায়, একটু বাড়তি আদর চায়, স্ক্রিনে কার্টুন দেখে সময় কাটাতে চায়—তাতে সমস্যা নেই। এগুলো সাময়িক। সুস্থ হলেই আবার নিয়মে ফিরে আসবে।
শিশুর ভাইরাল অসুখে আতঙ্ক নয়, সচেতন যত্নই আসল। একটু বাড়তি হাইড্রেশন, বিশ্রাম, আর ঠিক সিদ্ধান্ত—এমন ছোট যত্নই শিশুর সুস্থতা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে পারে। ভালোবাসা থাকলে যত্ন দেওয়া কঠিন নয়, শুধু ভুলগুলো এড়িয়ে চলাই আসল কাজ।