শিরোনাম
◈ ডাকসুতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হল সম্পাদক হতে যাচ্ছেন সাফজয়ী নারী ফুটবলার রেহানা আক্তার ◈ নেপালকে হা‌রি‌য়ে জ‌য়ের ধারায় ফির‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বাণিজ্য সম্পর্ক বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব : পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী ◈ ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন ও সাপ্তাহিক ২ দিন ছুটির দাবি ডিআরইউ’র  ◈ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে বলে মনে হচ্ছে না: মালয়েশিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ◈ ডিজিটাল ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধনের শর্ত বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করল বাংলাদেশ ব্যাংক ◈ রুমিন ফারহানার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এনসিপির ◈ যৌ.নকর্মীর চরিত্রে অভিনয় আমাকে মননশীল করেছে: রুনা খান ◈ ঈদে মিলাদুন্নবী কবে, জানা গেল তারিখ ◈ শোকজের খবরে যা বললেন ফজলুর রহমান

প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট, ২০২৫, ০১:২৩ দুপুর
আপডেট : ২৪ আগস্ট, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোলেস্টেরল কী এবং কেন এটি বিপজ্জনক? যেভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ছে

আপনার শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ছে: যে লক্ষণগুলো অবহেলা করা চরম বিপজ্জনক

আধুনিক জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে আমাদের শরীরে নীরবে যে রোগগুলো বাসা বাঁধছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ কোলেস্টেরল। একে প্রায়শই 'নীরব ঘাতক' বলা হয়, কারণ এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই সাধারণ যে আমরা প্রায়শই তা উপেক্ষা করি। কিন্তু রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে সতর্কবার্তা পাঠায়। সময়মতো এই লক্ষণগুলো চিনতে পারলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

কোলেস্টেরল কী এবং কেন এটি বিপজ্জনক?

কোলেস্টেরল হলো রক্তে থাকা মোমের মতো এক ধরনের চর্বি, যা সুস্থ কোষ তৈরির জন্য শরীরের প্রয়োজন। কিন্তু যখন 'খারাপ' কোলেস্টেরল বা লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL) এর মাত্রা বেড়ে যায়, তখন এটি রক্তনালীর ভেতরের দেয়ালে প্লাক (Plaque) হিসেবে জমতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াকে ‘অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস’ (Atherosclerosis) বলা হয়। এর ফলে ধমনীগুলো সরু ও শক্ত হয়ে যায় এবং রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, যা থেকে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়।

যেভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ছে:

১. পায়ে ব্যথা ও ক্র্যাম্প (পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ - PAD):
উচ্চ কোলেস্টেরলের অন্যতম প্রধান এবং প্রাথমিক লক্ষণ হলো পায়ে ব্যথা। হাঁটাচলার সময়, বিশেষ করে সিঁড়ি ভাঙার সময় পায়ে, উরুতে বা নিতম্বে তীব্র ব্যথা বা খিঁচুনি অনুভব হতে পারে, যা বিশ্রামের সময় কমে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘ক্লাউডিকেশন’ (Claudication) বলে। এটি আসলে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD)-এর লক্ষণ। ধমনীতে কোলেস্টেরল জমে পায়ের রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে পেশিগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে এই ব্যথা হয়। অনেক সময় বিশ্রামের সময়ও পায়ে ভারিভাব বা অসাড়তা অনুভব হতে পারে।

২. বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা (Angina):
হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী করোনারি ধমনীতে যখন কোলেস্টেরল জমে, তখন বুকে ব্যথা, চাপ বা অস্বস্তি হতে পারে। এই অবস্থাকে অ্যানজাইনা বলা হয়। এই ব্যথা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক চাপের সময় বাড়ে এবং বিশ্রামে কমে। অনেকে এটিকে গ্যাসের ব্যথা ভেবে ভুল করেন, কিন্তু এটি হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব সংকেত হতে পারে।

৩. ঘাড়, চোয়াল, পিঠ বা কাঁধে ব্যথা:
অনেক সময় হৃৎপিণ্ডের সমস্যা থেকে সৃষ্ট ব্যথা বুকে সীমাবদ্ধ না থেকে শরীরের উপরের অংশে, যেমন—ঘাড়, চোয়াল, পিঠ বা কাঁধে ছড়িয়ে পড়তে পারে। রক্ত প্রবাহের সমস্যাজনিত এই ব্যথাকে আমরা প্রায়শই পেশি ব্যথা ভেবে উপেক্ষা করি।

৪. হাত-পায়ে অসাড়তা ও ঠান্ডা ভাব:
রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার কারণে হাত ও পায়ে ঝিনঝিন করা, অসাড়তা বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঠান্ডা অনুভব হওয়া উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে পায়ের আঙুল বা ত্বকের রঙে নীলচে ভাবও দেখা যায়, যা রক্তে অক্সিজেনের অভাব নির্দেশ করে।

৫. অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া:
শরীরের ধমনীগুলো সরু হয়ে যাওয়ায় হৃৎপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। এর ফলে সামান্য শারীরিক পরিশ্রমে, যেমন—কিছুক্ষণ হাঁটা বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় দ্রুত হাঁপিয়ে যাওয়া বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করা কোলেস্টেরল বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।

৬. চোখের চারপাশে হলদেটে ভাব (জ্যানথেলাসমা - Xanthelasma):
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে চোখের উপরের বা নিচের পাতায় বা এর চারপাশে ত্বকের নিচে হলদে রঙের চর্বি জমতে দেখা যায়। এই অবস্থাকে জ্যানথেলাসমা বলা হয় এবং এটি রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ। এটি ইঙ্গিত দেয় যে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

৭. স্ট্রোকের লক্ষণ:
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে প্লাক জমলে বা রক্ত জমাট বেঁধে গেলে স্ট্রোক হতে পারে। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে হঠাৎ মুখ, হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া (বিশেষ করে শরীরের একপাশে), কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা এবং তীব্র মাথাব্যথা।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
উপরোক্ত যেকোনো এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে, বিশেষ করে যদি আপনার বয়স ৪০-এর বেশি হয়, পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, বা আপনি ধূমপান, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষার (লিপিড প্রোফাইল) মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা সহজেই নির্ণয় করা যায়।

সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, যেমন—স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং এর থেকে সৃষ্ট গুরুতর রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

সূত্র:

  • এবিপি লাইভ (প্রদত্ত প্রাথমিক উৎস)

  • মায়ো ক্লিনিক (Mayo Clinic): উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।

  • আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (American Heart Association): হৃদরোগ এবং কোলেস্টেরল ব্যবস্থাপনার নির্দেশিকা।

  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization - WHO): কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং এর ঝুঁকির কারণ সম্পর্কিত তথ্য।

  • ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস, যুক্তরাজ্য (NHS, UK): কোলেস্টেরলের লক্ষণ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক তথ্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়