মানবমস্তিষ্কের ওপর টিকটক, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম রিলস এবং ইউটিউব শর্টসের প্রভাব অনেকটা মাদকাসক্তির মতো। চীনা বিজ্ঞানীদের চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্পদৈর্ঘ্য কনটেন্ট দেখলে মস্তিষ্কের বেশ কিছু নিউরাল পাথওয়ে বদলে যায়।
ভিডিও দেখলে মনে আনন্দ ও উত্ফুল্লতার অনুভূতি তৈরি হওয়া ছাড়া দেহে বাড়তি কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই। ফলে আসক্ত ব্যক্তিরা ভিডিও দেখা থামানোর কোনো তাগিদ অনুভব করেন না, বরং ধীরে ধীরে ভিডিও দেখায় ব্যয় করা সময় বাড়তে থাকে।
ভাইরাল হওয়ার জন্য শর্ট ভিডিও নির্মাতারা অল্প সময়ের মধ্যে দর্শকের মনে সর্বোচ্চ পরিমাণ আবেগ তৈরির চেষ্টা করে থাকেন। ভিডিওগুলোর বিষয়বস্তু তেমন গভীর বা জটিল হয় না, উজ্জ্বল রং ও জোরালো আবহ সংগীত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলো দেখা মাত্র মস্তিষ্কে ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মাত্রা বেড়ে যায়। মানবমস্তিষ্কে নারকোটিকস গোত্রের মাদকের প্রভাবও ঠিক একই রকমের।
এ দুটি নিউরোকেমিক্যাল মস্তিষ্কে আনন্দ ও উত্ফুল্লতার অনুভূতি তৈরি করে, যা কর্ম ও পুরস্কার (রিয়াওর্ড) সিস্টেমের সঙ্গে জড়িত। একই কাজ বারবার করলে সমান পরিমাণ ডোপামিন তৈরি হয় না। ফলে ভিডিও দেখে ব্যয় করা সময় বেড়ে যায়।
মস্তিষ্কে প্রতিনিয়ত বাড়তি ডোপামিন তৈরি হলে এর স্থায়ী প্রভাব পড়ে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের নিউরনগুলোর মধ্যে।
মনোযোগ দিয়ে কাজ করা বা গভীর চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায়, আবেগ প্রকাশে সমস্যা হয়, সারাক্ষণ ভিডিও দেখার জন্য তৈরি হয় গভীর তাড়না। স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিশক্তিও নষ্ট হয়, তৈরি হয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজকর্ম করার ইচ্ছা (ইমপালসিভ অ্যাকশন)।
এই গবেষণায় মোট ১৫১ জন অংশ নিয়েছেন। প্রতিদিন তাঁরা অন্তত দু-তিন ঘণ্টা করে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও দেখেছেন। এরপর তাঁদের মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশ সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা।
যাঁদের বয়স ২০ বছরের কাছাকাছি, তাঁদের মধ্যে ক্ষতিকর প্রভাব দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওপর গবেষণায় বিধি-নিষেধ থাকায় কিশোর বয়সীদের মধ্যে ক্ষতি কতটা হচ্ছে, সেটি জানা যায়নি। তবে গবেষকরা ধারণা করছেন, অপরিপক্ব মস্তিষ্কে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
সরাসরি মস্তিষ্কের ক্ষতির পাশাপাশি পরোক্ষ ক্ষতিরও কারণ হতে পারে শর্ট ভিডিও আসক্তি। ভিডিওর নেশায় বুঁদ হয়ে অসামাজিক হয়ে পড়ে অনেকেই। রাতের ঘুমও ব্যাহত হয়। এতে মানসিক ও শারীরিক, দুই ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে।
সূত্র : ফ্রন্টিয়ারস ইন হিউম্যান নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণাপত্র