থাইরয়েড হরমোন আমাদের দেহের বিপাক হার, হৃদস্পন্দন, তাপমাত্রা, মেজাজ এবং হজমের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। তবে এই হরমোনগুলো যখন অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃসৃত হয় একটি অবস্থা যাকে বলা হয় ‘থাইরোটক্সিকোসিস’, সাধারণত হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে তখন তা নীরবে শরীরের নানা অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে। এই লক্ষণগুলো অনেক সময় দুশ্চিন্তা বা সাধারণ স্ট্রেসের সঙ্গে মিল থাকায় মানুষ তা উপেক্ষা করে। সময়মতো এই লক্ষণগুলো চেনা গেলে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব। নিচে এমন ১০টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো।
১. খাবার খাওয়ার পরও অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া: আপনি যদি প্রচুর খাওয়ার পরও দ্রুত ওজন হারান, তবে এটি থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণের লক্ষণ হতে পারে। এই হরমোনগুলো বিপাক হার বাড়িয়ে দেয়, ফলে শরীর দ্রুত ক্যালোরি পুড়িয়ে ফেলে।
২. হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া বা অনিয়মিত হওয়া: বেশি থাইরয়েড হরমোন হৃদযন্ত্রকে অতিমাত্রায় উত্তেজিত করে। এতে বিশ্রামের সময়ও বুক ধড়ফড় করা, হার্টবিট মিস হওয়া, বা অনিয়মিত গতি দেখা দেয়। এটি এট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন বা হার্ট ফেইলিউরের মতো জটিল অবস্থার কারণ হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত উদ্বেগ, নার্ভাসনেস ও মেজাজের ওঠানামা: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে। খুব সামান্য কারণেও আপনি অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারেন বা মানসিক চাপ অনুভব করতে পারেন।
৪. তাপ সহ্য করতে না পারা ও অতিরিক্ত ঘাম হওয়া: আপনি যদি স্বাভাবিক তাপমাত্রায়ও গরম অনুভব করেন, বা অল্প পরিশ্রমেই অতিরিক্ত ঘামতে থাকেন, তবে তা থাইরয়েড অতিসক্রিয়তার ইঙ্গিত হতে পারে। অনেক সময় রাতে ঘামার প্রবণতাও বাড়ে।
৫. হাত কাঁপা ও মনোযোগের অভাব: হাতের পাতায় সূক্ষ্ম কাঁপুনি এবং চিন্তা বা মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা দুটিই অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোনের কারণে স্নায়ুর অতিরিক্ত উত্তেজনার লক্ষণ।
৬. গলায় ফোলাভাব বা গলার নিচে গোটার মতো দেখানো: গলার নিচে ফোলা ভাব বা চেপে ধরার অনুভূতি দেখা দিলে তা গলগণ্ড (গয়টার) হতে পারে। এটি থাইরয়েড গ্রন্থির অতিসক্রিয়তা নির্দেশ করে।
৭. চোখে পরিবর্তন, চোখ উঁচু হয়ে যাওয়া বা শুকনো অনুভব: গ্রেভস ডিজিজ নামক অটোইমিউন রোগে চোখ বাইরে বেরিয়ে আসা দেখা দেয়। চোখ শুকিয়ে যাওয়া, ঝাঁজালো অনুভূতি বা ডাবল ভিশনও হতে পারে।
৮. প্রস্রাবের পরিবর্তন বা অতিরিক্ত পায়খানা হওয়া: থাইরয়েড হরমোনের প্রভাবে হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ফলে ঘন ঘন পায়খানা হওয়া বা পাতলা পায়খানা হতে পারে, যা পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ায়।
৯. অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও সবসময় ক্লান্ত লাগা ও পেশি দুর্বল হওয়া: যদিও শরীরের কার্যকলাপ বেড়ে যায়, তবু অনেকে চরম ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং সিঁড়ি ভাঙা বা ভারী কিছু ওঠানোতে শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। পেশির ভাঙ্গনও হতে পারে।
১০. চুল পাতলা হয়ে যাওয়া ও ত্বকে পরিবর্তন: চুল পড়ে যাওয়া বা মাথার চুল পাতলা হওয়া, বিশেষ করে ভ্রুর পাশের অংশে, থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে হয়। ত্বক মসৃণ, অতিরিক্ত নরম বা ঘেমে উঠতে পারে।
কখন চিকিৎসক দেখাবেন?
উপরের যেকোনো কয়েকটি লক্ষণ যদি একসঙ্গে অনুভব করেন বিশেষ করে ওজন কমা, হৃদস্পন্দন বাড়া, মানসিক অস্থিরতা বা ক্লান্তি তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে থাইরয়েডের কার্যকারিতা যাচাই করা হয়। প্রয়োজনে অ্যান্টিবডি পরীক্ষাও লাগতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সাধারণ তথ্যভিত্তিক। এটি কোনোভাবে চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। আপনার শরীরে যদি উপরের লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা দেয়, তবে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া