অনেকেই মনে করেন মানসিক রোগ মানেই মন খারাপ বা বিষণ্নতা। কিন্তু বিষয়টি এতটা সরল নয়। চিকিৎসকদের মতে, মানসিক রোগ শুধু মানসিক অবসাদে সীমাবদ্ধ থাকে না—শরীরও অনেক সময় জানান দেয় যে, ভেতরে কিছু একটা ঠিকঠাক চলছে না।
উপসর্গই প্রধান ইঙ্গিত
শারীরিক রোগ নির্ণয়ে যেমন নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়, মানসিক রোগের ক্ষেত্রে উপসর্গই সবচেয়ে বড় ভরসা। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লেই গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক রোগকে মৃদু ও জটিল—এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। মৃদু মানসিক সমস্যা অনেক সময় বাইরের চোখে ধরা পড়ে না। আক্রান্ত ব্যক্তি দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিতে পারেন, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাঁর মানসিক ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটে।
প্রাথমিক লক্ষণগুলো কেমন হতে পারে?
খিটখিটে মেজাজ
অল্পতেই রেগে যাওয়া
মনোযোগে ঘাটতি
স্মরণশক্তির দুর্বলতা
ঘুমের সমস্যা
অতিরিক্ত ক্লান্তি
বুক ধড়ফড় করা বা শ্বাসকষ্ট
আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া
জনসমাগম এড়িয়ে চলা
শরীরের প্রতিক্রিয়া
অনেক সময় দেখা যায়, উদ্বেগজনিত সমস্যা বা বিষণ্নতা এমনভাবে প্রকাশ পায়, যা শরীরের রোগের মতোই বাস্তব মনে হয়। কেউ হয়তো অস্থিরতা, কান্না, কাজের প্রতি অনাগ্রহ, এমনকি প্রিয়জনদের প্রতিও বিরক্তি অনুভব করেন।
বিশেষ মানসিক উপসর্গ
ভীতি ও অস্বস্তি: লিফট, তালাবদ্ধ ঘর, জ্যাম, কিংবা জনসমাগমে অতিরিক্ত অস্বস্তি বা উদ্বেগ।
সুচিবায়ুতা (Obsessive-Compulsive Disorder): অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতার বাতিক, একই কাজ বা চিন্তা বারবার করা, বারবার জিনিস চেক করা।
প্রয়োজন সচেতনতা ও সহমর্মিতা
অনেকেই এসব সমস্যাকে "অলসতা" বা "খামখেয়ালিপনা" বলে ভুল করে। অথচ এই উপসর্গগুলো মানসিক রোগেরই অংশ। যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, মৃদু সমস্যা জটিল রূপ নিতে পারে। তখন শুধু মন নয়, শরীরও প্রতিবাদ করতে শুরু করে।
চিকিৎসা আছে, সমাধান সম্ভব
সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় হলে মানসিক রোগও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া, পরিবর্তনের লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।