শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ১৮ মার্চ, ২০২৩, ০৮:১৪ রাত
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০২৩, ০২:৫১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাড়ে সাত হাজার বছরের পুরনো এক জিগুরাতের গল্প

রাশিদ রিয়াজ: প্রায় ৬০০০ থেকে ৫৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কথা। শিয়াল্ক পাহাড়গুলি দীর্ঘকাল ধরে কৃষিজমির নিচে ঢাকা পড়েছিল। কোনো এক বন্যার পর সাড়ে সাত হাজার বছরের প্রাচীন পাহাড়গুলি জেগে ওঠে। এর আগে অন্য কেউ এসম্পর্কে কিছুই জানতেন না।

প্রাথমিকভাবে স্থানটিকে কেবলই ধ্বংসাবশেষ বলে মনে হয়েছিল। তবে আপনি যদি একেবারে কাছ থেকে দেখেন, মনে হবে প্রাচীন নিদর্শনগুলি আপনার সাথে কথা বলছে। নিচে এই শহর, এর সংস্কৃতি এবং এর মানুষ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।

বর্ণনায় বলা হয়েছে, কাশানের লোকেরা শহরের এই রহস্যময় এলাকাটিকে ‘অভিশপ্ত শহর’ বলে অভিহিত করে। প্রবল এক বন্যার আগে কেউ এই ভয়ঙ্কর স্থানটির কাছে যাওয়ার সাহস করেনি। মূলত ভয়াবহ ওই বন্যার পরই শিয়াল্ক পাহাড়গুলি আবিষ্কার হয়।

সম্ভবত এই কাঠামোটিকে ‘পাহাড়’ হিসেবে উল্লেখ করা সঠিক হবে না। বাস্তবে এটি একটি জিগুরাত। মূলত জিগুরাত হচ্ছে, একটি আয়তক্ষেত্রাকার ধাপযুক্ত টাওয়ার। সাধারণত এই ধাপযুক্ত পাহাড়ের শীর্ষে একটি মন্দির থাকে। প্রাথমিকভাবে এই মন্দির মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়।

বন্যার পানির শ্রোতে জিগুরাতটির আকর্ষণীয় রূপ প্রকাশিত হয়। সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম এবং মৃৎপাত্র আবিষ্কৃত হয়। বিখ্যাত ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং ল্যুভর জাদুঘর থেকে প্রাচীন পারস্যের বিশেষজ্ঞ রোমান ঘিরশম্যান ইরান ভ্রমণ করেন এবং একটি টিম নিয়ে তিনি এই বিশেষ ঐতিহাসিক স্থানটিতে খনন কাজ শুরু করেন। তার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা শিয়াল্ক পাহাড়ের সম্পদের একটি বড় অংশ এখন প্যারিসের মর্যাদাপূর্ণ জাদুঘরে রাখা হয়েছে।

২০০১ সাল পর্যন্ত ড. মালেক শাহমিরজাদি পাঁচ ধাপে নতুন খনন শুরু করেন। তখন কেউই শিয়াল্ক পাহাড়ের দিকে মনোযোগ দেয়নি। যদিও ঘিরশম্যানের আবিষ্কার এবং গবেষণার ফলাফল ফরাসি ভাষায় দুটি বই হিসেবে প্রকাশিত হয়।

ঘিরশম্যান এবং ড. মালেকশাহী দুজনেই তিন মৌসুমে শিয়াল্ক পাহাড়ে খননকাজ পরিচালনা করেন। এই প্রত্নতাত্বিক অভিযানে আশ্চর্যজনক এবং আকর্ষণীয় কিছু ফল পাওয়া যায়।

ঘিরশম্যানের ধারণা, এই সভ্যতাটি ১০ হাজার বছরেরও বেশি পুরানো। উত্তরের পাহাড় এবং দক্ষিণের পাহাড় শিয়াল্ক পাহাড়ের প্রধান দুটি অংশ। প্রতিটির ছয়টি প্রধান স্তর রয়েছে। যুগে যুগে প্রতিটি স্তরের নিজস্ব স্বতন্ত্রতা গড়ে উঠেছে। খনন অভিযান শেষে এসব বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়।

শিয়াল্ক প্রথম

শিয়াল্ক প্রথম হলো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের প্রাচীনতম এবং গভীরতম স্তর। ঘিরশম্যানের গবেষণা মতে, পাহাড়ের তৎকালীন বাসিন্দারা খড়-শাখা কুটিরগুলি কাদা দিয়ে ঢেকে রাখত। অনন্য চুলায় তারা তাদের মৃৎপাত্র তৈরি করত।

শিয়াল্ক দ্বিতীয়

এই যুগে শিয়াল্ক লোকেরা বিভিন্ন ধরনের মৃৎপাত্র তৈরি করত। যেমন গাছপালা এবং প্রাণী আকৃতির মৃৎপাত্র বানানো হত। যার প্রত্যেকটির বিশেষ অর্থ ছিল।

তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিল মেষপালক, শিকারি এবং কৃষক। এমনকি তখনকার মানুষেরা তামা আবিষ্কার করে। এটি তারা ক্ষুদ্র গহনা তৈরি করতে ব্যবহার করে।

এই লোকদের মধ্যে একটি অদ্ভুত প্রথা ছিল। প্রিয়জনের মৃতদেহগুলিকে তারা নিজস্ব বাড়িতে কবর দিত। তাদের রীতিনীতির অনুযায়ী, লাল কাদামাটি দিয়ে তারা মৃতদেহ ঢেকে রাখত এবং মূল্যবান সম্পদসহ কবর দিত।

শিয়াল্ক তৃতীয়

প্রায় ৬ হাজার ১শ বছর আগে শিয়াল্কের লোকেরা উত্তরের পাহাড় থেকে দক্ষিণে চলে যায়। তবে তারা তখনও বাড়ির মেঝেতে লাশ দাফনের প্রথা অব্যাবহত রেখেছিল। কিন্তু এই যুগের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপারটি ঘটে যায়। তারা মৃৎপাত্রের চাকা ব্যবহার করতে শুরু করে।

এই ঐতিহ্যটি ইঙ্গিত দেয়, জনসংখ্যা বাড়বে। তাই তাদের ভোক্তার চাহিদা মেটাতে আরও কার্যকর উপায় ব্যবহার করতে হবে।

সেই সময়, তারা হস্তশিল্প ডিজাইন করতে মানুষের আকার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। এছাড়াও, রুপাকে প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে গয়নাগুলি আধুনিকীকরণ করা হয়।

শিয়াল্ক চতুর্থ

প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায়, স্থানটির এই ৫০০ বছরে উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক উদ্ভাবন ঘটে। তারা কিভাবে লিখতে এবং পড়তে শেখে তা জানা যায়!

এখানে প্রাণী বা অন্যান্য জ্যামিতিক আকার সহ এই স্তরটিতে বেশ কয়েকটি নলাকার সিল পাওয়া গেছে। এতে প্রমাণ হয় যে, সেই সময়ে শিয়াল্কের অর্থনীতি এবং বাণিজ্য ছিল সাধারণ বিষয়। বিশেষ করে দ্রুত ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে এই অর্থনীতির আত্মপ্রকাশ ঘটে।

 শিয়াল্ক পঞ্চম

এই যুগ ৩ হাজার ২শ বছর আগের। নতুন অভিবাসীরা ধূসর মৃৎপাত্র নিয়ে এই পাহাড়ে আসে। তবে এই যুগের অধিবাসীরা মৃতদের বাড়িতে দাফন করত না।

প্রকৃতপক্ষে, তারা মূল্যবান জিনিসপত্র ব্যবহার করে বসতির দক্ষিণ দিকে একটি কবরস্থান তৈরি করে। কারণ তারা পরকালে বিশ্বাস করত।

শিয়াল্ক ষষ্ঠ

এই যুগে নতুন অভিবাসীরা পঞ্চম যুগের অবশিষ্ট সময়ে নতুন ঘর এবং কবরস্থান নির্মাণ করে।

তারা একরকম কবরের ঐতিহ্য এবং কবরের তোরণগুলিকে পাহাড়ের আকৃতির কাঠামোতে পরিবর্তন করে। সামগ্রিকভাবে, এই স্থানে ২শ টিরও বেশি কবর আবিষ্কৃত হয়।

২০১৯ সালে ল্যুভরে ইরান, জার্মানি, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের প্রত্নতাত্ত্বিকদের অংশগ্রহণে শিয়াল্ক পাহাড়ের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।ইভেন্টে স্থানটি প্রথম খননের প্রায় ৮০ বছর পরে জনসাধারণের কাছে গবেষণা এবং প্রকল্পের বৈচিত্র্য, সেইসাথে সাইটটির সংরক্ষণ এবং বর্ধিতকরণের বর্তমান সমস্যাগুলি তুলে ধরা হয়। সূত্র: তেহরান টাইমস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়