মনিরুজ্জামান, বোরহানউদ্দিন (ভোলা): দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিনে তেতুলিয়া নদীর তীর ঘেষা ভেড়ীবাধেঁ ২০১৬ সালে নির্মিত হয়েছিল মনোমুগ্ধকর ও দৃষ্টিনন্দন তেতুলিয়া রিভার ইকো পার্ক। প্রায় ২.৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য দিয়ে সাজানো ছিলো।
প্রবেশদ্বারে দৃষ্টিনন্দন গেইট, দুই পাশে হাজারো গাছ, সারি সারি বসার বেঞ্চ, গাছে গাছে জাতির জনকের ৭ মার্চের ভাষণের ছবি, ক্যান্টিন, নামাজের স্থান, বিশ্রামগার, শৌচাগার, বটমূল, বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, হরিণ,ময়ূরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর ভাস্কর্যসহ শিশুদের বিনোদনের নানান সমগ্রী যা মন কেড়ে নিতো যে কারো। সব কিছুতেই ছিল স্বয়ং সম্পূর্ণ।
এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও গাছে গাছে পাখিদের কলকাকলি দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। শীত মৌসুমে দূর দূরান্ত থেকে পিকনিকের জন্য আসতো অনেকে। বিভিন্ন সময়ে হওয়া প্রাকৃতিক দূর্যোগ, রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে মাত্র ৭ বছরেই সেই প্রাকৃতিক স্বর্গোদ্যান এখন পরিনত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
জানা যায়, বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সিকদারের চর মৌজায় তেতুলিয়া নদীর তটরেখায় পার্কটি অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ২.৫০ বর্গকিলোমিটার। ইতোপূর্বে জায়গাটি পরিত্যক্ত জঙ্গল অবস্থায় ছিল।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কূদদ্দূস এর শ্রম ও তত্বাবধানে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫ ডিসম্বের ২০১৬ তারিখে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল আনুষ্ঠানিকভাবে পার্কের উদ্বোধন করেন। তার চলে যাওয়ায় পরবর্তীতে সংস্কার ও তদারকি না থাকায় ভেঙ্গে পড়ে আছে ইটের তৈরি নানা স্থাপনা ও বন্য প্রাণীদের ভাস্কর্য। পার্কে পরে থাকা এসব মালামাল নিয়ে যাচ্ছে অনেকে। নষ্ট হচ্ছে অনেক টাকার মালামাল। পার্কটি বিলীন হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে স্থানীয় গ্রামবাসী, প্রকৃতি প্রেমিক এবং পর্যটকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিহাব জানান, বোরহানউদ্দিনে ওই সময় তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র ছিল না। ছিল না উদাস হাওয়ায় মন জুড়ানোর প্রাকৃতিক কোন ব্যবস্থা। পার্কটি হওয়ার পর মানুষ শহরের কোলাহল ছেড়ে পরিবার নিয়ে এখানে এসে সময় কাটাতো। বৈশাখে কয়েকদিন ব্যাপি মেলাসহ নানা অনুষ্ঠান হতো। বর্তমানে কোন তত্ত্বাবধায়ন না থাকায় সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এখন আর আগের মতো কেউ আসেনা। পার্কটি আবারো সংস্কার করে পুনরায় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবী করছি। পর্যটন কেন্দ্র হলে আশপাশের গ্রামের অনেকের কর্মসংস্থান হতো।
বোরহানউদ্দিন মহিলা ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক (অর্থনীতি) মনিরুজ্জামান বলেন, শিশু কিশোরসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের বিনোদন ও পর্যটকদের জন্য পার্কটি পূনরায় সংস্কার করার দাবী জানাচ্ছি।
গঙ্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন জানান, পার্কে সড়ক যোগে সরাসরি আসার জন্য যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ছিলো না। নৌকায় করে খেয়া পার হয়ে যেতে হতো। সেখানে এখন ব্রিজের কাজ চলছে। পার্কটি সংস্কার করলে আগের চেয়ে পর্যটক বাড়বে। তাই পার্কটি সকলের বিনোদনের জন্য পুনরায় সংস্কার করা জরুরি।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক বলেন, বোরহানউদ্দিনের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় এবং সুস্থ বিনোদনের জন্য পার্কটির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সম্পাদনা: অনিক কর্মকার
প্রতিনিধি/একে