দীর্ঘ ৩৪ বছরের দাম্পত্যজীবন তাদের। দুজন ভিন্ন ধর্মের মানুষ। নানা ধরনের বাধা এসেছে তাদের প্রেমের পথে। কিন্তু সে সব তোয়াক্কা না করেই চারহাত এক করেছিলেন তারা।
সেই সম্পর্ক আজও অক্ষত। সংসারে নিজেদের ধর্ম নিয়েও সব সময় ভারসাম্য বজায় রেখেছেন তারা। বাড়িতে গণেশপুজো যেমন হয়, তেমনই ইদ পালন করেন সকলে মিলে। তেমনই বড়দিনও পালন করে খান পরিবার।
যদিও ছেলে আরিয়ান খান অবশ্য নিজেকে ‘মুসলিম’ বলে ঘোষণা করেছেন।
এক সময় গৌরীকে পাওয়ার জন্য নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিতেন শাহরুখ। এই পরিচয়ে গৌরীর বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাব জমাতেন তিনি। কিন্তু প্রেমে তিনি ছিলেন আধিপত্যবাদী।
গৌরীকে খোলা চুলে দেখতে পারতেন না। গৌরী চুল খুলে রাখলেই তিনি রেগে যেতেন। সামান্য ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দুইজনের মধ্যে ঝগড়া হতো। গৌরী এক সময় এই সম্পর্ক ভেঙে দিতে চান। দুইজনের দূরত্ব তৈরি হয়।
এরপর শাহরুখ প্রেমের ধরণ পাল্টান। তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, ‘মেয়েরা নম্র, ভদ্র, আর কিছুটা নারীসুলভ আচরণ পছন্দ করে।’ নিজেকে পাল্টে নেন শাহরুখ। গৌরী উপলব্ধি করেন, শাহরুখ তাকে অনেক ভালোবাসেন! কিন্তু শাহরুখের সঙ্গে গৌরীর বিয়ে নিয়ে আপত্তি তোলেন তার পরিবারের সদস্যরা।
তবে দুইজনের প্রেম তখনও চলছিলো। তাদের আলাদা এরপর হিন্দু ধর্মমতে গৌরীর সঙ্গে শাহরুখকে বিয়ে দিতে রাজি হন গৌরীর বাবা-মা। ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর হিন্দু রীতি অনুযায়ী বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গৌরীকে উদ্দেশ্যে শাহরুখ বলে ওঠেন, ‘নামাজের সময় হয়েছে।’ শাহরুখের মুখে এ কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই।
বিয়ের পর থেকে দিল্লির সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে গৌরী শিবার হিন্দু ধর্ম পালন করেন, শাহরুখ পালন করেন মুসলিম ধর্ম। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তাদের ভালোবাসায় ধর্ম বাধা হতে পারেনি। তিন সন্তানের বাবা-মা তারা। সন্তানদের হিন্দু-মুসলিম হওয়ার বিষয়ে কোনো চাপ দেননি, ধর্ম বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিয়েছেন তারা।
শাহরুখ-গৌরীর বড় সন্তান আরিয়ান খানের ধর্ম কী?—এই বিষয়ে সম্প্রতি গৌরী জানিয়েছেন, ‘আরিয়ান খান ঘোষণা করেছে ও মুসলিম।’ বলা যায়, বাবার ধর্মই বেছে নিয়েছেন আরিয়ান খান।