[২] প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ যোগাযোগের সহায়ক হিসেবে নানা মাধ্যম ব্যবহার করে আসছে। আর এই ক্ষেত্রে সহায়ক এবং অর্থবোধক মাধ্যম হলো ভাষা। ভাষা হলো বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনি ও ধ্বনি সমষ্টি, যার মাধ্যমে ব্যক্তি আবেগ, অনুভূতি অর্থাৎ মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে অপরের কাছে প্রকাশ করা যায়।
[৩] ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যম, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাহন। শিল্পকর্ম ও অগ্রগতির ধারক। ভাষার ওপর তাই কোনো আঘাত এলে সমগ্র জাতি সে আঘাত প্রতিহত করতে ব্যাকুল ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালে ভাষা-সংগ্রামের মাধ্যমে, ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৫৬ সালে পূর্ব বাংলার জনগণের মাতৃভাষা বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে।
[৪] ১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসনের অবসান ও স্বাধীনতা লাভে পাকিস্তান নামক একটি স্বাধীন দেশের সৃষ্টির পরও পূর্ব বাংলার মানুষকে নতুন করে সংগ্রাম করতে হয়েছিল মাতৃভাষা বাংলা তথা রাষ্ট্রভাষা বাংলার করার দাবিতে। তারপর এদেশের নির্যাতিত মানুষের মরণজয়ী ভাষা-সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে ও কঠিন আন্দোলনের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে ১৯৭১ সালে।
[৫] বাংলাদেশ হওয়ার পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের অংগ সংগঠন ইউনেস্কো সংগত কারণে যথোপযুক্ত বিবেচনায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
[৬] পৃথিবীতে এমন কোন ভাষা নেই যে ভাষার সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। বাঙালি জাতির রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই মাতৃভাষা বাংলা ভাষা। সারা পৃথিবী আজ বাংলাদেশকে জানে। বাংলা ভাষার গৌরবের কথা জানে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারির কথা জানে। বাঙালির বীরত্বের কথা জানে। এখন বর্তমানে আমরা কেউ কখনো যদি চিন্তা করি যে আমি বড় হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হব।
[৭] তখন প্রশ্ন আসবে মুক্তিযুদ্ধতো শেষ দেশ তো স্বাধীন হয়ে গিয়েছে তহলে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কি করব? সত্যিকার অর্থে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য কোন যুদ্ধের প্রয়োজন হয় না। দেশকে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি থেকে বাঁচানো অথবা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করাই হচ্ছে একজন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার আসল পরিচয়।
[৮] আমরা যে যাই করি না কেন যদি সেটা আমার দেশের মঙ্গলের জন্য হয় দেশকে রক্ষা করার জন্য হয় এবং দেশের উন্নয়নের জন্য হয় সেটাই হচ্ছে একজন বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়। এক হাড়ি ভর্তি খেজুরের রস যদি হাড়ির মধ্যেই থেকে যায় তাহলে সে রস আসলে মূল্যহীন। আর যদি সেই খেজুরের রস দিয়ে যদি খেজুরের গুড় তৈরি করা যায় অথবা সেই খেজুরের রস যদি মানুষের পিপাসা মিটাতে সক্ষম হয় তাহলে সেটাই হচ্ছে সে এক হাড়ি রসের স্বাদ আস্বাদান করার আসল কৃতিত্ব।বাংলা ভাষা আমাদের বাঙালি জাতি নিজস্ব সম্পদ সম্পদ।
[৯] এই ভাষার মানসম্মান রক্ষার জন্য আমাদেরকে সব সময় লড়াই করে যেতে হবে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা ভাষাকে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছেন। আজকের এই মহান ভাষার মাসে আমাদের এই শপথ নিয়ে সামনের ভবিষ্যতের দিকে আগাতে হবে যেন আমরা এই যুগের সালাম, রফিক, বরকত হয়ে ভাষার মর্যাদার জন্য লড়াই করে যেতে পারি।
[১০] বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে আমরা অর্জন করে নিয়েছি। এখন আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা। বাংলা ভাষার গুরুত্ব এবং মর্যাদা বিশ্ববাসীর কাছে আমাদেরকে তুলে ধরতে হবে। হয়তো কোন সময় আমরা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন পারি যেখানে কোন বাংলা ভাষাভাষী লোকজন নেই।
[১১] একমাত্র আমিই সেই পরিবেশে অথবা সমাবেশে উপস্থিত এক বাঙালি। উপস্থিত সেই পরিবেশে বাংলা ভাষার পাশাপাশি তাদের ভাষাও আমার বোধগম্য। এই পরিবেশে যদি আমি তাদেরকে তাদের ভাষায় আমার বাংলা ভাষা গুরুত্ব এবং মর্যাদা বুঝিয়ে তাদের কাছে বাংলা ভাষার এবং জাতির সম্মান তুলে ধরতে পারি। এটা এক বিশাল সাফল্যের পাশাপাশি বিরাট অর্জন হবে। এখন আমরা স্মার্ট পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে আগাচ্ছি।
[১২] তাই আমাদের বাংলা ভাষাকে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব দরবারে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা যেন আমাদের বাংলা ভাষাকে স্মার্টভাবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে পারে।তরুণ ছাত্রসমাজের উচিত বাংলা ভাষার সঠিক ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানা ও পৃথিবীর সর্বত্র বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করা।
[১৩] পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যার জন্য প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল বাঙালি জাতি। জাতির সেসব প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া ভাষার মর্যাদা প্রদান করা এখন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সবাইকে সচেতন হতে হবে এখনি, নয়তো এক সময় এই বিকৃত ভাষার স্রোতে হারিয়ে যাবে অনেক দামে কেনা আমাদের প্রকৃত বাংলা ভাষা।
[১৪] সুন্দর ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের বাংলা ভাষার আরোও চর্চা করতে হবে। বর্তমান বিশ্বায়ন যুগে আমাদেরকে বাংলা ভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষা শিখতে হয়। প্রয়োজনের তাগিদে আমরা অন্য ভাষা শিখলেও সে ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি বাংলা ভাষাকেও সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করবো।
লেখক: মো. জাহিদুল ইসলাম
আইসিটি সেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :