শিরোনাম
◈ আ.লীগ বা সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ হতে পারে: আসিফ নজরুল ◈ ভারত বলছে তিনটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, পাকিস্তানের অস্বীকার ◈ যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নয়, নিষিদ্ধ করতে হবে আ.লীগকে: নাহিদ ইসলাম ◈ সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়িতে পুলিশ (ভিডিও) ◈ লাহোরে পাল্টা আঘাত হেনে পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছে ভারত ◈ পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি হলেন আমেরিকান রবার্ট প্রিভোস্ট ◈ নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ: আসিফ মাহমুদ ◈ আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে: নাহিদ ইসলাম ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে হাসনাতের নেতৃত্বে বিক্ষোভ, সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ◈ ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর নিয়ে যা বলল পাকিস্তান

প্রকাশিত : ৩০ নভেম্বর, ২০২৩, ০৪:০৪ সকাল
আপডেট : ৩০ নভেম্বর, ২০২৩, ০৩:০৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাসে হামলা, আহত ১০ 

মাহমুদুল হাসান নয়ন, কুবি প্রতিনিধি: 'পূর্বের ঘটনার' জের ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের বাসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে হামলাকারীদের মধ্য থেকে একজনকে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাত ৮টার বাস টমছম ব্রিজ এলাকায় আসলে এ ঘটনা ঘটে।

শহর থেকে শিক্ষার্থীদের বাস ক্যাম্পাসে আসা মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা হাত তালি দিয়ে বাসটিকে গোল চত্বরে নিয়ে আসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে বাসের ভিতর থাকা ব্যক্তিকে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়। 

হামলার শিকার হওয়া বাসটি ক্যাম্পাসে আসলে দেখা যায়, বাসের লুকিং গ্লাস ও দরজার সামনের জানালা ভেঙে ফেলেছে হামলাকারীরা।

শিক্ষার্থীরা যে ব্যক্তিকে তুলে এনেছে তার নাম মো. রাকিব। তিনি  বিশ্বরোড ও টমছম ব্রিজ এলাকায় অটো চালায়। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। তার পিতার নাম মো.রুহুল আমিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে পুলিশের উপস্থিতি এসব তথ্য দেন হামলাকারী ব্যক্তি।  

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে  জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসমুখী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বহনকারী নীল বাস ( কুমিল্লা-স ১১০০-৩২) টমছমব্রীজ এলাকায় এলে হঠাৎ একটি বলাকা বাস সামনে চলে আসে। সে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয় বাসকে আটকায় এবং সে বাস থেকে ২০-২৫ জন বিভিন্ন লাঠি-সোঠা নিয়ে নামে। তারা বাস ছেড়ে শিক্ষার্থীদের নেমে যেতে বলেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা না নামলে এক পর্যায়ে গিয়ে তারা বাসে ভাংচুর শুরু করে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বাস থেকে তাদের থামাতে নামলে তারা শিক্ষার্থীদের উপরেও চড়াও হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরাও  নিজেদের বাঁচাতে পাল্টা জবাব দেয় এবং একজনকে বাসে তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে।'

এই হামলার ঘটনায়  আঘাতপ্রাপ্তরা হলেন-  অর্থনীতি বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ মাসুম, লোকপ্রশাসন বিভাগের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের মাহমুদ সাকিব, আবদুল বাসেদ, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আদনান হোসেন সাহেদ, মো: রিফাতুল ইসলাম, আতিক রহমান। এছাড়া বাসের হেলপার  জহিরুল ইসলাম ও বাস ড্রাইভার সুমন দাস হামলাকারীদের দ্বারা আহত হয়েছেন।

এই বিষয় প্রত্যক্ষদর্শী এবং বাসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, 'আমরা নীল বাস দিয়ে টমছম ব্রিজ দিয়ে যাচ্ছিলাম। বাস টমছম ব্রিজের অগ্রণী ব্যাংকের সামনে আসার পর হঠাৎ একটি বলাকা বাস দেখতে পেলাম। বাসটি সম্পূর্ণ খালি ছিল। আমি ভাবছিলাম  হয়তো ব্রেক করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই বাসটি আমাদের বাসকে আটকায়। মুহূর্তের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জন সন্ত্রাসী বাশ, রড, স্টিলের পাইপ, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাস ঘেরাও করে আগ্রাসীভাবে আমাদের বাস থেকে নামার জন্য বলে। যখন দেখলো আমরা নামছিনা তখন তারা বাস ভাঙ্গা শুরু করল। বাঁশ এবং রড নিয়ে জানালা দিয়ে আমাদেরকে আক্রমণ করার সময় তারা বাসের হেলপার এবং ড্রাইভারকে নামতে বলে।'

বাসে থাকা আরেক শিক্ষার্থী লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৩ তম আবর্তনের নাসরিন আক্তার বলেন, 'গতকাল আমাদের বাস ড্রাইভারের সাথে ওখানকার স্থানীয় অটো চালকদের বাকবিতন্ডা হয়েছিল। সেই রেশ ধরে আজকে তারা আমাদের শিক্ষার্থী বাসে হামলা করে। জানালর দিক থেকে বাঁশ সহ বিভিন্ন লাঠি, রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। বাসের সামনের দরজার গ্লাসটিও ভেঙে ফেলে তারা।'

পূর্বের ঘটনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বাসের হেল্পার মো: জহির আহমেদ বলেন, 'গতকাল সন্ধ্যায় শহরের টমছম ব্রীজ থেকে বাস ইউটার্ন নেওয়ার জন্য আমি বাস থেকে নেমে সামনের অটোগুলোকে একটু সরতে বলি। তখন তারা কয়েকজন আমাকে ও ড্রাইভারকে বাজে ভাষায় কথা বলে এবং আমার গায়ে হাত তুলে। তখনই বাসে থাকা কিছু শিক্ষার্থী বাস থেকে নেমে আমাকে উদ্ধার করেন। তখনও তারা আমাদেরকে গালি ও হুমকি দিচ্ছিল।'

আজকের ঘটনার বিষয় তিনি বলেন, 'আজকে সন্ধ্যায় আমাদের বাসটি একই স্থানে গেলে প্রায় অর্ধশতক লোক আমাদের বাসটিকে ঘিরে হামলা চালালে আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের একজনকে বাসে উঠিয়ে নেন। তৎক্ষনাৎ আমরা বাস নিয়ে ক্যাম্পাসমুখী হই।' 

বাসের ড্রাইভার সুমন দাশ বলেন, 'গতকাল আমাদের বাস ইউটার্ন নেওয়ার সময় অটোড্রাইভারের কাছে সাইড চাওয়া হয়। এরপর এ নিয়ে বাসের হেল্পারের সাথে হাতাহাতি হয়। বিষয়টি সেখানে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আজ রাতে বহিরাগতরা লাঠি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে আমার মাথায় ও পায়ে আঘাত করে। তারপর বাসের ভেতর থেকে শিক্ষার্থীরা নেমে আসে।'

শিক্ষার্থী কর্তৃক তুলে আনা হামলাকারী মো. রাকিব বলেন, 'আমি বাসায় ছিলাম। তখন আমাকে তারা ফোন দেয় গেইম খেলার জন্য। আমি আসার সাথে সাথেই তারা বাসে হামলা করে। আমি কিছুই করিনি। 

কয়জন ছিলো জিজ্ঞেস করা হলে রাকিব বলেন, ২৫-৩০ জন ছিলো তারা৷ আমি ছয়জনকে চিনি, ছয় জনের নাম বলছি। 

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মো. রাকিব যাদের নাম বলেছেন তারা হলেন- রুহুল আমিন, সোহান(২৬), সৈকত (২০), শিহাব (২৮), সিয়াম(১৮), আশরাফুল।

এ বিষয়ে কোটবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস এম আরিফুর রহমান বলেন, ' যে সকল শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি এবং  যেই ব্যক্তিকে শিক্ষার্থীরা তুলে নিয়ে এসেছে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি মামলা করে তাহলে আমরা তদন্ত শুরু করবো।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ আহত শিক্ষার্থীদের ও তুলে আনা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সর্বশেষ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে তুলে আনা ব্যক্তিটি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়