পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত দেড়টায় বক্তব্য দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। ক্যাম্পাসে নিজের বাসভবনের ফটকের ভেতর থেকে মাইকে কথা বলেন তিনি। ওই সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান শুনে বাসভবনের ভেতরে ফিরে যান উপাচার্য।
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেন। হল থেকে বেরিয়ে এসে বিপুল সংখ্যক ছাত্রীও বিক্ষোভে অংশ নেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের ফটক ও প্যারিস রোড ছেড়ে যান।
এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, রোববার (আজ) এ নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে।
তবে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাঁরা উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করবেন। পোষ্য কোটার বিলুপ্তি করেই তাঁরা ফিরবেন।
এর পরপরই রাত দেড়টার দিকে বাসভবনের ফটকের কাছে আসেন উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। মাইক হাতে তিনি বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে আশা করছি, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।
উপাচার্যের এমন বক্তব্য শুনে ফটকের বাইরে থাকা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। তখন উপাচার্য বাসভবনের ভেতরে চলে যান।
এ সময় আন্দোলনরত ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান মাইকে বলেন, আজ রাতের মধ্যে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে পোষ্য কোটা চিরতরে বাতিল করতে হবে। নাহলে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
এর আগে শনিবার বেলা তিনটার দিকে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তাঁর গাড়ি আটকে দেন। পরে তিনি হেঁটে তাঁর বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে তিনি জুবেরী ভবনের দিকে যান। তাঁর সঙ্গে প্রক্টর মাহবুবর রহমানও ছিলেন।
বিকেল সাড়ে চারটার দিক থেকে জুবেরী ভবনে সহ-উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
এমন পরিস্থিতিতে রাত পৌনে ১০টার দিকে সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার কর্মবিরতির ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি আবদুল আলিম।সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীও কর্মবিরতিতে থাকবেন বলে উল্লেখ করেন।
রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবন ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডসংলগ্ন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেন। এতে সহ-উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক প্রায় সাত ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান। সূত্র: প্রথম আলো