খাদেমুল বাবুল, জামালপুর: [২] জামালপুরের ধানুয়া-কামালপুর শুল্ক স্টেশনকে স্থল বন্দরে রূপান্তর করা হয় বেশ কয়েক মাস আগে। এবং প্রায় তিন মাস আগে স্থল বন্দর হিসেবে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বন্দরটির কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। এই স্থল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩০টি পণ্য আমদানি কথা থাকলেও শুধু মাত্র পাথর আমদানি হচ্ছিল। ব্যবসায়ী ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে জটিলতার সৃষ্টি হওয়ার কারণে দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পাথর আমদানিও। এতে এই বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
[৩] কর্তৃপক্ষ বলছেন, ব্যবসায়ীদের সাথে জটিলতা নিরসন করে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বন্দরের কার্যক্রম চালু করা হবে।
[৪] গত বছরের ১৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামালপুরের বকশিগঞ্জ ধানুয়া-কামালপুর শুল্ক স্টেশনকে স্থল বন্দর হিসেবে উদ্বোধন করেন।
[৫] জানা যায়, ২০১৮ সালে ১৮ নভেম্বর ধানুয়া কামালপুর শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দরে রুপান্তর করা হয়। ১৬ একর জমির উপর স্থাপিত স্থল বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয় ৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় আমদানি রপ্তানির জন্য নির্মিত স্থাপনাগুলো অলস পড়ে রয়েছে। এই স্থলবন্দর দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ৩০টি পণ্য আমদানি কথা থাকলেও শুধু মাত্র পাথর আমদানি করা হয়। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে পাথর আমদানিও বন্ধ থাকায় অলস সময় পার করছেন বন্দর কর্মচারী-কর্মকর্তারা। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন বন্দরের সাথে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার শ্রমিক।
[৬] বন্দরের পাথর ব্যবসায়ীরা জানান, শুল্ক স্টেশন থেকে স্থল বন্দরে রুপান্তরিত করার পর পাথর এনে ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারছেন না। তাই তারাই আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন।
[৭] কারণ হিসেবে তারা জানান, ভারত থেকে আসা পাথরে সাথে প্রতি ট্রাকে ২ থেকে ৩ মেট্রিক টন মাটি আসে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ওয়েটব্রীজ নির্মাণ করায় সেই মাটির ট্যাক্সও দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে প্রতি ট্রাকে তাদের অতিরিক্ত ২ হাজার ৪০০ টাকা বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রাজস্ব কর্তৃপক্ষের সাথে সুরাহা না হওয়ায় পাথর আমদানি বন্ধ করে দিতে হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে প্রায় ৬ মাস ধরে বন্দর এলাকার পাথর ভাঙ্গা মাঠে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ২ শতাধিক মেশিন। আর বেকার হয়ে পড়েছে মেশিনগুলোতে কাজ করা প্রায় ৮ হাজারেরও অধিক শ্রমিক।
[৮] দ্রুত ব্যবসায়ী ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে চলমান জটিলতা নিরসন করে বন্দর খুলে দিয়ে অন্তত পাথর আমদানির করার দাবি জানান শ্রমিকরা।
[৯] বন্দর শ্রমিক আবু জাফর বলেন, দীর্ঘ ৫ মাস ধরে আমদানি বন্ধ। পোলাপাইন বৌ বেরাদার নিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি। সরকারের নিকট তাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন বন্দরে আমদানি-রপ্তানির শুরু করা হয়।
[১০] সরেজমিনে দেখা গেছে স্থল বন্দরে কোনো কর্মকর্তা নেই। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পরিদর্শক জাবেদী বিল্লাহ জানান, সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে স্থলবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমরা ব্যবসায়ীদের সেবা দিতে প্রস্তুত আছি। একটা স্থলবন্দরে যা যা স্থাপনা এবং অবকাঠামো প্রয়োজন তার সবই রয়েছে এখানে। কোনো পণ্য প্রবেশ না থাকলেও আমরা অফিস করে যাচ্ছি। ৩০টি পণ্য আসার কথা থাকলেও আসে শুধু পাথর। তবুও সেটাও এখন বন্ধ রয়েছে। কি কারণে বন্ধ রয়েছে সেটি আমার জানা নেই।
[১১] জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে ধানুয়া-কামালপুর স্থল বন্দর উদ্বোধন করে থাকলেও এর আগে থেকেই আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম চলমান ছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি স্থানীয় ভাবে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে বন্দরটির কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলছে না।
[১২] তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। তারপরও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে একটি মিটিংও করেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা উদ্যোগ নেব যেন বন্দরের কার্যক্রম সব সময় স্বাভাবিক থাকে।
[১৩] সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ ও ২২-২৩ অর্থ বছরে ধানুয়া-কামালপুর স্থল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ২ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন পাথর আমদানি হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় ১২ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে।
[১৪] এলাকাবাসী জানান, যে ৩০টি পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্থলবন্দরটি স্থাপন করা হয়েছে সেই সব পণ্য আমদানি-রপ্তানি চালু হলে ভারত ও বাংলাদেশের উভয় দেশের ব্যবসায়ী এবং সরকার লাভবান হবে।
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :