শিরোনাম
◈ খালেদা জিয়া যেসব সুবিধা পাবেন ভিভিআইপি হিসেবে ◈ ইরানি মসজিদগুলোতে কেন ফিরোজা - নীল রঙ ব্যবহার করা হয়? ◈ হিথ্রো বিমানবন্দরে তারেক রহমানের ভিডিওটি পুরোনো ◈ প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দে‌বেন ১১ ডিসেম্বর, ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়তে পারে ◈ ম‌্যান‌চেস্টার সি‌টির জা‌র্সিতে ইং‌লিশ লি‌গে হালান্ডের শত গোলের রেকর্ড  ◈ যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো সময় ভেনেজুয়েলায় হামলা চালাবে ◈ হালা‌ন্ডের গো‌লের রেকর্ড, ফুলহ‌্যা‌মের বিরু‌দ্ধে ম্যানচেস্টার সিটির রোমাঞ্চকর জয় ◈ আতলেতিকোকে ৩-১ গো‌লে হারা‌লো বার্সেলোনা  ◈ টাকা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা, সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকে ◈ মারা গে‌ছেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ক্রিকেটার রবিন স্মিথ

প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:২৩ দুপুর
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চারণভূমি সঙ্কটে নোয়াখালীর চরাঞ্চলের প্রাণিসম্পদ খাত ধ্বংসের পথে, দুধ–মাংস উৎপাদনে বড় ধাক্কা

কৃষি ও মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি নোয়াখালীর উপকূলীয় চরাঞ্চলে সম্ভাবনাময়ী আরেকটি বড় খাত প্রাণিসম্পদ। চারণভূমিনির্ভর মহিষ, গরু ও ভেড়ার অন্তত ২০০টি খামার রয়েছে এসব অঞ্চলে, যা থেকে মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, পশম এবং চামড়ার মতো পণ্য উৎপাদিত হয়। পণ্যগুলো একদিকে যেমন মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটায়, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রাণিসম্পদ খাত অনন্য ভূমিকাও পালন করছে। তবে জেগে ওঠা নতুন চর দখল ও নির্বিচারে বন ধ্বংসের কারণে দিন দিন কমে আসছে চারণভূমি। ফলে ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে মহিষ, গরু ও ভেড়ার খামারগুলোয়। যার প্রভাব পড়ছে প্রাণিসম্পদকেন্দ্রিক অর্থনীতির ওপর। সূত্র: বণিক বার্তা 

খাদ্য সংকট ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চরাঞ্চলের এসব খামারে গবাদিপশু মারাও যাচ্ছে। সংকট দেখা দিয়েছে দুধ উৎপাদনে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন খামারিরা। তারা বলছেন, খাস জমি ও বনায়ন রক্ষা করতে না পারলে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে সম্ভাবনাময় প্রাণিসম্পদ খাত। অবশ্য সংকট সমাধানে সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলায় চারণভূমিনির্ভর মহিষ, গরু ও ভেড়ার অন্তত ২০০টি খামার রয়েছে। খামারগুলোয় অন্তত ৬৫ হাজার মহিষ, ৫৬ হাজার দেশীয় গরু এবং ৬৫ হাজারের মতো ভেড়া রয়েছে। এসব খামারের সঙ্গে যুক্ত নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও সদর উপজেলার পাশাপাশি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার খামারিরা। মহিষের দুধ দিয়ে তৈরি হচ্ছে টক দই, গরুর দুধ যাচ্ছে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তাদের কাছে।

টক দইয়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তরুণ উদ্যোক্তা নাইম ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর হাতিয়া উপজেলার স্বর্ণদ্বীপ ও উড়িরচর থেকে মহিষের দুধ এনে টক দই তৈরি করছি। প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত এসব দই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভালো মানের দই তৈরি করা যাচ্ছে না। দক্ষিণাঞ্চলে নীরবে গড়ে ওঠা অর্থনীতির নতুন এ সম্ভাবনা আবার নীরবেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রাণিসম্পদকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক চাকা অনেকটাই ভেঙে পড়ছে।’

খামারিরা বলছেন, দিন দিন চারণভূমি কমে যাচ্ছে। সর্বশেষ চারণভূমির বড় আধার ছিল হাতিয়ার স্বর্ণদ্বীপ। কিন্তু গত কয়েক বছর সেখানকার মাটির কিল্লা ও বনভূমি কেটে হাজার হাজার একর নতুন চর দখল হয়ে গেছে। ফলে খাদ্য সংকটে পড়ছে গবাদিপশু। অনেকে খামার সরিয়ে নিয়েছেন সন্দ্বীপের উড়িরচর, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জে। তবে সেখানেও মিলছে না ঘাস। বনভূমি উজাড় করায় বৃষ্টি ও রোদের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মহিষ-গরু ও ভেড়া। এতে দুধ ও মাংস উৎপাদনও কমছে। আবাদি জমিতে ব্যবহার করা কীটনাশক জীবনহানি ঘটাচ্ছে পশুর।

মিজানুর রহমানের মহিষ ও গরুর বড় খামার রয়েছে। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বছরের অন্তত সাত মাস মহিষ ও গরু নিয়ে বিপদে থাকতে হয়। তবে ১৯৯৮ সাল থেকে হাতিয়ার স্বর্ণদ্বীপ ছিল মহিষ ও গরুর প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। সেখানকার ঘাস ও বনভূমি মহিষ, গরু ও ভেড়া বিচরণের উত্তম স্থান ছিল। রাতের আঁধারে বনভূমি কেটে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। খাস জমিগুলো দখল করে সেখানে চাষাবাদ শুরু করা হচ্ছে। গরু, মহিষ ও ভেড়ার জন্য সেখানে নির্মিত ৮০টি মাটির কিল্লাও সমতলে পরিণত হয়েছে।’

খামারিরা বলছেন, মহিষের বিচরণ চট্টগ্রাম উপকূলে হলেও ফেনী, নোয়াখালী, ভোলাসহ বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকায়ও প্রচুর মহিষ রয়েছে। তবে খাদ্য সংকট প্রকট হওয়ায় মাংস ও দুধ উৎপাদনে বড় প্রভাব পড়ছে। মূলত মহিষ খামারে বেঁধে রেখে লালন-পালন সম্ভব হয় না। তাদের বিচরণের জন্য যে পরিমাণ জায়গা দরকার সেটিরও সংকট বাড়ছে।

নোয়াখালী চরাঞ্চল প্রাণিসম্পদ উৎপাদনমুখী মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. সোহাগ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জেলার অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে এসব খামার। প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়ার কারণে গরু, মহিষ ও ভেড়ার মাংস বেশ সুস্বাদু হয়। এসব খামার থেকে মাংসের জোগান পাওয়া যাচ্ছে। তবে বর্তমানে সে অবস্থা নেই। নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামের অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তি উন্মুক্ত গবাদি পশুর খামারের সঙ্গে যুক্ত। দিন দিন চারণভূমি কমে যাওয়ায় অনেকে খামার গুটিয়ে নিচ্ছেন। ফলে এ অঞ্চলে যে পরিমাণ টক দই উৎপাদন হতো তা এখন আর হচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ কেন্দ্রিক যে অর্থনীতি গড়ে উঠেছে তা প্রায় ধ্বংসের পথে।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মহিষের চারণভূমি হলো উপকূলীয় বা চর এলাকা। কিন্তু সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, বাগান কেটে ফেলা কিংবা খাদ্য সংকটের কারণে মহিষ লালন-পালন সীমিত হয়ে আসছে, যার বড় প্রভাব পড়ছে মাংস বা দুধ উৎপাদনে। মহিষ সাধারণত খোলামেলাভাবে চলতে পছন্দ করে। সমুদ্র-তীরবর্তী পানিতে মহিষের বিচরণ বেশি।

এ বিষয়ে নোয়াখালী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চারণভূমির সংকট রয়েছে। একই সঙ্গে স্বর্ণদ্বীপের সরকারি জমি দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও আমরা অবগত।’ তবে এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা জানা থাকলেও প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।

ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘উন্মুক্ত যতগুলো খামার রয়েছে তা শুধু স্বর্ণদ্বীপে থাকার উপযোগী। স্বর্ণদ্বীপকে মাথায় রেখে ভূমি মন্ত্রণালয়, বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চিঠি চালাচালি চলছে। স্বর্ণদ্বীপের জমি উদ্ধার এবং জেগে ওঠা নতুন চর চারণভূমির জন্য বরাদ্দ দেয়ার বিষয়েও কাজ করছি আমরা।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়