শিরোনাম
◈ মালয়েশিয়ার চাপের মুখে বাংলাদেশে নরম সিদ্ধান্ত, রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ে ছাড় ◈ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগের কর্মসূচি ঠেকাতে বিশেষ বৈঠক, যেসব সিদ্ধান্ত এলো ◈ ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি, দেখে নিন ছুটির তালিকা ◈ আরও ১৪ জেলায় নতুন ডিসি ◈ স্টেডিয়াম দখল নিয়ে বিস্ফোরক আসিফ আকবর: ‘প্রয়োজনে মাঠের অধিকার আদায়ে মারামারিও করব’ ◈ রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় মেট্রোরেল কর্মীদের সব ছুটি বাতিল ◈ ২৭তম সংবিধান সংশোধনী: পাকিস্তানে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি, সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার সীমিত ◈ হার্ট অ্যাটাক হ‌য়ে হাসপাতালে ‌বি‌সি‌বির সা‌বেক সভাপ‌তি  ◈ বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের অনুরোধে ১৩৪ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন আমজনতার দলের তারেক রহমান ◈ প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত

প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:০৭ রাত
আপডেট : ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:৩৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত হয়ে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’, প্রাথমিক অনুমোদন দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

অকার্যকর ঘোষণা করা পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে হচ্ছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’। নতুন এ ব্যাংকের প্রাথমিক সম্মতিপত্র (এলওআই) দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রোববার (৯ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে অনুমোদন দেয়। পাঁচ ব্যাংক হলো– ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু শর্তসাপেক্ষে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’র নামে এলওআই ইস্যু করেছে।

এদিকে, প্রস্তাবিত ব্যাংকের সাত সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। অন্য বোর্ড সদস্যদের মধ্যে রাখা হয়েছে অর্থ বিভাগের সচিব মো. খাইরুজ্জামান মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব এম সাইফুল্লাহ পন্না, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামাল উদ্দিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রাশেদুল আমিন ও যুগ্ম সচিব শেখ ফরিদকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গত বুধবার সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য এলওআই চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করে সরকার। আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রাথমিক সম্মতিপত্র দিয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে ব্যাংকের নামে কোম্পানির লাইসেন্স নিতে হবে। এরপর নতুন ব্যাংকের জন্য চূড়ান্ত লাইসেন্স দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে সরকারি মালিকানায় ব্যাংকটি পরিচালিত হবে।

অন্যদিকে, নতুন ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা, অর্থছাড়সহ বিভিন্ন বিষয়ে রোববার বিকেলে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব উপস্থিত ছিলেন।

নতুন গঠিত ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ হতে পারে ছয় মাস থেকে এক বছর। এ সময়ে বর্তমান পাঁচটি ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসকরা সম্পদ ও দায় যাচাই-বাছাই করবেন। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারের অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের দিয়ে নতুন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দেবে এবং ব্যাংকটি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে।

তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ব্যাংকগুলো। গেল ৫ নভেম্বর আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) পদত্যাগ করতে বলে। একইসঙ্গে এসব ব্যাংককে পরিচালনার জন্য প্রতিটিতে একজন প্রশাসক ও তার সহযোগী হিসেবে চারজন– সবমিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাঁচজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।

ওইদিন সংবাদ সম্মেলন করে গভর্নর বলেন, ব্যাংক পাঁচটি পরিচালনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রশাসক দল। তারাই ব্যাংকগুলো একীভূত করে নতুন একটি ব্যাংকে রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।

গভর্নর বলেন, একীভূত ব্যাংকটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক। এই ব্যাংকের আমানতকারীদের জমা রাখা অর্থ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ব্যাংকটি হবে সরকারি মালিকানাধীন, তবে পরিচালিত হবে বেসরকারিভাবে। ফলে কর্মীদের বেতন হবে বাজারভিত্তিক, আমানতকারীরাও মুনাফা পাবেন বাজারের হারে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দুই বছরের বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে গঠন করা হবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক। সেটির মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে।

আলোচ্য পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছিল ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নিয়ন্ত্রণের তৎকালীন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের এবং বাকি চারটি ছিল চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ও বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে। তারা তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত ছিলেন।

কে কোন ব্যাংকে প্রশাসক

এক্সিম ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান। ইউনিয়ন ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম। তারা সবাই ব্যাংকগুলোতে গিয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন।

একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে বর্তমান ৭৫ লাখ আমানতকারীর জমা আছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকার। এই ঋণের মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশই এখন খেলাপি।

সারা দেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে পড়েছে ইউনিয়ন ব্যাংকের। এ ছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামীর ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামীর ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপি। ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ১৫ হাজার জনবল।

সংবাদ সম্মেলনে আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাঁচ ব্যাংকে জনবল যা আছে, তারা সবাই থাকবে। এসব ব্যাংকের শাখা কোথায় স্থানান্তর করা যায় তা যাচাই করে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারো চাকরি যাবে না। ভবিষ্যতে একীভূত ব্যাংকের যাত্রা শুরু হলে তখন চাহিদা অনুযায়ী জনবল থাকবে।

গভর্নর বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে সরকারি ব্যাংক হলেও এটি বেসরকারি ব্যাংকের মতোই পরিচালিত হবে। ব্যাংকগুলোতে স্বাভাবিক সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে, গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। আগের নামেই ব্যাংকগুলোতে পেমেন্ট, আমদানি রপ্তানির এলসি খোলা যাবে, আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে এবং রেমিট্যান্স কার্যক্রম আগের মতোই সচল থাকবে। এ ছাড়া চলতি নভেম্বর মাসের শেষের দিকে আমানতের অর্থ তুলতে পারবে। তবে যেসব আমানতকারীর আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার নিচে তারাই প্রথমে আমানত তুলতে পারবেন। আর যাদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার উপরে তাদের অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে শিগগিরই একটি নির্দেশনা জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। উৎস: ঢাকা পোষ্ট।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়