শিরোনাম
◈ বাংলাদেশে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচন চায় ভারত, প্রধান উপদেষ্টার অভিযোগ 'দায় এড়ানোর কৌশল' বলছে দিল্লি ◈ দয়া করে থামুন, আপনি দেশের ক্ষতি করছেন, নিজের দলের ক্ষতি করছেন : তাসনিম জারা ◈ গণমাধ্যম নয়, রায়ের কপি দেখে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি: সিইসি নাসির উদ্দিন ◈ আমার পাওয়ার দরকার নাই পাওয়ার আমার পিছে ঘোরে: শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ◈ গণতন্ত্রের নিরাপদ যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, খুব শিগগিরই বাংলাদেশে গণতন্ত্র দেখতে পাবো : খালেদা জিয়া (ভিডিও) ◈ কা‌রো কথায় পদত্যাগ করার প্রশ্নই ও‌ঠে না : বি‌সি‌বি সভাপ‌তি ◈ ক্রিকেটার হাসান আলীর মা ছিনতাইকারীর কবলে, কেড়ে নিলো ২ লাখ ৩০ হাজার রুপি ◈ ঋণনির্ভর বাজেটে ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের ◈ আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে পুলিশের ১৯ পরামর্শ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বাংলাদেশি অ্যাসাইলাম প্রত্যাশীদের জন্য দুসংবাদ

প্রকাশিত : ২৮ মে, ২০২৫, ০৩:১৮ দুপুর
আপডেট : ২৯ মে, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগপতন, চাপে ব্যাংকখাত ও কর্মসংস্থান

বিনিয়োগ স্থবির, বেকারত্ব বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি হ্রাস, বৈদেশিক বাণিজ্যে টানাপোড়েন, খেলাপি ঋণে ঊর্ধ্বগতিসহ নানামুখী চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অর্থনীতিকে এই অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এটা মোকাবিলায় সমন্বিত নীতি গ্রহণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক দিক থেকে নানামুখী চাপের মধ্য দিয়ে গেলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সুশাসন, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ও সামাজিক নিরাপত্তা জাল সম্প্রসারণ করতে হবে।

এই সরকারের এটা প্রথম বাজেট এবং হয়তো শেষ বাজেটও। আর তো তাদের থাকার কথা নয়। সুতরাং, এই বাজেটে কিছু অভিনব প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন যদি তারা করে যেতে পারেন, তাহলে সেটা ভালো হয়।- অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ

তারা আরও বলছেন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ব্যাংকখাত ঠিক করতে হবে, বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে, বন্দর আধুনিকায়ন করতে হবে। শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে, প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ করতে হবে। কিন্তু এগুলো ঘটবে কি না, সেটা বলা এখন মুশকিল। এসব কিছুর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিনিয়োগ যে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তা বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ দেখলেই অনুমান করা যায়। গত ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় মাত্র ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিনিয়োগে মন্দা থাকায় বাড়ছে বেকারত্ব।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। একবছর আগে অর্থাৎ, ২০২৩ সালে ছিল সাড়ে ২৫ লাখ। এ হিসাবে এক বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে দেড় লাখ।

বিনিয়োগ খরার মধ্যে বিভিন্ন দাতা সংস্থা চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের ঘরে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে- প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ হতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে- প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ হতে পারে। দাতা সংস্থাগুলো প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়েছে বাস্তবে তাই হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীবিদরাও।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেটার তো কোনো আশা-ভরসার জায়গা এখন দেখা যাচ্ছে না। এ ধরনের অবস্থা থেকে এগুলো মোকাবিলা করা খুব কঠিন। অর্থনৈতিক অবস্থা যাতে আরও খারাপ না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।-অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন

অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘অর্থনীতির সমগ্র মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে স্থিতিশীলতা অর্জনের ওপরে। এটা কিন্তু একপেশে হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, দারিদ্র্য হ্রাস, বেকারত্ব হ্রাস এগুলো যথাযথ মাত্রায় মনোযোগ পাচ্ছে না। এটার জন্য যেটা হবে অনিবার্যভাবে দারিদ্র্য বাড়বে, বেকারত্ব বাড়বে, প্রবৃদ্ধি কমবে। সুতরাং, দাতা সংস্থাগুলো প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে পূর্বাভাস দিচ্ছে তা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।’

বেকারত্ব বাড়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে অর্থনীতি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে, তারপরও এখনো ৯ শতাংশের ওপরে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নিম্ন আয়ের মানুষ বেশ চাপে রয়েছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এক মাস আগে অর্থাৎ, মার্চে ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের নভেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও কমে হয় ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।

অর্থনীতির নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের বিধিনিষেধ। ভারত বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তার ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে প্রভাব পড়ছে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের চাপ।

ধরুন আপনার কাছে ১০ কোটি টাকা আছে, আপনি কি বিনিয়োগ করবেন? করবেন না, আপনি মনে করবেন—দেশের অবস্থা আরও একটু স্থিতিশীল হোক, তারপর করবো। সুতরাং দেশের ব্যবসায়ীরা একটু ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতিতে আছেন, বিদেশিরাও সেই একই কাজ করবে। সুতরাং, সবাই একটু ধীরে ধীরে এগোবে।- অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত

এদিকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। তিন মাস আগে অর্থাৎ, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ব্যাংকখাত ঠিক করতে হবে। গ্যাসের সমস্যার সমাধান করতে হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে। বন্দর আধুনিকায়ন করতে হবে। শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। রপ্তানি বৈচিত্র্য আনতে হবে। কিন্তু এগুলো ঘটবে কি না বা কীভাবে ঘটবে সেটা বলা এখন মুশকিল হয়ে গেছে।’

এতকিছুর মধ্যে দুটি সূচক রয়েছে ইতিবাচক। রেমিট্যান্সপ্রবাহ অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো। রেকর্ডও গড়েছে কয়েক মাস আগে। রিজার্ভও আগের চেয়ে ভালো। রপ্তানিও রয়েছে ইতিবাচক ধারায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এরপর আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার এবং সবশেষ এপ্রিলে রেমিট্যান্স আসে ২৭৫ কোটি ডলারের।

আর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় এক শতাংশেরও কম হারে বেড়ে ৩ দশমিক ০১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আগের বছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ২.৯৯ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে রপ্তানি আয় ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়ে ৪০ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমন তো না যে আমাদের শিল্প-কারখানা নষ্ট হয়ে গেছে বা বন্যায় আমাদের তীব্র ক্ষতি হয়েছে। এমন কিছু তো নয়। এটা জাস্ট সাময়িক কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। রেমিট্যান্স আসছে, রপ্তানির প্রবৃদ্ধিও একেবারে খারাপ নয়। সে জন্য আশা করা যায়, আগামীতে এগুলো ঠিক হয়ে যাবে।’

বিনিয়োগে স্থবিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের অর্থনীতি কোন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন? এমন প্রশ্নে অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ জাগো নিউজকে বলেন, শোনা যাচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে, আমি জানি না সত্যিই মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে কি না। সরকার যদি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেয়, তাহলে একাংশকে সরকার মুদ্রাস্ফীতি থেকে প্রোটেকশন দিলো, অন্য অংশকে কিন্তু দিলো না। এখন মুদ্রাস্ফীতি যদি কমে যায়, তাহলে এই মহার্ঘ ভাতা একদিকে ওদের আয় বাড়াবে, কিন্তু নন-ফর্মাল সেক্টরে যারা আছেন তাদের আয় বাড়াবে না। ৮৯ শতাংশ শ্রমিক তো নন-ফর্মাল সেক্টরে আছেন। সুতরাং, এটা বৈষম্য বাড়াবে। তাহলে তো সরকারের বৈষম্যবিরোধী নীতির সঙ্গে মিলছে না।’

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায়—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের এটা প্রথম বাজেট এবং হয়তো শেষ বাজেটও। আর তো তাদের থাকার কথা নয়। সুতরাং, এই বাজেটে কিছু অভিনব প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন যদি তারা করে যেতে পারেন, তাহলে সেটা ভালো হয়। যেটাকে সালেহউদ্দিন সাহেব বলেছিলেন ‘ফুটপ্রিন্ট’। ফুটপ্রিন্ট রাখার জন্য কয়েকটা প্রস্তাব আমরা দিয়েছিলাম। যেমন—সম্পদ কর। যেসব লোকের দুটি বা চারটি গাড়ি আছে, দুটি বা চারটি বাড়ি আছে, এক কোটি টাকা নগদ ব্যাংক ব্যালেন্স আছে, তাদের কাছ থেকে সম্পদকর হিসেবে বাড়তি একটা কর আদায় করা যায়।’

‘আরও বলেছিলাম, এই যে লুটপাটকারীদের যেসব টাকা উদ্ধার হলো, সেই টাকা দিয়ে অতিদরিদ্র লোকদের সামাজিক সুরক্ষা, খেটে খাওয়া শ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করা যায়, বা হালকা মৌসুমে ১০০ দিনের কর্মসংস্থানের গ্যারান্টি। এরকম অভিনব কিছু পদক্ষেপ নিলে সালেহউদ্দিন সাহেব চলে গেলেও বলতে পারতেন, আমি যতদিন ছিলাম, আমরা সাধারণ মানুষের পক্ষে একটু অভিনব কিছু করার চেষ্টা করেছি’—বলেন এম এম আকাশ।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু এগুলো না করে সরকার রাখাইন করিডোর, তারপর ডবলমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দিয়ে দেওয়া, তারপর বিদেশি বিনিয়োগের নামে কাতার থেকে না কোথা থেকে সামরিক অস্ত্রের কারখানায় বিনিয়োগ—এসব দিকে মনোযোগ দিয়ে আমাদের হতাশ করেছে।’

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য অপচয় কমিয়ে, কর সংগ্রহ করে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন যেহেতু স্বাভাবিক নয়, সুতরাং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো কঠিন হবে। তাই সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেটার তো কোনো আশা-ভরসার জায়গা এখন দেখা যাচ্ছে না। এ ধরনের অবস্থা থেকে এগুলো মোকাবিলা করা খুব কঠিন। অর্থনৈতিক অবস্থা যাতে আরও খারাপ না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একসময় ফিরে আসবে—এই আশা করা যায়। অনিশ্চয়তা সব দেশেই থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে তো রাজপথই অস্থিতিশীল। স্বাভাবিক চলাফেরা বা ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাবে কি না, সেটা তো বলা কঠিন—আজ যা আছে কাল থাকবে কি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের অবস্থায় অর্থনীতির তো হাঁটুভাঙা অবস্থা আরকি। আপনি যে একটু দাঁড়াবেন, ওই দাঁড়াবার আগেই আরেকটা বাড়ি খাচ্ছে। ভাঙা হাঁটু নিয়ে কতদূর যাবেন বা কত দ্রুত যাবেন, সেটা তো সম্ভব নয়। বিনিয়োগের যে স্থবিরতা—এটা তো কাটবে না, যদি আপনার পূর্বশর্ত পূরণ না হয়। আর তার পরে যে বিনিয়োগ শুরু হবে, সেটাও তো বলা যায় না। কারণ আপনার তো সংস্কারও লাগবে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কার তো এগোতে পারছে না।’

সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে জায়েদ বখত বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিগুলো ঠিক আছে। এগুলো (বিনিয়োগ মন্দা, বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া, কর্মসংস্থান না হওয়া, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া) সাময়িক, রাজনৈতিক ও অন্য পরিস্থিতির কারণে হচ্ছে। একটা স্থিতিশীলতা এসে গেলে ঠিক হয়ে যাবে।’

বিনিয়োগ না হওয়ার কারণ হিসেবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ধরুন আপনার কাছে ১০ কোটি টাকা আছে, আপনি কি বিনিয়োগ করবেন? করবেন না, আপনি মনে করবেন—দেশের অবস্থা আরও একটু স্থিতিশীল হোক, তারপর করবো। সুতরাং দেশের ব্যবসায়ীরা একটু ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতিতে আছেন, বিদেশিরাও সেই একই কাজ করবে। সুতরাং, সবাই একটু ধীরে ধীরে এগোবে।’

আগামী বাজেটের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের চেষ্টা থাকবে যতটা সম্ভব অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কম রাখা এবং যেসব প্রকল্প শেষের দিকে, সেগুলো যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যায়। একই সঙ্গে সরকারের চেষ্টা থাকতে হবে যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং সরকারি খরচের কারণে মূল্যস্ফীতি যাতে উসকানো না হয়। এটা যেহেতু রাজনৈতিক সরকার নয়, সুতরাং তারা ওই ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে উৎপাদন সক্ষমতা আছে, সেটা যখন কাজে লাগাতে পারবো, তখন নতুন বিনিয়োগ আসবে এবং প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চললে বেকারত্বও কমে আসবে।’ উৎস: জাগোনিউজ২৪

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়