শিরোনাম
◈ দেশকে পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা : প্রধানমন্ত্রী ◈ খান ইউনুসে চলছে প্রচণ্ড লড়াই : আটকা পড়েছে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনি ◈ দেশের ৮ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা ◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১০:৫৩ রাত
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০২:২৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পাসপোর্ট জালিয়াতি করে কুলি থেকে কোটিপতি রাজু

সুজন কৈরী: [২] রাজু শেখ। তার বাবা শাহজাহান ছিলেন কারওয়ান বাজারের কুলি। তরকারির বস্তা টানতেন। অভাবের সংসারে পড়ালেখার ফাঁকে বাবার সঙ্গে করতেন কুলির কাজ। তবে হঠাৎ করেই বদলে যায় তার জীবন। কয়েক বছরের ব্যবধানে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার বাড়ি। পাশিপাশি রাজধানীর উত্তরায় কিনেছেন ১৬০০ স্কয়ার ফিটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং রাজউকে নিয়েছেন ৬ কাঠার প্লটও।

[৩] দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ দাগী অপরাধী, আসামি, অবাঙালি এবং রোহিঙ্গাদের জাল জন্ম নিবন্ধন, জাল জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট তৈরি চক্রের ২৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষও। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দেশি দালালদের অন্যতম রাজু শেখ। 

[৪] বিশাল একটি চক্রের সঙ্গে যোগ দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন রাজু। আর এভাবেই ধীরে ধীরে মালিক হয়েছে কোটি টাকার।  

[৫] গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান বলেন, গোপালগঞ্জে কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করেছেন রাজু শেখ, উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে কিনেছেন ১৬০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট। কিনেছেন পূর্বাচলের ৬ কাঠার একটি প্লটও।

[৬] গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে রাজু বলেন, পাসপোর্ট অফিসের সামনেই আমাদের দোকান। সেখানে প্রতিদিন ১০-১৫ জন বাঙালি ফরম পূরণের জন্য আসেন। তখন কৌশলে দীর্ঘ সময় তাদেরকে বসিয়ে রাখা হয়। এভাবে যখন ৯-১০ টি ফাইল জমা হয় তখন তাদের সঙ্গে ৩ জন রোহিঙ্গার ফাইল মিলিয়ে পাসপোর্টের জন্য জমা দেওয়া হয়। কোনোভাবেই যেন ভেতরে কেউ বুঝতে না পারেন সেজন্য বারবার এসব রোহিঙ্গাদের নাম-পরিচয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয় যেন সবাই একসঙ্গে থাকেন। মানসিকভাবে শক্ত থাকা এবং কোনোভাবেই যেন এই সার্কেল থেকে বাইরে বেরিয়ে না আসেন সেজন্য রোহিঙ্গাদের বারবার সতর্ক করে দেওয়া হয়।

[৭] রাজু জানান, জাল নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্যও আগে-ভাগেই দেওয়া হয় ট্রেনিং। একইসঙ্গে ওই রোহিঙ্গার কথায় যেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিকতার কোনো টান বা উপস্থিতি না আসে সেটিও নিশ্চিত করা হয়। প্রায় তিন বছর ধরে এভাবেই অসংখ্য রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তুলে দিয়েছে রাজু শেখ।

[৮] গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন এবং পাসপোর্ট জালিয়াতির কাজে জড়ান রাজু শেখ। এর মধ্যে গত ৩ বছর ধরে এসব বিষয়ে অবৈধ কার্যক্রমগুলোও করছিলেন। অবৈধ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে, দাগি আসামি কিংবা যারা বড় অপরাধ করেছেন তাদের নাম পরিবর্তন করে পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়া। আবার বাংলাদেশের নাগরিক নয় এমন কেউ কিংবা কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদেরও নাম পরিবর্তন করে জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয় পত্র এবং পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়া। আর এসবক্ষেত্রে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা জোগাড় করে দেয় চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির এজেন্টরা। তাদের নিয়ে আসা হয় রাজু শেখের কাছে। এরপর দোকান থেকে ফরম পূরণ করে পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিক করার জন্য আনসার সদস্যের কাছে পাঠিয়ে দেয় রাজু শেখ। সেখানকার আনসার সদস্য বাকি অফিসিয়াল কাজগুলো করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেন

[৯] ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এমন আরেকজন জানান, জন্ম নিবন্ধনগুলো সবসময় আশরাফ নামে এক ব্যক্তি সরবরাহ করতেন। এক্ষেত্রে দুদিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন নিতে চাইলে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আর যদি ২ ঘণ্টার মধ্যে আর্জেন্ট নিতে চান পাঁচ হাজার টাকা দিতে হতো। বেশিরভাগ সময়ই রংপুর, শরীয়তপুরের, মাদারীপুর এবং রাজশাহীর বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধন করে দেওয়া হতো। আর জাতীয় পরিচয়পত্র করার ক্ষেত্রে সব ফরম পূরণ করে নাম পরিচয় মুখস্থ করিয়ে তারপর রোহিঙ্গাদের কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হতো।  

[১০] ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ বলেন, পাসপোর্ট জালিয়াতি কিংবা অবৈধভাবে পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কেউ জড়িত আছেন কি না বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আমার মনে হয় এভাবে হাজার হাজার পাসপোর্ট রোহিঙ্গারা নিয়ে যাচ্ছে, দাগি আসামিরা নিচ্ছে। অথচ কোনো কোনো ভেরিফিকেশন করা হয় না, তাদের ডাটাবেইজে তো দেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের সবার বিস্তারিত ডাটা রয়েছে।

[১১] তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের আদালতে সোপর্দ করে আবেদন করা হলে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও যারা যারা জড়িত তাদের নাম পরিচয়ও বেড়িয়ে আসবে বলে আশা করছি। সম্পাদনা: কামরুজ্জামান

এসকে/কে/এসবি২

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়