শিরোনাম
◈ মহানবী (সা.) হালাল প্রাণীর যেসব অঙ্গ খাওয়া অপছন্দ করতেন ◈ সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কী আছে ◈ বাজেট: মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগে চ্যালেঞ্জ ◈ প্যারোলে মুক্তি মেলেনি, জেলগেটেই মায়ের মরদেহ দেখলেন সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান ◈ বেনাপোল সীমান্তে নাসিরের  উটের দাম হাকা হচ্ছে ৩৫ লাখ, ক্রেতা নেই! ◈ বছরে একবারের বেশি স্বর্ণ আনলে মিলবে না ব্যাগেজ রুলসের ছাড় ◈ মঙ্গলবার শাহজালালের সার্ভার বন্ধ ৩ ঘণ্টা, চেক-ইন হবে ম্যানুয়ালি ◈ বাজেট প্রতিক্রিয়ায় যা বলছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও জাহিদ হোসেন ◈ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই সনদ ঘোষণার অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার ◈ ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আমরা ৩টি বিষয়ে আলোচনা করেছি : নাহিদ

প্রকাশিত : ০১ জুন, ২০২৫, ০৬:০২ বিকাল
আপডেট : ০২ জুন, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নারীরা যে চার ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে পুরুষদের চেয়ে শক্তিশালী

নারীর শারীরিক শক্তি নিয়ে প্রচলিত ধারণা বদলে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা পুরুষদের ছাপিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি একাধিক নারী ক্রীড়াবিদ এমন নজির স্থাপন করেছেন, যা কেবল ক্রীড়াঙ্গনের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এসব সাফল্য আমাদের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে বহু পুরোনো ধ্যানধারণার ভিতে নাড়া দিচ্ছে। এটি একধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, যা নতুনভাবে চিনিয়ে দিচ্ছে নারীর শরীর ও শক্তির প্রকৃত সক্ষমতাকে। খবর: ওয়াশিংটন পোস্ট

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের টারা ডোয়ার অ্যাপালাচিয়ান ট্রেইল শেষ করেছেন মাত্র ৪০ দিন ১৮ ঘণ্টা ৬ মিনিটে, যা আগের রেকর্ডধারী পুরুষের চেয়ে ১৩ ঘণ্টা কম। একই বছর, অ্যারিজোনার অড্রে জিমেনেজ ইতিহাস গড়েছেন—ছেলেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই ডিভিশন-১ হাইস্কুল কুস্তি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ম্যারাথন, পাহাড়ে দৌড়, সাঁতার ও রক ক্লাইম্বিং—এসব খেলায় নারীরা নিয়মিতভাবে পুরুষদের চেয়ে ভালো করছেন।

গত বছর জাসমিন প্যারিস বিশ্বের অন্যতম কঠিন ১০০ মাইলের বার্কলে ম্যারাথন শেষ করেছেন ৬০ ঘণ্টারও কম সময়েই। একই সময়ে তিনি একজন স্তন্যদায়ী মায়ের ভূমিকাও পালন করেছেন।

এদিকে নদীপথে দীর্ঘ দূরত্ব সাঁতারে এখন নারীরা এতটাই এগিয়ে যে, তাদের কীর্তি অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে বার্বারা ‘বাবসি’ জ্যাঙ্গার্ল ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের এল ক্যাপিটান পর্বত অপ্রস্তুত অবস্থায় জয় করেছেন—এটাই প্রথমবার কেউ এমনটি করতে পেরেছেন। এই অর্জনগুলো শুধু শারীরিক নয়, সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেরও প্রতীক।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অনুশীলন বিজ্ঞানী স্ট্যাসি সিমস বলছেন, ‘৭০ বছর ঊর্ধ্ব নারীরাও এখন ডেডলিফট (ভারউত্তোলন) রেকর্ড গড়ছেন।’

সহনশীলতায় নারীর জয়: যখন ‘শক্তি’র কথা বলা হয়, তখন সাধারণত তা বোঝায় স্বল্প সময়ে সর্বোচ্চ গতি, যেখানে পুরুষদের দেহ কিছুটা এগিয়ে থাকে। তবে সহনশীলতা, দ্রুত পুনরুদ্ধার, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা—এসব ক্ষেত্রেও নারীরা শারীরিকভাবে এগিয়ে।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, প্রাচীন মানবসমাজে নারীরা শুধু গৃহস্থালি নয়, জীবনসংগ্রামের ময়দানেও ছিলেন সক্রিয়। তাঁরা নিয়মিতভাবে ভারী সামগ্রী বহন করতেন, শিকারের পেছনে হাঁটতেন এবং দৈনিক ৮ থেকে ১০ মাইল পথ অতিক্রম করতেন—অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়, পিরিয়ডের সময় বা শিশুকে কোলে নিয়েও।

অস্ট্রেলিয়ার পার্থের ইডিথ কোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস বিজ্ঞান উপ-উপাচার্য সোফিয়া নিমফিয়াস বলেন, ‘নারীদের দেহ অধিক ক্লান্তি প্রতিরোধী।’

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়াম বিশেষজ্ঞ সান্দ্রা হান্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের পেশি দীর্ঘ সময় ধরে হালকা ভারে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে—যেখানে পুরুষেরা শুরুতেই শারীরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও, দীর্ঘ মেয়াদে নারীরাই এগিয়ে থাকেন। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, নারীরা শক্তির জন্য অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে চর্বি পোড়াতে পারদর্শী, যা দীর্ঘ সময় ধরে দেহকে শক্তি দেয়।

নারীদের শরীরে সাধারণত ‘স্লো-টুইচ’ মাংসপেশির পরিমাণ বেশি থাকে, যা ধীরগতির হলেও অধিক দক্ষ ও ক্লান্তিহীন। অন্যদিকে পুরুষদের দেহে ‘ফাস্ট-টুইচ’ মাংসপেশি বেশি, যা শক্তিশালী হলেও দ্রুত ক্লান্ত হয়।

দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং লড়াকু মনোভাব: নারীদের এই ধীরগতির পেশি শুধু সহনশীলতাই নয়, দ্রুত পুনরুদ্ধারের ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। ছোট আকারের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দ্রুতগতির দৌড় বা ভার উত্তোলনের পর নারীদের শরীর পুরুষদের তুলনায় দ্রুত সেরে ওঠে। ইস্ট্রোজেন হরমোন শরীরের প্রদাহ কমায় ও মাংসপেশি সারাতে সাহায্য করে—এটাই এই পার্থক্যের অন্যতম ব্যাখ্যা।

তবে, নারীরা নির্দিষ্ট কিছু ইনজুরির ঝুঁকিতে বেশি থাকেন—বিশেষ করে হাঁটু ও এসিএল ইনজুরিতে। এর পেছনে জৈবিক, হরমোনজনিত বা পুরুষদের উপযোগী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি দায়ী হতে পারে।

শারীরিক শক্তির পাশাপাশি মানসিক দৃঢ়তাও নারীর সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। স্ট্যানফোর্ডের ‘ফাস্টার’ প্রোগ্রামের পরিচালক এমিলি ক্রাউস বলেন, ‘নারীরা এমন এক মানসিক অবস্থায় যেতে পারেন, যা তাঁদের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার শক্তি দেয়।’

নারীর শরীরের চারটি অসাধারণ ক্ষমতা

১. ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা: নারীর দেহ নানা ধরনের ব্যথা সহ্য করে—পিরিয়ডের ব্যথা, সন্তান জন্মদানের যন্ত্রণা, পিঠে আঘাত বা হাড়ভাঙা যন্ত্রণা। এসব ব্যথা পরিমাপ করা কঠিন হলেও, অধিকাংশ গবেষণা একমত যে নারীরা ব্যথা পুরুষদের চেয়েও ভালোভাবে সহ্য করতে পারেন।

ক্রীড়াবিদেরা ব্যথা সহ্য করার সত্যিকারের পরিক্ষার্থী। বহু গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের তুলনায় ক্রীড়াবিদেরা ব্যথা বেশি সহ্য করতে পারেন, আর সেখানে নারী-পুরুষের তুলনায় নারী ক্রীড়াবিদদের সহ্যক্ষমতা কম নয় বরং অনেক সময় বেশি। যদিও নারীরা ব্যথা বেশি অনুভব করেন, তবু তারা তুলনামূলক ইনজুরি নিয়েও বেশি সময় ধরে খেলতে পারেন।

অস্ট্রেলিয়ার পার্থের ইডিথ কোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস বিভাগের উপ-উপাচার্য সোফিয়া নিমফিয়াস বলেন, এটি আসলে জীববিজ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার মিশ্রণ। ১৯৮১ সালের একটি গবেষণায় স্পষ্ট বলা হয়, ‘নারী ক্রীড়াবিদদের ব্যথা সহ্যক্ষমতা এবং সহ্যসীমা সর্বোচ্চ।’

২. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা: মানুষসহ অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে নারীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা পুরুষের তুলনায় শক্তিশালী। এর পেছনে রয়েছে ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং নারীদের দুটি ‘এক্স’ ক্রোমোজোম, যা রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় বৈচিত্র্য ও শক্তি জোগায়।

২০০৯ সালের এক নিবন্ধে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তন জীববিজ্ঞানী মার্লেন জুক লিখেছেন, ‘কে বেশি অসুস্থ হয়, এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই—প্রায় সব সময়ই তা পুরুষ।’

তবে এর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। অধিক প্রতিরোধব্যবস্থার কারণে নারীরা অটোইমিউন রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এ যেন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজেদের শরীরই আঘাত পায়।

৩. স্থিতিস্থাপকতা: দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক পরিশ্রমে নারীদের শরীর কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘমেয়াদি ব্যায়ামের তথ্য অনুযায়ী, শারীরিক চাপ সামলাতে নারীর শরীর পুরুষের তুলনায় কম ক্ষয় হয়। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন ৪০ বছরের ওপরের ৩০০ জন অ্যাথলেটের রক্তনালির অবস্থা পরীক্ষা করে। এদের মধ্যে ছিলেন দীর্ঘ দৌড়বিদ, সাইক্লিস্ট, রোয়ার এবং সাঁতারু।

গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ অ্যাথলেটদের রক্তনালির বয়স বেড়ে হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে, কখনো কখনো ১০ বছর পর্যন্ত। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত ফল পাওয়া গেছে। তাদের রক্তনালি জৈবিকভাবে আরও তরুণ এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কম।

৪. দীর্ঘায়ু : মানবদেহের চূড়ান্ত পরীক্ষাই হলো জীবনকাল। আর সেখানে নারীরাই এগিয়ে। প্রায় প্রতিটি সমাজ ও প্রজাতিতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে।

এর কিছুটা ব্যাখ্যা আচরণগত। কারণ পুরুষ বেশি ঝুঁকি নেয়, নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে। তবে এটি মূলত জৈবিক। নারী রোগ, অপুষ্টি ও আঘাত থেকে পুরুষদের তুলনায় বেশি টিকে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের ওয়াই ক্রোমোজোম সময়ের সঙ্গে বেশি ক্ষয় হয়, যাকে বলা হয় ‘মোজাইক লস অব ওয়াই’। এই ক্ষয়ের সঙ্গে পুরুষদের হৃদ্‌রোগ, ক্যানসারসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি যুক্ত।

এ কারণে নারীর জীবনকাল সাধারণত পুরুষের থেকে দীর্ঘ হয়।

ঐতিহ্যগতভাবে আমরা শক্তিকে বোঝাই পুরুষের প্রাধান্যযুক্ত দক্ষতা—যেমন সর্বোচ্চ ওজন তোলা বা দ্রুততম দৌড়। অথচ যদি পরিমাপ হয় ধৈর্য, পুনরুদ্ধার, টিকে থাকার ক্ষমতা আর দীর্ঘায়ু দিয়ে—তাহলে সেই শক্তির সংজ্ঞায় নারীদেহই এগিয়ে থাকবে।

তবে এখনো নারীকে নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা পরিচালনা হয় না। তারা পুরুষের মতো প্রশিক্ষণ বা উৎসাহ পায় না। ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ক্রীড়া ও ব্যায়ামবিষয়ক গবেষণার মাত্র ৬ শতাংশ নারীর শরীর নিয়ে হয়েছে। অনুবাদ: আজকের পত্রিকা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়