অপু রহমান, নারায়ণগঞ্জ : সিদ্ধিরগঞ্জে সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের পদত্যাগ দাবীতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির
অভিযোগ তুলে শ্লোগান দিতে থাকে।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ১১টায় ক্লাস বর্জন করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চাষাড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রীদের বুঝিয়ে বিদ্যালয়ের ভেতরের মাঠে নিয়ে যায়।
পরে ২ টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে এবং তার অপসারন দাবী করে। এসময় কয়েজন শিক্ষার্থী উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে প্রধান শিক্ষক রফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, রফিক স্যার যখন ক্লাসে যান তখনি কৌশলে আমাদের শরীরে হাত দেন।
আমরা শ্রেণী কক্ষে পড়া দিতে না পারলে তিনি আমাদের ছবি তার মোবাইলে তুলে নিয়ে যেতেন। কখনো পড়া না পাড়লে তিনি আমাদের হাত দিয়ে শরীরে থাপ্পর দিতেন। আমরা চাই না আমাদের আর কোনো বোন তার দ্বারা হয়রানীর শিকার হোক।
তার মতো শিক্ষক আমরা এ বিদ্যালয়ে চাই না। আমরা তার পদত্যাগ চাই। এসময় শিক্ষার্থীরা নাসিক ৪,৫,৬ নং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবীতে আমরা আন্দোলন করলে তিনি নাকি আমাদের পরীক্ষা দিতে দিবে না।
তিনি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এমন কথা কীভাবে বলেন? তিনি আমাদের প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেছেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন আমরা যেনো না করি। এ বিষয়ে নাসিক ৪.৫.৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম জানায়, আমি একজন মা এবং ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা আমারই মেয়ে।
তাদেরকে হুমতি তো প্রশ্নই আসে না। আমি ছাত্রীদের বিক্ষোভের কথা শুনে ঘটনাস্থলে যাই। এবং তাদের অভিযোগ শুনে দুই দিন সময় চাই। যাতে করে বিষয়টি নিয়ে সকলের সাথে কথা বলে সমাধান করা যায়। কিন্তু তারা আমার সেই কথা না রেখে রাস্তায় গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
তখন আমি আর সেখানে না থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন চলে আসি মাসিক সভায় যোগদানের জন্য।
এদিকে সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের দাবী, তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের কেউ প্ররোচিত করে এই বিক্ষোভে বাধ্য করেছে। তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের করা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি দাবী করেন।
প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, এসব ছাত্রীরা হচ্ছে কোমলমতি। তারা এখনো ষড়যন্ত্র কি তা বুঝে না। তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা বলানো হচ্ছে।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন শিক্ষিকার সাথে কথা বলে জানা গেছে অন্য তথ্য। সাবেক শরীর চর্চা বিষয়ক শিক্ষিকা সুমিতা নাথ, গানের শিক্ষিকা শাহীন চৌধুরী, ইংরেজী শিক্ষিকা ফরিদা আক্তার, সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষিকা শাসচ্ছুন্নাহার শিলা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আমরা কখনো প্রধাণ শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের করা অভিযোগের বিষয়টি জানতে পারিনি।
২০১৯ সালে রফিক স্যার এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।এর পরে করোনা কারণে প্রায় দুই বছর বিদ্যালয় বন্ধ ছিলো। গত বছরের শেষের দিকে যখন বিদ্যালয় চালু হয় তখন থেকে এখন পর্যন্ত রফিক স্যার আমাদের সাথে এমন কোন আচরণ করে নাই যাতে তার অন্য কোন উদ্দেশ্যর প্রকাশ পায়। তবে গত কয়েকদিন যাবৎ শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করে।
হঠাৎ তারা শ্রেণী কক্ষ থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এদিকে বেলা ২টায় বিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ.এস.এম অফিসার আবু তালেব। তিনি বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষিকা এবং এডহক কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে বিস্তারিত বিষয়টি জানেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমরা ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এই বিদ্যালয়ের দুজন খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন সোহেল ও বিল্লাল নামে।
রবিবার তারা পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়। সেই শিক্ষকদের আবার ফেরত আনার জন্য ছাত্রীরা দাবী করেছে। আমরা পুরো বিষয়টিই তদন্ত করে দেখবো। এবং সেই অনুযায়ীই ব্যাবস্থা নেয়া হবে।সম্পাদনা: আল আমিন
আপনার মতামত লিখুন :