ফারুক আহাম্মদ, কুমিল্লা: [২] দুই হাত ছাড়াই জন্ম নিয়েছিলেন প্রতিবন্ধী শিশু আশাদুল ইসলাম। তবুও সে দমে যায়নি। মনের প্রবল ইচ্ছে শক্তিতে পা দিয়ে লিখেই চালিয়ে যাচ্ছে পড়াশোনা। আসাদুল ইসলাম (১০) কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া ছমুদ্দিন বাড়ির মৃত সুমন মিয়া ছেলে ও খাজা আহাম্মেদের নাতি।
[৩] জানা গেছে, নানী কুহিনুর আক্তার ৬ বছর ধরে লালন পালন ও লেখাপড়া করাচ্ছেন। তার বাবা একজন রাজমিস্ত্রী ছিলেন। অভাবের সংসার ৩ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে আশাদুলের বাবা গত বছর মারা যায়। আসাদুল শিদলাই স্থানীয় একটি ব্র্যাক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।
[৪] আসাদুলের নানী মৃত খাজা আহাম্মেদের স্ত্রী কুহিনুর বেগম বলেন, আমার এই টানাপোড়নের সংসার তা উপর আমার নাতির লেখাপড়া করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার দুটি হাত না থাকায় গোসল, খাওয়া-দাওয়াসহ সকল কিছু আমাকে করতে হচ্ছে। তারপরও আমার নাতি আশাদুলের ইচ্ছায় আমি তাকে লেখাপড়া করাচ্ছি। তারও ইচ্ছা লেখাপড়া করে একজন সরকারি কর্মকর্তা হবে।
[৫] তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ে অল্প বয়সে বিধবা হয়। তার থেকে আশাদুল আমার বাড়িতে থাকে। ৩ ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমার মেয়ের সংসার চলতে খুবই কষ্ট হয়। তার কষ্ট কিছুটা কমানোর জন্য প্রতিবন্ধী আশাদুল আমার বাড়িতে থাকে। কিন্তু আমারও স্বামী নেই। আমিও চলতে খুবই কষ্ট হয়। আবার আশাদুলের লেখাপড়া খরচ চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা পাই না। যদি সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় তাহলে আশাদুলের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে কোন বাধা থাকবে না।
[৬] এব্যাপারে আশাদুলের নানীর বাড়ির স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, আশাদুল শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও মানুসিকভাবে অনেক দৃঢ়। প্রতিদিন স্কুলে আসা যাওয়া করে। সে একজন মেধাবী ছাত্র। তার ইচ্ছা কষ্ট করে হলেও লেখাপড়া চালিয়ে গিয়ে দেশের জন্য কিছু করা।
[৭] আসাদুলের স্কুলের শিক্ষক বলেন, আসাদুল প্রতিদিন নিয়মমাফিক স্কুলে আসা-যাওয়া করে। সে লেখাপড়াও অনেক ভালো। আমরা মাঝে মাঝে খাতাপত্র দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা করি। তবে সমাজের বিত্তবান মানুষ আসাদুলের জন্য এগিয়ে এলে সে অনেক দুর এগিয়ে যেতে পারবে।
[৮] শিদলাই ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলাউল আকবর বলেন, শিশু আসাদুল ইসলাম জন্মগত প্রতিবন্ধী। পড়াশোনার প্রতি তার প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে। শুনেছি আসাদুল একজন ভালো ছাত্র। আসাদুলের সঠিক পরিচর্যা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমার পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করছি। শিদলাই ইউনিয়ন প্রবাসী মানবসেবা সংগঠন তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে বলে আমাকে অবহিত করেছে। পাশাপাশি এভাবেই বিত্তবানরা আসাদুলের পাশে দাঁড়ালে একদিন সে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পড়াশোনা করে তাক লাগিয়ে দেবে বলে আমার বিশ্বাস। সম্পাদনা: হ্যাপী
প্রতিনিধি/এইচএ
আপনার মতামত লিখুন :