আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন ও শপথকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে- আপিল বিভাগ বলেছে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত সঠিক ও হস্তক্ষেপযোগ্য নয়।
রেফারেন্স এবং মতামত প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলও খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ ও গঠন প্রক্রিয়া বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রিটকারীর লিভ টু আপিল খারিজ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ আদেশ দেন।
আপিল বিভাগ আদেশে বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ ও গঠন প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজের হাইকোর্টের আদেশ সঠিক ও যথার্থ। আপিল বিভাগ এ কারণে হাইকোর্টের আদেশে হস্তক্ষেপ করছেন না। আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি সর্বসম্মতিক্রমে এ আদেশ দিয়েছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ড. শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এস এম শাহরিয়ার কবির।
গতকাল বুধবার লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ আদেশের আজ দিন ধার্য করেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টাগণ শপথ নেন।
এই প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। সে রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে পরে তিনি লিভ টু আপিল করেন।
রিট খারিজের আদেশে হাইকোর্ট বলেন, এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করেছেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাই এটি আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছার সমর্থনপুষ্ট।
আদালত আরো উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ এবং আগামী বহু বছর জনগণ তা স্মরণে রাখবে।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে ‘সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার’-এর কথা বলা আছে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির কাছে যদি মনে হয় জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো আইনি প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে বা হতে পারে এবং এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেয়া প্রয়োজন, তাহলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের কাছে পাঠাতে পারবেন। আপিল বিভাগ উপযুক্ত শুনানির পর রাষ্ট্রপতিকে মতামত জানাতে পারবেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। গঠন ও শপথের আগে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান।
রাষ্ট্রপতির বিশেষ রেফারেন্স (১/২৪) অনুযায়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট মতামত দেন। তাতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারবেন এবং তাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন।