বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত ভাগ করা ৪৩৬ নম্বর মূল পিলারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্যপট। একদিকে বাংলাদেশের শান্ত, সবুজ গ্রামীণ প্রকৃতি- অন্যদিকে ভারতের বিস্তীর্ণ সমতলভূমির চা-বাগান ও সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিরাপত্তার মাঝেও প্রতিদিনই এখানে ভিড় জমছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসু মানুষের।
নোম্যানস ল্যান্ডের পাশ দিয়ে যাওয়া তেঁতুলিয়ার মূল সড়কের পাশে সবুজে মোড়ানো চারপাশ, সীমান্ত পিলারের অপর পাশে ভারতের চা-বাগানের সারি আর দেখা মিলছে ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া। দৃশ্যটি এতটাই মনোমুগ্ধকর যে পর্যটকদের ভাষায়, একবার না দাঁড়ালে যেন ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কেউ তুলছেন ছবি, কেউ ভিডিও করছেন- সব মিলিয়ে জায়গাটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এক, চেক-ইন স্পট।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শীতের আগমনী বার্তা আর হেমন্তের নরম রোদে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সীমান্তের এ এলাকাটি। তেঁতুলিয়ায় প্রবেশের আগে অনেকেই প্রথমেই থেমে যাচ্ছেন ৪৩৬ নম্বর মেইন পিলারের পাশে। কেউ তুলছেন স্মৃতি-বন্দি ছবি, কেউবা নিরাপদ দূরত্ব থেকে ভারতের চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন আর ছবি তুলছেন।
কথা হয় ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা নুসরাত জাহানের সাথে। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, আমরা মূলত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি। কিন্তু সীমান্তের এই জায়গায় এসে মনে হলো, না এসে থাকলে ভ্রমণটা অসম্পূর্ণ থাকত। এখানে দাঁড়িয়ে ভারতের চা-বাগান দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। পরিবার নিয়ে মজা করার পাশাপাশি ছবি তুলছি।
রাজশাহী থেকে আসা মঞ্জুরুল ইসলাম সোহেল সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমরা মূলত সীমান্তের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি- একদম ভারতীয় মাটির সামনেই। সবকিছু মিলে দারুণ লাগছে।’
বগুড়া থেকে বাইক নিয়ে আসা পর্যটক অরজুন রায় সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমরা চারটি বাইক নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এই জায়গাটা অন্যরকম। তাই সবাই মিলে এখানে ছবি তুলছি।’
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এলাকাটি এখন ফটোগ্রাফার, ভ্রমণব্লগার ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের নতুন প্রিয় জায়গা। সকাল কিংবা বিকেলের আলোয় সীমান্তের মনোরম দৃশ্য ধারণ করতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু সময় সংবাদকে বলেন, তেঁতুলিয়ায় পর্যটকের আগমন বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা তৎপর রয়েছে। একই সাথে সীমান্ত নিরাপত্তায় কাজ করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি সদস্যরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে তেঁতুলিয়ার রয়েছে বিশেষ অবস্থান। বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা খালি চোঁখে দর্শন ছাড়াও এখানে রয়েছে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, সমতলের বাংলার বিস্তৃন্য মাঠজুড়ে সমতলের চা-বাগান, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো ও মহানন্দা নদীসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সব মিলিয়ে তেঁতুলিয়া এখন যেন উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি রাজধানী- আর নতুন সংযোজন এই ছোট্ট ভারত নামের সীমান্ত এলাকা।
সূত্র: সময়