শিরোনাম
◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সময়মতো জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের আহ্বান বিএনপির স্থায়ী কমিটির ◈ কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ব্যয়  ৪৫ লাখ টাকা ◈ ভার‌তের কা‌ছে পাত্তাই পে‌লো না অস্ট্রেলিয়া, ম‌্যাচ হার‌লো ৪২ রা‌নে ◈ শুল্ক চুক্তির অধীনে মা‌র্কিন উ‌ড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি বিমান কিনছে বাংলাদেশ ◈ টিটিপাড়ায় ৬ লেনের আন্ডারপাস, গাড়ি চলাচল শুরু শিগগিরই (ভিডিও) ◈ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বার্তা ◈ ভালোবাসার টানে মালিকের সঙ্গে ইতালি যাওয়া হলো না সেই বিড়াল ক্যান্ডির! ◈ ৬৬ পর্যবেক্ষক সংস্থা পেল নিবন্ধন, নতুন নীতিমালায় পুরনো ৯৬টির নিবন্ধন বাতিল ◈ সরকারি দায়িত্ব শেষ, পেশাগত কাজে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপক আলী রীয়াজ: ফিরবেন কিছুদিন পর ◈ ৯ দল নিয়ে এনসিপির রাজনৈতিক জোটের সম্ভাবনা: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

প্রকাশিত : ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৮:০৭ রাত
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুন্দরবনে প্রকৃতিতে ফিরছে একসময়ের বিলুপ্তপ্রায় দৈত্যকচ্ছপ বাটাগুর বাসকা

দেশের নদী ও মোহনায় একসময় এমন এক কচ্ছপ সাঁতার কাটত, যা দেখতে পেলেই বিস্ময়ে চোখ বড় হয়ে যেত। প্রায় ২৫ থেকে ২৭ কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির কচ্ছপটির নাম বাটাগুর বাসকা। স্থানীয়ভাবে একে ‘নদীর কাইট্টা কচ্ছপ’ নামেও ডাকা হতো। পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন কচ্ছপের তালিকায় শীর্ষে থাকা এই প্রজাতি একসময় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল।

একসময় সুন্দরবন থেকে শুরু করে মিয়ানমার-থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া উপকূল পর্যন্ত এই কচ্ছপের বসতি ছিল। তবে নির্বিচারে শিকার, নদীতটে মানুষের দখল, বাসস্থান ধ্বংস, মাছ ধরার জাল ও দূষণের কারণে বাটাগুর বাসকার সংখ্যা ভয়াবহভাবে কমে যায়। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন এই প্রজাতিকে মহাবিপন্ন তালিকাভুক্ত করেছে। একসময় পদ্মা, মেঘনা, পায়রা ও সুন্দরবনের নদীগুলোতে নিয়মিত দেখা যেত এই কচ্ছপ। কিন্তু ২০০০ সালের দিকে গবেষকেরা ধারণা করেন, পৃথিবীতে আর বাটাগুর বাসকার কোনো অস্তিত্ব নেই।

২০০৮ সালে কিছু প্রাণিবিজ্ঞানী এই প্রজাতির খোঁজে নেমে পড়েন। সেই অভিযানে নোয়াখালী ও বরিশালের জলাশয়ে আটটি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। যার চারটি পুরুষ ও চারটি স্ত্রী। বন বিভাগ তখন সেগুলোকে উদ্ধার করে প্রজননের উদ্দেশ্যে গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্মকর্তারা কচ্ছপগুলোকে নিবিড়ভাবে লালন-পালন ও প্রজননের চেষ্টা শুরু করেন। শুরুতে সাফল্য সীমিত হলেও, ২০১৪ সালের মধ্যে গাজীপুর কেন্দ্রে প্রায় ৯৪টি ছানা জন্ম নেয়। এরপর প্রজনন কার্যক্রম আরও জোরদার করার জন্য আটটি কচ্ছপ ও তাদের জন্ম দেওয়া ছানাগুলোকে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, এখন পর্যন্ত করমজলে ৫১৯টি ডিম থেকে ৪৩৩টি বাচ্চা ফুটেছে। এছাড়া বর্তমানে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ৪৫৭টি কচ্ছপ রয়েছে। এ বছর তিনটি বাটাগুর বাসকা মোট ৮২টি ডিম দিয়েছে। তা থেকে ৬৫টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। তিনি আরও জানান, বিশেষ ইনকিউভেশন বালুর নিচে রেখে ডিমগুলো ফোটানো হয়। বাচ্চা কচ্ছপগুলোকে প্রথমে পানির ট্যাংকে রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরে ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে মানিয়ে নিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে দুটি কচ্ছপের ৬৩টি ডিম থেকে ৫৭টি বাচ্চা হয়। এরপর ২০১৮ সালে দুটি কচ্ছপের ৪৬টি ডিম থেকে ২১টি বাচ্চা, ২০১৯ সালে একটি কচ্ছপের ৩২টি ডিম থেকে ৩২টি বাচ্চা, ২০২০ সালে দুটি কচ্ছপের ৫৬টি ডিম থেকে ৫২টি বাচ্চা, ২০২১ সালে চারটি কচ্ছপের ৯৬টি ডিম থেকে ৭৯টি বাচ্চা, ২০২২ সালে একটি কচ্ছপের ৩৪টি ডিম থেকে ৩৩টি বাচ্চা, ২০২৩ সালে দুটি কচ্ছপের ৫২ ডিম থেকে ৫২টি বাচ্চা, ২০২৪ সালে তিনটি কচ্ছপের ৫৮ ডিম থেকে ৪২টি বাচ্চা ও সর্বশেষ ২০২৫ সালে তিনটি কচ্ছপের ৮২টি ডিম থেকে ৬৫টি বাচ্চা ফোটে। এছাড়া ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২২ ও ২০২৪ সালে এই বাচ্ছাগুলো থেকে ১০৬টি কচ্ছপ সুন্দরবনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন পুকুরসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবনের নদী-খালসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বাটাগুর বাসকার কোনো স্ত্রীর কচ্ছপ রয়েছে কি না এবং কচ্ছটির জীবন-আচরণ জানতে বিভিন্ন সময় পিটে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে ২১টি পুরুষ কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে এতে আশানুরূপ কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি।

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাটাগুর বাসকার পুনর্জীবন বাংলাদেশের সংরক্ষণ ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই সফলতা প্রমাণ করে, সঠিক পরিকল্পনা ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রচেষ্টায় হারিয়ে যাওয়া প্রজাতিকেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘একসময় মনে হয়েছিল এই কচ্ছপ চিরতরে হারিয়ে গেছে। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, প্রজনন সম্ভব এবং বাচ্চাগুলো টিকে থাকছে। এটা বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়