মো. কামরুল ইসলাম, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : নবীনগর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা। বর্ষাকালে নবীনগর উপজেলার এক তৃতীয়াংশ জায়গা জোড়ে হাওড়ের পানিতে নিমজ্জিত থাকে। বর্ষা মৌসুমে অনেক জমি পানিতে তলিয়ে থাকে অথবা দীর্ঘ জলাবদ্ধতার শিকার হয়। সে সব জমিতে কোন ফসল চাষ করা যায় না। এ সময় শাকসবজির প্রাপ্যতাও থাকে কম, ফলে বাজারে সবজির দাম থাকে আকাশ ছোঁয়া। এ সব জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে ধাপ তৈরি করে কিংবা ডালি পদ্ধতিতে নানা ধরনের সবজি আবাদ করা যায়।
নবীনগর উপজেলায় ফ্রিপ প্রকল্পের অর্থায়নে জলাবদ্ধ এবং পানিতে ভাসমান কাঠামোর ডালি তৈরি করে ওখানে সবজি আবাদ করা হয়েছে। এই ধরনের সবজি আবাদে কৃষক লাভবান হচ্ছে এবং সেচের পানি যেমন কম লাগে, অতি বৃষ্টিতে ফসলের কোন ক্ষতি হয় না। তাছাড়া বাশের তৈরি ডালি পদ্ধতির কাঠামো বর্ষা মৌসুম শেষে পরবর্তীতে কমপক্ষে দুই মৌসুম মাচা জাতীয় সবজি আবাদ করা যায়, এতে অল্প খরচে জমি থেকে সবজি আবাদে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বছরের এই সময়ে অতিবৃষ্টিতে অনেক সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে সবজির দাম চড়া থাকে, ফলে যেকোনো সবজি জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত লাভজনক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছর ধরে নবীনগর উপজেলায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান আবাদের উপর কৃষকদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ এবং প্রদর্শনী দেওয়া হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায় চলতি মৌসুমে উপজেলার ইব্রাহিমপুর, নাটঘর, রছুল্লাবাদ, সাতমোড়া, সলিমগঞ্জ এবং বড়িকান্দি ইউনিয়নে ভাসমান ডালি পদ্ধিতিতে সবজি আবাদ করা হচ্ছে।
ইব্রাহিমপুরের গ্রামের কৃষক কাওছার মিয়া জানান, বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ জায়াগা আগে পতিত পরে থাকতো তিন থেকে চার মাস। দেশের অনেক জায়গায় ভাসমান ডালি পদ্ধতিতে কৃষি কাজ খুব জনপ্রিয়। আমি উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় ১০ শতাংশ জায়গায় ভাসমান পদ্ধতিতে লাউ আবাদ করেছি, ইতিমধ্যে প্রায় দুইশত লাউ বিক্রি করে পনেরো হাজার টাকা আয় করেছি। এই পদ্ধতিতে সবজি আবাদে সবজি অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। সবজির বাজার মূল্য অনেক ভালো। আগামীতে আরো জমি ভাসমান ডালি পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করবো।
নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িঘর গ্রামের কৃষক সুমন মিয়া জানান, ইউনিয়নে আমিই প্রথম কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ভাসমান ডালি পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করছি। আমি ১৮ শতক জমিতে ময়না লাউ আবাদ করেছি। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে আশাকরি ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করা সম্ভব। আগে এই সময় জমি পরিত্যক্ত থাকতো। আমার দেখাদেখি অনেকেই এই পদ্ধতিতে আগামীতে সবজি আবাদ করতে আগ্রহী।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, ভাসমান ডালি পদ্ধতিতে কৃষকদের আবাদ কৌশল শিখাতে ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় দুই শতাধিক কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ভাসমান ডালি কাঠামো তৈরি এবং বীজ সার দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছে। প্রযুক্তিটি নিরাপদ কৃষি উৎপাদন প্রযুক্তি হিসেবে ইতিমধ্যে সমাদৃত হয়েছে। আগামীতে এই প্রযুক্তি সবজি চাষ এই অঞ্চলের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময়।
এ চাষ পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হওয়ায় অন্যান্য কৃষকরাও ঝুঁকছেন নতুন পদ্ধতির সবজি চাষে। ফলে এই চাষ পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এছাড়াও কৃষক-কৃষাণীদের প্রশিক্ষণ ও মাঠ দিবসও অনুষ্ঠিত হয়েছে। জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে ডালি কিংবা বেড তৈরি করে চাষাবাদ কৌশলকে ছড়িয়ে দিতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে কাজ করছে যা আগামী দিনে নিরাপদ এবং অসময়ে সবজি উৎপাদন করে খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে।