এ এইচ সবুজ, গাজীপুর: গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের চাকরির মেয়াদ সংক্রান্ত জটিলতায় গত ২২ দিন যাবৎ এ পদে কেউ না থাকায় স্থানীয় জনগণ মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
জমি বেচা-কেনা বন্ধ থাকায় অনেকেরই চিকিৎসা সেবা, বিদেশ যাত্রা, বাসা-বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা- বাণিজ্য বিনিয়োগসহ নানা ধরণের কাজ থমকে রয়েছে।
অসংখ্য মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে দিনের পর দিন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এসে দলিল করতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। এখানে কর্মরত দলিল লেখক, নকল নবিশ, স্ট্যাম্প ভেন্ডার, সহকারী দলিল লেখকসহ প্রায় ২শত মানুষ বেকার সময় পার করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি সরকারও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাপাসিয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মোঃ ওসমান গণি মন্ডলের গত ২৩ জুলাই স্বাভাবিক নিয়মে চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। ওই দিনই তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময় মুজিবনগর সরকারের কর্মচারি হিসেবে তিনি সরকারি চাকরিতে এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধির সুবিধা পাওয়ার কথা। সরকারের এই বিধি অনুযায়ী তিনি গত ২২ জুলাই হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন।
হাইকোর্ট ওই দিনই তার চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির জন্য আইন ও বিচার বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদিদের নির্দেশ দেন। কিন্তু আইন ও বিচার বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে হাইকোর্টের আদেশ মেনে নিয়ে পরিপত্র জারি করা কিংবা আপিল করার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
ফলে পিআরএল-এ থাকা ওসমান গণি মন্ডল বা অন্য কাউকে এ পদে পদায়ন করা হচ্ছে না। তাই এখানে সাব রেজিস্ট্রার পদটি গত ২০ দিন যাবৎ শূন্য রয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের খোদাদিয়া গ্রামের মতিউর রহমান জানান, সম্প্রতি তার ছেলে মোঃ নয়ন মিয়া মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তিনি ছেলের চিকিৎসার ব্যয় মিটানোর জন্য এক প্রতিবেশির কাছে জমি বিক্রি করেছেন। কিন্তু বিক্রিত জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে না পারায় তার কাছ থেকে তিনি সমুদয় টাকা নিতে পারছেন না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টির দ্রুত সমাধান চান তিনি।
সদর ইউনিয়নের কান্দানিয়া গ্রামের কাজী মোহাম্মদ ওসমান জানান, তিনি ব্যাংকে কিছু জমি বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা ঋণের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখন তাকে টাকা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু আজ ২২ দিন যাবৎ সাব রেজিস্টিার না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে তিনি দলিল সম্পাদন করতে পারছেন না। ফলে এই মুহূর্তে তিনি টাকার অভাবে মারাত্মক সমস্যায় রয়েছেন।
টোক ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ছেলেকে প্রবাসে পাঠানোর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এখন জমি বিক্রি করে টাকা দিতে না পারার কারণে তার প্রবাসযাত্রা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
মতিউর রহমান,কাজী ওসমান ও হাবিবুর রহমানের মতো উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের শত শত মানুষ বর্তমানে জমি বেচা কেনা করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এখানে কর্মরত দলিল লেখক তাইজুল ইসলাম সুমন জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় প্রায় ১১০ জন দলিল লেখক ও ৩৫-৪০ জন নকল নবিশসহ প্রায় ২শত মানুষের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এখন তারা সবাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে তাদের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার মো: মিজানুর রহমান জানান, জনদুর্ভোগ, সরকারের রাজস্ব অর্জন বন্ধ থাকা ও ওই অফিসের অচলাবস্থা তুলে ধরে তিনি গত ৩০ জুলাই মহাপরিদর্শক নিবন্ধন বরাবরে তিনি একটি পত্র পাঠিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা না পাওয়ায় এ অচলাবস্থা কাটছে না।
তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ অচলাবস্থা নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।