শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা : কুমিল্লা নগরীর ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের উত্তর পাশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের সরকারি সুইমিংপুলে রশিদ ছাড়াই টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। সাঁতারপ্রেমীদের অভিযোগ, প্রতিদিন গড়ে ২০০ জন প্রবেশকারীর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা হলেও কাউকে কোনো রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। এতে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার এবং মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত অবৈধভাবে উত্তোলনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা যায়, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১৮ সালের শেষদিকে নির্মিত এই সুইমিং কমপ্লেক্সটি শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় দেড় একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা এই আধুনিক কমপ্লেক্সে রয়েছে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য, ২২ মিটার প্রস্থ এবং ১.৮ মিটার গভীরতার একটি ৮ লেনবিশিষ্ট সুইমিংপুল। এছাড়াও রয়েছে আধুনিক ড্রেসিংরুম, প্লেয়ার্স লাউঞ্জ, এক হাজারের অধিক দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গ্যালারি, বিশুদ্ধ পানির প্ল্যান্ট, ডিপ টিউবওয়েল, ২৫০ কেভিএ বিদ্যুৎ সাবস্টেশন এবং নিজস্ব পার্কিং সুবিধা।
উদ্বোধনের পর থেকে এখানে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সাঁতার প্রশিক্ষণ চালু রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৪০ জনের একটি প্রশিক্ষণার্থী দল নিয়মিত অনুশীলন করছে। স্থানীয়দের মধ্যে সাঁতার শেখার আগ্রহ বেড়েছে এবং প্রতিদিন শতাধিক শিশু-কিশোর ও যুবক সাঁতার কাটতে আসে।
তবে, নিয়মিত সাঁতারপ্রেমীদের অভিযোগ, প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা নিলেও কেউ রশিদ বা টিকিট পাচ্ছে না। এতে অর্থের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকরা। জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী মাহি বলেন, “আমি দুই মাসের বেশি সময় ধরে এখানে আসছি। কিন্তু কখনো কোনো রশিদ পাইনি। আমরা জানি না, এই টাকা সরকার পাচ্ছে কিনা।”
একজন অভিভাবক সোহেল বলেন, “আমার সন্তানকে নিয়ে এখানে আসি। প্রতিবার ১০০ টাকা দিই, কিন্তু কোনো রশিদ দেয় না। এটি খুবই দুঃখজনক। রশিদ না দিলে কীভাবে হিসাব হবে? এসব টাকা কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।”
রশিদ ছাড়া টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কথা বলতে গেলে ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধি রিপন দায় এড়িয়ে বলেন, “আমি টাকা তুলিনা, রিয়াজ নামের আরেকজন তোলে।”
রিয়াজ বলেন, “আমি টাকা তুলে খাতায় লিখে রাখি। প্রতি সপ্তাহের টাকা জমা দিয়ে আসি।”
তবে জেলা ক্রীড়া অফিসার মোঃ আফাজ উদ্দিন বলেন, “আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। রশিদ ছাড়া টাকা উত্তোলন করা অনুচিত। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।”
স্থানীয় ক্রীড়া প্রেমী ও অভিভাবকরা বিষয়টির তদন্ত দাবি করে বলছেন, এতদিন ধরে উত্তোলিত টাকার হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।