শিরোনাম
◈ মার্কিন পাল্টা শুল্ক: সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের বহুমুখী তৎপরতা ◈ ১ ঘণ্টার ব্যবধানে মোহাম্মদপুরে দুই খু.ন ◈ কোনো দলকে নিষিদ্ধ করা বা তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া মানুষের মন থেকে তার উপস্থিতি মুছে ফেলে না: মাসুদ কামাল (ভিডিও) ◈ গোপালগঞ্জে আগামীকালের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত ◈ গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে এনসিপির সারা দেশে সমাবেশের ঘোষণা, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি ◈ মে‌হেদীর ঘুর্ণীর পর তান‌জিদ ঝ‌ড়ে শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে টি-‌টো‌য়ে‌ন্টি সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ ◈ রাজধানীর আদাবরে ডিশ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা ◈ এবার চার উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকালেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা ◈ জীবন-মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি না হলে ঘর থেকে বের হবেন না: আসিফ মাহমুদ ◈ কুমিল্লায় নিজ ঘর থেকে নারী‌র রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত : ১৬ জুলাই, ২০২৫, ০৮:২০ রাত
আপডেট : ১৭ জুলাই, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

একমাত্র কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত স্ত্রী মারিয়া

কুমিল্লায় এক বছরেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেনি শহীদ নাজমুলের পরিবার

শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: কুমিল্লার মুরাদনগরে এক বছরেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেনি শহীদ কাজী নাজমুলের পরিবার। পরিবারের উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক পিতা মাতা স্ত্রী এক বছরেও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের পানি ও শুকনো খাবার সরবরাহের অভিযোগে রাজধানীর শনির আখড়া এলাকায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করে। কাজী নাজমুল উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রায়েরবাগের মোহাম্মদবাগ এলাকায় ক্যামিক্যাল ব্যবসা করতেন। এদিকে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলেও একমাত্র কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত স্ত্রী মারিয়া। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পূর্বাঞ্চল থেকে ঢাকার প্রবেশদ্বার সাইনবোর্ড, রায়েরবাগ, শনির আখড়া ও যাত্রাবাড়ি এলাকা ছিলো সবচেয়ে উত্তাল। পুলিশের গুলি-সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ভয় আন্দোলনকারীদের দমাতে পারেনি। বিশেষ করে শনির আখড়াকে এক ধরনের কিলিং জোনে পরিণত করেছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা।

সেখানে নিজের ব্যবসা ফেলে প্রতিদিন আন্দোলনে যোগ দিতেন কাজী নাজমুল। পাশাপাশি ওই এলাকায় ছাত্র জনতার মাঝে নিজ উদ্যোগে বোতলজাত পানি সরবরাহ করতেন। স্ত্রী মারিয়া জানান, ১৮ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্বামী নাজমুল জানতে পারেন শনির আখড়ায় আন্দোলনকারীদের জন্য পানি ও শুকনা খাবার প্রয়োজন।

তাই দেরি না করে মোহাম্মদবাগের বাসা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী একটি দোকান থেকে কিছু পানির বোতল ও শুকনা খাবার নিয়ে আন্দোলনকারীদের মাঝে বিতরণ করেন নাজমুল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে থাকা অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা তাকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখে। এ সময় মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে স্থানীয় অনাবিল হাসপাতালে নিয়ে যান দুই পথচারী।

কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আন্দোলনে আহত কাউকে চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত একটি রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয় তাকে। পরবর্তীতে তিনি (স্ত্রী মারিয়া) খবর পেয়ে বিকাল ৫টায় ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে এক সারিতে ৫ জনের লাশ দেখতে পান। এর মধ্যে একজন তার স্বামী নাজমুল কাজী।

তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে। বাবা সেলিম কাজী ও মায়ের নাম নাজমা বেগম। ৪-৫ বছর ঢাকার রায়েরবাগের মোহাম্মদবাগ এলাকায় ক্যামিকেলের ব্যবসা করতেন নাজমুল। স্ত্রী মারিয়া (২৪) ও আড়াই বছর বয়সের একমাত্র সন্তান আরিয়ানা কাজী নুজাইরাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

নাজমুলের বাবা কাজী সেলিম বলেন, একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেটিকে হারিয়ে এখনো আমার পরিবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি। আমরা শোকে নিস্তব্ধ বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। কোনরকম দিন পার করছি। জুলাই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে আমাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পরিবারের অনেক খরচ এতে ভালোভাবে চলছে না আমাদের সংসার। তারপরও আফসোস নেই। টাকা পয়সা দিয়ে কি করব। কলিজার টুকরা সন্তানকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আর কোন কিছুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। 

স্ত্রী মারিয়া বলেন, ‘এক বছর অতিবাহিত হলেও আমাদের পরিবারে শোক কাটেনি। মেয়েটি এখন একটু বড় হয়েছে। শুধু বাবাকে দেখতে চায়। বাবার কথা মনে করে নুজাইরা প্রায় সময় কান্না করে। নিজেকে ঠিক রাখতে অনেক কষ্ট হয়। আমি সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, আমরা শহীদ পরিবারের খোঁজ খবর রাখছি। সরকারের পক্ষ থেকে যেকোনো অনুদান আসলে আমরা যথাযথভাবে ওই পরিবারের কাছে পৌঁছে দেব। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়