হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফুসলিয়ে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ওই নারীর কাছ থেকে নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকা ও প্রায় ৮ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন হারিচুর রহমান ওরফে হাফিজ (৪৫), বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত এবং শেখর ইউনিয়নের শেখপুর গ্রামের বাসিন্দা।
এই ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রীর দুলাভাই সাহাবুদ্দিন সিকদার বোয়ালমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি জানার পর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিযুক্ত কর্মচারীকে সতর্কীকরণ নোটিশ দিয়েছেন।
থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী পৌর এলাকার বাসিন্দা এক প্রবাসীর স্ত্রী ভূমি উন্নয়ন কর সংক্রান্ত কাজে গুনবহা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাতায়াত করতেন। এ সুযোগে অফিস সহায়ক হারিচুর রহমান ওই নারীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে তিনি কাগজপত্রে ত্রুটি দেখিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করতে থাকেন।
একপর্যায়ে হারিচুর রহমান প্রবাসীর স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে—বিশেষ করে তাঁর ছোট ছেলেকে অপহরণের হুমকি দিয়ে—গত ১০ জুন ফুসলিয়ে নিয়ে যান। অভিযোগ অনুযায়ী, সেদিনই ওই নারীর বাসা থেকে নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকা এবং প্রায় ৮ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে নিজের গ্রামের বাড়ি শেখপুরে নিয়ে যান এবং সেখানেই তাকে আটকে রাখেন। তিনি ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন জব্দ করে দেন যাতে তিনি বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন।
এ সময় বিয়ের একটি জাল কাবিননামা তৈরি করে চলতি বছরের ২৪ মে বিয়ের তারিখ দেখানো হয়, যদিও কাবিননামায় সাক্ষর করা হয় ২৫ জুন। কাবিননামায় তাঁর প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের কোনো উল্লেখ নেই।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, “আমার ছেলেকে অপহরণের হুমকি দিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে বিয়ে করেছে হারিচ। আমার কাছে থাকা নগদ টাকা ও ৮ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নিয়েছে।”
অভিযুক্ত হারিচুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। বাড়িতে আটকে রাখার অভিযোগ সঠিক নয়। আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।”
বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক মাহমুদ হোসেন বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। হারিচুর রহমানকে বারবার থানায় ডাকা হয়েছে, কিন্তু তিনি আসেননি। বিষয়টি নিয়ে মামলা করলে আরও ভালোভাবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।”
গুনবহা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সাধন কুমার রায় বলেন, “হারিচুর অনেকদিন অফিসে আসছেন না। তার বিষয়ে আগে কিছু জানতাম না। আজ জেনেছি। এসিল্যান্ড স্যার তাকে নোটিশ দিয়েছেন।”
বোয়ালমারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, “আমার কাছে কেউ সরাসরি অভিযোগ করেননি। তবে বিষয়টি জানার পর অভিযুক্ত কর্মচারীকে সতর্কীকরণ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”