আরমান কবীর, টাঙ্গাইল: চারদিকে স্বজনদের বিলাপ। কেউ কাঁদছেন চুপিচুপি, কারও ঠোঁট কাঁপছে, কারও চোখ ঝাপসা। মায়ের লাশ পাশের ঘরে রাখা। এমন অবস্থায় পরীক্ষার সরঞ্জাম হাতে নিয়ে খাটিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে দুই শিক্ষার্থী। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মায়ের দিকে। এরপর চুপচাপ রওনা হন পরীক্ষাকেন্দ্রে।
মায়ের লাশ ঘরে রেখেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার দুই ছাত্রী—সায়মা আক্তার ও লাবণী আক্তার। একজন এইচএসসি, অন্যজন কারিগরি বোর্ডের অধীনে বিএম চূড়ান্ত পরীক্ষা দিচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলার হতেয়া গ্রামের রায়হান খানের মেয়ে সায়মা আক্তার হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) তাঁর ইংরেজি ২য় পত্রের পরীক্ষা ছিল সখীপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে। এর আগের দিন বুধবার (২ জুলাই) দিবাগত রাত ৩টার দিকে কিডনিজনিত রোগে মারা যান তাঁর মা শিল্পী আক্তার (৪০)।
অন্যদিকে কচুয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের লাবণী আক্তার সানস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার তাঁর ‘বিজনেস ইংলিশ অ্যান্ড কমিউনিকেশন’ বিষয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজ কেন্দ্রে। বুধবার রাত ৯টার দিকে তাঁর মা সফিরন নেছা (৪৫) মারা যান।
মায়ের মৃত্যুতে দুই ছাত্রীই ভেঙে পড়েন। তবু স্বজনদের অনুরোধে তাঁরা পরীক্ষাকেন্দ্রে যান। লাবণীর মায়ের জানাজা হয় বেলা সাড়ে ১১টায়, আর সায়মার মায়ের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জোহরের পর।
হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন ও সানস্টার ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মায়ের লাশ রেখে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অত্যন্ত কষ্টের। আল্লাহ যেন তাদের শক্তি দেন।
সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম জাকির হোসাইন বলেন, লাবণী আক্তার পুরো তিন ঘণ্টা পরীক্ষায় বসে ছিলেন। চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। পরীক্ষা শেষে এক শিক্ষক তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।