জিয়া উদ্দিন সিদ্দিকী, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি: বরগুনার আমতলী উপজেলায় আমনের মৌসুমে বিএডিসির সরবরাহকৃত ধান বীজে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ডিলার মধু প্যাদার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বরিশালের ফরিদ মিয়া নামের একজন ডিলারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করে নিজ গোডাউনে মজুদ করে তা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত ৬৭০ টাকার ১০ কেজির বীজ বস্তা ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে বীজ সংকটে পড়েছেন চাষাবাদে।
পুরনো বিতর্কে নতুন ক্ষোভ
গত বছরও মধু প্যাদার সরবরাহকৃত বীজে ধান না হওয়ায় চাষিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। গুলিশাখালী ও তালতলীর কচুপাত্রা বাজারে কৃষকরা মানববন্ধন করে ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছিলেন।
বীজের চাহিদা ও সংকট
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এই জমিতে চাষাবাদের জন্য প্রয়োজন ৫৮০ মেট্রিক টন বীজ ধান। অথচ বিএডিসি মাত্র ৫৫ মেট্রিক টন বীজ সরবরাহ করেছে, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
চাষিদের অধিকাংশই বিআর-৪৯ ও বিআর-২৩ জাতের বীজ ব্যবহার করেন। কিন্তু উপজেলার অধিকাংশ বীজ দোকানে এসব জাতের বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, সেটিও অতিরিক্ত দামে।
কৃষকদের বক্তব্য
খেকুয়ানী গ্রামের কৃষক আলতাফ হাওলাদার বলেন, “১০ কেজির বিআর-২৩ বীজ ৭৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে।”
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের রফেজ মিয়া বলেন, “আমতলী বাজার থেকে একই দামে বিআর-৪৯ কিনেছি, যা সরকারি দামের চেয়ে অনেক বেশি।”
ডিলারের স্বপক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি
মেসার্স রেজবি এন্টারপ্রাইজের মালিক মধু প্যাদা বলেন, “সরকারি দুইটি লাইসেন্সে আমি ৪ মেট্রিক টন বীজ পেয়েছি। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে ২৫ দিনে ৬০ মেট্রিক টন বীজ কিনেছি। বিএডিসির কর্মকর্তারা বিষয়টি জানেন।”
এদিকে বরিশালের জননী ট্রেডার্সের মালিক ফরিদ মিয়াও বীজ বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অনুমোদনবিহীনভাবে অন্য জায়গা থেকে বীজ এনে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয়।
প্রশাসনের অবস্থান
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার রাসেল মিয়া বলেন, “আমনের বীজতলার শেষ সময়ে কেউ যদি বেশি দামে বীজ বিক্রি করে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে বরিশাল বিএডিসির উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বলেন, “ডিলাররা বাইরে থেকে বীজ আনলে আপনাদের সমস্যা কোথায়?” — এবং এ নিয়ে জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করার হুমকি দেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, “বীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কেউ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”