এম আর আমিন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে শুল্কমুক্ত কয়লা ইটভাটায় উচ্চ দামে বিক্রি করছে অথচ সরকারকে প্রাপ্য ভ্যাট ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত করছে। পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার শাহীন জানান, আমদানিকৃত কয়লাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারের উপযোগী নেই, তাই খোলাবাজারে বিক্রি করছি। তবে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য শুল্কমুক্ত কয়লা আমদানি করে খোলাবাজারে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ ওঠেছে পার্কার বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের কর্ণধার হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলীর সন্তান আলী রিয়াদ। সে ফ্যাসিস্ট সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে আঁতাত করে শুল্কমুক্ত প্রায় ৫৪ হাজার টন কয়লা আমদানি করে তা খোলা বাজারে বিক্রি করে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব আত্মসাৎ করেছে। তার এই অসৎ কাজে করছেন পার্কার বাংলাদেশ ও ডায়মন্ড সিমেন্টের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা সদ্য পতিত সরকারের কতিপয় দোসর।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ১০ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরিণ বাণিজ্য ১ শাখার একপত্রে ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ২৭২ ডলার মূল্যের কয়লা বিনা শুল্কে আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদনের শর্তে বলা হয়েছে আমদানিকৃত কয়লা কেবল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিয়োজিত কাজে ব্যবহার করতে হবে। এই পত্রের ক্ষমতা বলে বিনা শুল্কে প্রায় ৫৩ হাজার ৯১৬ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করে পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেড। আমদানিকৃত কয়লার মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত ডায়মন্ড সিমেন্টের ফ্যাক্টরী সংলগ্ন মাঠে ১৫ হাজার টন, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা সদরে ডায়মন্ড সিমেন্টের মালিকানাধীন জায়গায় ২৮ হাজার ৯১৬ টন ও যশোরে প্রায় ১০ হাজার টন কয়লা মজুদ করে। মজুদকৃত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে না দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় উচ্চ দামে বিক্রি করছে অথচ সরকারকে প্রাপ্য ভ্যাট ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত করছে।
ইটভাটায় কয়লা বিক্রি করার বিষয়টি স্বীকার জমজম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. গিয়াস উদ্দীন বলেন, ”আমি পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে কয়লা কিনেছি, এগুলো ইটভাটা হোক বা যেকোন কাজের জন্য হোক বিক্রি করছি। এগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।” ভ্যাট চালান আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”আমরা লোকালে ২/১ গাড়ি করে মাল বিক্রি করি আমাদের ভ্যাট চালান বা শুল্ক পরিশোধের কোন কাগজপত্র সরবরাহ করেনি পার্কার বাংলাদেশ। ”
সম্প্রতি সরেজমিনে কর্ণফুলী উপজেলার ডায়মন্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন কয়লার ডিপোতে গিয়ে দেখা যায়, ডায়মন্ড সিমেন্টের জমির ওপর কয়লা রাখা হয়েছে, আবার তার পাশেই ডায়মন্ড সিমেন্টের মালিকানাধীন একটি ইটভাটায় এসব কয়লা ব্যবহার হচ্ছে।
এই রাজস্ব ফাঁকির চক্রের সাথে ডায়মন্ড সিমেন্ট জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে ডায়মন্ড সিমেন্টের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. হাকিম আলী বলেন, ”আমরা পার্কার বাংলাদেশকে জায়গাটা ভাড়া দিয়েছি, এখানে রাজস্ব ফাঁকির কোন বিষয় আছে কিনা আমাদের জানা নেই।” বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা কয়লা আপনাদের ইটভাটায় ব্যবহার করছেন, এটা অপরাধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”আমাদের ইটভাটার পাশে যেহেতু কয়লা বিক্রি করছে আর আমাদেরও যেহেতু দরকার তাই দুরে না গিয়ে কাছে থেকেই কিনে নিয়েছি। তবে ভ্যাট বা শুল্ক পরিশোধের কোন কাগজ আমাদের দেয়া হয়নি।”
পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ও ইন্ট্রাকো সিএনজির এমডি আলী রিয়াদ পতিত সরকারে তৎকালীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রী নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সরকার থেকে তৎসময়ে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন এবং সরকারকে সুবিধা দিয়েছেন ফলে ৫ আগস্টের পর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। ফলে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।