আবদুল ওহাব শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের পানিহালি গ্রামের আলহাজ মোজাহার আলী তালুকদার। বয়স ১১০ বছরও অতিক্রম করেছে। বার্ধক্যে শরীরও নুয়ে পড়েছে। তবু তিনি আবার বিয়ে করার জন্য জেলার একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন।কিন্তু কি কারনে জীবনের শেষ প্রান্তে তার এই আকাংখা? তা জানার জন্য তাকে সাথে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে জানাযায়, স্পর্শকাতর বেদনাভরা অজানা এক তথ্য।
মোজাহার আলী তালুকদারের রয়েছে ১০৮ বিঘার বেশী সম্পত্তি। তার দুই ছেলে ও চার মেয়ে। এরমধ্যে এক ছেলে হেলাল ৭০ বছর বয়সে মারা যান। তবে রয়েছে ২ ছেলে। আরেক ছেলে দুলাল জীবিত। তার রয়েছে ২ ছেলে। মোজাহার আলী তালুকদারের এসব নাতীদের বয়সও এখন প্রায় পঞ্চাশের অধিক। তবে এখনও কোন ছেলেকে বা নাতীদের জায়গা-জমি লিখে দেননি। তার ধারনা মৃত্যুর পর অটোমেটিক তারা এসব সম্পত্তির মালিকানা হবে।
তবে মৃত্যুর পর মেয়েদেরকে যদি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে, সেজন্য তিনি ৪ মেয়েকে অংশীদার হিসেবে প্রাপ্য জমি লিখে দিয়েছেন। বাকি জমিগুলো মোজাহার আলী তালুকদারের ছেলে ও নাতীরা ভোগ দখল করে আসছে। তার আশাছিল, এতো জায়গা-জমি তিনি ছেলে মেয়ে নাতী নাতনীর জন্য রেখেছেন। তাতে করে জীবদ্দশায় তার কোন অভাব বা অবহেলা করার মত কোন মানুষ থাকবেনা। আর এতোবড় সংসারে সবাই প্রিয়জন। সবাই তার জমি থেকেই ফসলাদী নিয়ে শুধু জীবন ধারনই করছে না, জীবনের সকল সুখ শান্তিও ভোগ করে।
তাই কোনকিছুতে কমতি বা অভাব থাকবেনা। সেটা হোক ভালবাসা কিংবা অর্থনৈতিক। এছাড়াও অর্থ প্রতিপত্তি সব কিছুই তারটাই ভোগ করে নাতী নাতনীরাও অঢেল সুখের সাগরে দিনাতিপাত করছে। কিন্তু বিধির লিখন, না যায় খন্ডন। বয়সের ভাড়ে শরীর নুয়ে পড়া বৃদ্ধ মোজাহার আলী তালুকদারের স্ত্রী মারাগেছে বছর ছ’য়েক আগে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তার নিঃসংগতা সীমাহীন। তার প্রয়োজনে কেউ পাশে আসে না। অসুখে- বিসুখে কখনও জানতে চায়না কি প্রয়োজন আর কোনটা অপ্রয়োজন।
কোন খাবার, পোশাক, বিছানা-চাদর তার পছন্দ-অপছন্দ। শরীরটাও কখনও কেউ পরিষ্কার করে গোসল করিয়ে দেয়না। ফলে অবহেলা অনাদরে চোখের জলে দিন কাটে মোজাহার আলী তালুকদারের। জীবনের এ প্রান্তে দাড়িয়ে নীরবে নিভৃতে তাই চোখের পানি ফেলে। কিন্তু তার এ আশা পুরনের কেউ নেই। তাই অনাকাংখিত হলেও তার প্রত্যাশা. এ বয়সে যদি সে একটা স্ত্রী পেতো, তাহলে মনের কথাগুলো শেয়ার করে ভালো লাগা, না লাগা, অসুখে-বিসুখে, প্রয়োজন, অপ্রয়োজন, সর্বপোরী মনের দুঃখ কষ্ট ও বেদনা বোঝার মত একজন মানুষ পাওয়া যেতো। আর যুবতী মেয়েকে বিয়ে করার পিছনে বৃদ্ধ মোজাহার আলী তালুকদারের ধারনা বা কারন হিসেবে জানিয়েছেন, মৃত্যুর পর যে সম্পত্তি স্ত্রী হিসেবে মেয়েটি পাবে, সেটা দিয়ে সে আবার একটা সুখের সংসার গড়ে নিতে পারবে। কিন্তু বৃদ্ধ মহিলাকে বিয়ে করলে সে হয়তো এখনই সম্পত্তির ভাগ চাইবে। ফলে তার আশা পুরণ না ও হতে পারে।
