সপুষ্পক উদ্ভিদ শ্রেণীর এই সোনালু একটি পত্র ঝরা বৃক্ষ।শীতকালে সোনালু গাছের সকল পাতা ঝরে যায়, তখন গাছগুলোকে দেখতে নির্জীব মনে হয়।বসন্তে নতুন পাতা গজালে গাছগুলো যেন আবার প্রাণ ফিরে পায়।গ্রীষ্মে সোনালু গাছের শাখা প্রশাখায় লম্বা মঞ্জুরিতে ঝুলতে থাকে প্রস্ফুটিত কাচা হলুদ বা সোনালী রঙের ফুল।যা প্রকৃতি প্রেমী, শিশু কিশোরসহ নানা বয়সী লোকেদের বিমোহিত করে।আকৃষ্ট করে প্রজাতি,ভ্রমর আর মধুপ্রিয় বিভিন্ন প্রজাতির পতঙ্গকে।ভ্রমর আর প্রজাপতিরা উড়ে বেড়ায় সোনালুর হলুদ ফুলের এক পাপড়ি থেকে আরেক পাপড়িতে।শিশু,কিশোররা সোনালু ফুল দিয়ে তাদের খেলা ঘর সাজিয়ে খেলতে ভীষণ পছন্দ করে।কিশোরীরা তাদের চুলের খোপায় বেণীতে সোনালু ফুল গেথে চুলের শুভা বাড়ায়।গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই দেখা নেলে প্রস্ফুটিত সোনালু গাছের। রাস্তার ধারে, কারো বাড়ির আঙ্গিনায়, ছোট ছোট ঝুপের মধ্যে সকলের অজান্তেই অযত্নে বেড়ে উঠে সোনালু গাছ। সোনালু গাছ যেমন প্রকৃতির শোভা বৃদ্ধি করে তেমনি সোনালু গাছের বাকল ও পাতায় রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন।বিশেষ করে ডায়রিয়া, পেটের পিড়া সারাতে সোনালু গাছের কচি পাতার রস ব্যবহার করা হয় তাছাড়াও ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় সোনালু গাছের ফলমজ্জা, পাতা ও বাকল ব্যবহার হয়ে থাকে।
উদ্ভিদ জগতের শ্রেণি বিন্যাসে সোনালুকে Fabaceae গোত্রের বৃক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।স্থানীয় বা পরিচিত নাম সোনালু।অঞ্চলভেদে এর আরো বিচিত্র রকমের নাম রয়েছে।যেমন-বাদর লাঠি, জাঠিমল,রাখালনড়ী, সোদাল,কানাইনড়ি ইত্যাদি।কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছেন অমলতাস,হিন্দী ভাষাতেও অমলতাস বলে।আর সংস্কৃত শব্দে সোনালুকে হেমপুষ্প,স্বর্ণাঙ্গ, চতুরঙ্গুল ,দীর্ঘফল,কৃতমালক, আরোগ্যশিম্বী প্রভৃতি নামে ডাকা হয়।সোনালুকে ইংরেজিতে বলা হয় Golden shower বা Golden shower tree, purging cassia, pudding pipe tree নামেও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। যার বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া ফিস্টুলা(Cassia fistula)।
মাঝারি আকারের এই পর্নমোচী সোনালু গাছ সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিটার উচু হয়ে থাকে।এর কান্ড সোজা সরু হয়ে উপর দিকে উঠে যায়।এর কাঠ মাঝারি শক্ত।৩-৪ জুড়া পাতা পত্র শিরা ও মধ্য শিরা থাকে।ফুল ফুটে,ফুল থেকে ফল হয়।ফল গোলাকার ও দেড় দুই ফুট লম্বা হয়।
সোনালু বৃক্ষের আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল হলেও বাংলাদেশ,ভারত,মায়ানমার, পাকিস্তানসহ, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুন্সল্যান্ডের ঊষ্ণ অঞ্চলে সোনালী উদ্ভিদের প্রচুর দেখা মেলে।তাছাড়া বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সড়ক মহাসড়কের পাশে বা পার্কে শুভা বর্ধনের জন্য রোপণ করা হয়ে থাকে।