ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মানুষকে দূরে রাখার জন্য মাদারীপুরে শত বছরের একটি বটগাছ কেটে ফেলেছেন স্থানীয় কয়েকজন আলেম।
সোমবার (৫ মে) আড়িয়াল খাঁ নদের পাশে চরঘুনসি এলাকার ‘আলম মীরার কান্দি’ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গাছটি কাটা নিয়ে এলাকায় তৈরি হয়েছে কৌতূহল ও বিতর্ক।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকার কিছু নারী ও পুরুষ মুসল্লি মানত করার উদ্দেশ্যে গাছটির গোড়ায় মোমবাতি, আগরবাতি, নতুন গামছা, কাপড় ও মিষ্টি দিয়ে আসছিলেন। তাদের বিশ্বাস ছিল— এখানে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়।
এমন কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে স্থানীয় আলেম সমাজের। তারা এসব কর্মকাণ্ডকে ইসলামি বিশ্বাস পরিপন্থি ‘শিরক’ দাবি করে গাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এরপরই সোমবার দুপুরে করাত মেশিন দিয়ে শতবর্ষী বটগাছটি কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুরানো গাছটি দেখার জন্য আশপাশের এলাকার মানুষজন ভিড় করতে থাকেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চরঘুনসি এলাকার বাসিন্দা আব্দুর সাত্তার হাওলাদারের মালিকানাধীন গাছটি মাত্র দেড় হাজার টাকায় স্থানীয় আলেমরা কিনে নেন এবং পরে কেটে ফেলেন। তবে এ বিষয়ে সাত্তার হাওলাদারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনাটি তদন্তে মাঠে নেমেছে প্রশাসন ও বন বিভাগ। মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘পুরানো গাছ কাটার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এটি পরিকল্পিতভাবে কেউ ঘটিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় আলেম সমাজ মুখ না খুললেও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস-এর মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা হাবিব আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, ‘বটগাছের গোড়ায় এমন কর্মকাণ্ড ইসলাম সমর্থন করে না। যারা এগুলো করে, তারা প্রকৃত ধর্মে বিশ্বাস করে না। তাই গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে।’
তবে স্থানীয় শিরখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. বাবুল হোসেন বলেন, ‘গাছটি কেটে না ফেলে মানুষকে বোঝানো উচিত ছিল। কারণ গাছ পরিবেশের জন্য উপকারী। শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।’