মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী : নোয়াখালীতে টানা দুই সপ্তাহের বন্যায় মানুষের ঘরবাড়িসহ জীবনজীবিকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত ৬দিনে জেলার প্রধান ও শাখা সড়কসহ উচ্চু জায়গাগুলোর বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে ভোগান্তিতে রয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এই বানভাসি মানুষজন যখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে নিজ নিজ বাড়িঘর ও জীবনজীবিকার মাধ্যমগুলো গুছিয়ে নিতে শুরু করছেন, ঠিক সেই মুহুত্বে তীব্র গরমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সীমাহীন লোডশেডিং। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি বিপাকে পড়েছে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা।
গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ঘন ঘন লোডশেডিংয় শুরু হয়ে রোববার দিনভর লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে বন্যাকবলিত এলাকা নোয়াখালীর মানুষ। জেলার বানভাসি মানুষের অভিযোগ, বন্যায় সব ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশুর খামার ও মৎস্য ঘের পুনঃপ্রস্তুত করা লাগছে। এতে বেশিরভাগ কাজেই বিদ্যুতের ব্যবহার
প্রয়োজন। কিন্ত দেখা গেছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবনে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে নষ্ট হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত জিনিসপত্র ও কল কারখানার মেশিন।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম পাওয়ায় লোডশেডিং অনেকটা বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে লোডশেডিং সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
জানা গেছে, জেলার পৌর এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সে হিসাবে জেলায় পিডিবির গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার, যার জন্য বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩৪ মেগাওয়াট।
দিনে-রাতে মিলে প্রায় ১২ ঘণ্টার বেশি হচ্ছে লোডশেডিং। প্রতি দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর হচ্ছে এক থেকে দেড় ঘণ্টার লোডশেডিং। একই অবস্থা পল্লী বিদ্যুতেরও, শহরমুখী এলাকাগুলোতে লোডশেডিং কিছুটা কম হলেও ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যন্ত অঞ্চলের। যেখানে ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পান না গ্রাহকরা।
জেলা শহরের হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মো. একরাম হোসেন হৃদয় বলেন, রোববার সারাদিন লোডশেডিং ছিল। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ৩ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ পেয়েছি ২০ মিনিট। ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা আর গর্ভবর্তী স্ত্রী, এত অসহ্য গরম আর লোডশেডিং মিলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।
বেগমগঞ্জের বাসিন্দা হারুনুর রশিদ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। কিছু মানুষ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে আবার কিছু
মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছে। কিন্তু লোডশেডিং এত বেশি যা বলে বুঝানো যাবে না। শিশু, বৃদ্ধ সবাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। বন্যা পরবর্তী এখন মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না।
সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের মধ্যম চর উরিয়ার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন মঞ্জু বলেন, এলাকায় বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে অনেক খামারি খামারে মুরগির বাচ্চা তুলেছে। কিন্তু অতিমাত্রায় লোডশেডিং হওয়ায় মুরগির বাচ্চাগুলো সঠিকভাবে বেড়ে ওঠছে না, আমার অতিরিক্ত গরমে বাচ্চা মারাও যাচ্ছে।
নোয়াখালী পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল বাহার বলেন, আমাদের ৭৮ হাজার গ্রাহকের জন্য পাচ্ছি মাত্র ১৭ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। যেখানে আমাদের চাহিদা রয়েছে ৩৪ মেগাওয়াট। তার ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে হাসপাতাল। সেগুলো কাভার করে যা পারছি তা শিডিউল অনুযায়ী কাভার করছি। মূলত চাহিদার চেয়ে কম হওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের চাহিদার ৬০
শতাংশ লোড পাচ্ছি। এই ৬০ শতাংশ লোড শিডিউল অনুযায়ী বন্ঠন করা হচ্ছে। যার কারণে ৪০ শতাংশ লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :