শিরোনাম
◈ দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে চারজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৪৭ ◈ ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ঢাবি উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃতের প্রতিবাদ ◈ পাকিস্তানে ‘র’-এর নেটওয়ার্ক ভেঙে দিল সিটিডি: ছয়জন গ্রেপ্তার, অর্থায়নের প্রমাণ মিলেছে ◈ প্রায় ৭ লাখ মানুষের চিকিৎসায় মাত্র ১৩ জন চিকিৎসক, বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট ও নানা অনিয়ম, ভোগান্তিতে রোগীরা ◈ ইটনায় ইউএনও বাসভবনে হামলা মামলায় ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার ◈ ব্যাটিং-‌বো‌লিং‌য়ে ব্যর্থ সাকিব আল হাসান, হারলো তার দল অ্যান্টিগা ◈ ফলের স্বাদ কেমন- আমার ছেলেটা জানে না, গাজার দুর্ভিক্ষ বর্ণনা করেছেন এক মা ◈ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন, মেলেনি আঘাতের চিহ্ন ◈ সাবেক সমন্বয়ক চাকরি হারালেন ছাত্রীদের ‘কুপ্রস্তাব’ দেওয়ার অভিযোগে ◈ কোনো ষড়যন্ত্র নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ১১:২৬ দুপুর
আপডেট : ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন: হাতি রক্ষায় ৪০ কোটি টাকার প্রকল্প, বসছে রোবটিক ক্যামেরা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের হাতি চলাচলের করিডোরগুলোতে সেন্সরযুক্ত রোবটিক ক্যামেরা বসাতে যাচ্ছে রেলওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

হাতি চলাচলের ছয়টি করিডোরে বসানো হবে ছয়টি ক্যামেরা। এই রোবটিক ক্যামেরায় থাকবে বিশেষ ধরনের সেন্সর। যেটা হাতির অবয়ব শনাক্ত করতেও সক্ষম। যদি কোনো হাতি হঠাৎ রেললাইনে উঠে আসে, তাহলে ক্যামেরাটি তা শনাক্ত করে দ্রুত সংকেত পাঠাবে। এই সংকেত পেয়ে রেললাইনের পাশ ঘেঁষে থাকা লাল বাতিগুলো জ্বলে উঠবে। আর এই লালবাতি দেখেই দূর থেকে ট্রেনচালক বুঝতে পারবেন, সামনে রেললাইনে হাতি উঠে পড়েছে। এ সময় চালক ট্রেনের গতি কমিয়ে কিংবা প্রয়োজনে ট্রেন থামিয়ে সেই হাতিকে কিংবা হাতির পালকে নিরাপদে রেললাইন পার হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারবেন। এতে বেঁচে যাবে হাতি। কমবে দুর্ঘটনাও। প্রকল্পটি কক্সবাজার রেললাইনে হাতি রক্ষায় দেখাচ্ছে আশার আলো।

সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে গেছে কক্সবাজার রেললাইন। বিশেষ করে, হাতি চলাচলের করিডোর দিয়ে যাওয়া এই রেললাইনে হাতি চলাচলের করিডোরগুলোকে নির্বিঘ্ন করতে নির্মাণ করা হয় ওভারপাস ও আন্ডারপাস। এর পরও দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণও যাচ্ছে হাতির। হাতির অবাধ বিচরণভূমি যখন বাধার মুখে পড়ে, তখন এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই হাতি রক্ষায় সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের যেসব পয়েন্ট দিয়ে হাতি চলাচল করে থাকে, সেসব পয়েন্টে বসানো হবে এসব ক্যামেরা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলতি বছরের মধ্যেই হাতি চলাচলের করিডোরগুলোতে ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ছয়টি ক্যামেরা সংগ্রহের পাশাপাশি সংকেত দেওয়ার লালবাতি স্থাপন, ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতিসহ আনুষঙ্গিক কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ট্রেনের চালক ও গার্ডদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে এক দফা প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ সম্পন্নও হয়েছে।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পর ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে এই রেললাইন দিয়ে চার জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনটি ১০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে ২৭ কিলোমিটার রেললাইন গেছে সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে। লোহাগাড়ার চুনতি, ফাঁসিয়াখালী ও মেধাকচ্ছপিয়া বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এসব এলাকায় রয়েছে হাতি চলাচলের করিডোর। 

গত বছরের ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের হাতি পারাপারের ওভারপাসের উত্তর পাশে রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায় একটি হস্তিশাবক। এ ছাড়া গত ২২ জুলাই চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকায় রেললাইনে উঠে পড়ে হাতির পাল। ট্রেনচালক দূর থেকে হাতিটিকে দেখতে পেয়ে ব্রেক চেপে ট্রেন থামান। তবে এ সময় একটি হাতি অতর্কিত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনকে ধাক্কা দিলে আহত হয়।

কক্সবাজার রেললাইনে শুধু হাতিই নয়, প্রায় সময় মারা যাচ্ছে মানুষও। এই রেললাইনের অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো রীতিমতো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ২ আগস্ট কক্সবাজারের রামুতে এমন একটি অরক্ষিত ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাঁচ যাত্রী নিহত হন। রেললাইন চালু হয়েছে দুই বছরও হয়নি। এরই মধ্যে মারা গেছেন অন্তত ৩০ জন। শুধু চলতি বছরের ২ আগস্ট পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ জন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, রেললাইনের ৭২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৫৬টিতে কোনো গেটম্যান নেই। নেই কোনো ব্যারিয়ার। বরাবরই লোকবল সংকটের কথা বলছে রেলওয়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাপক সমালোচনার মুখে রেলওয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হাতি রক্ষায় আশার আলো দেখালেও মানুষ রক্ষায় তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। কিছু সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায় সারছে রেলওয়ে। যেখানে লেখা থাকছে, ‘সাবধান, সামনে রেললাইন’ কিংবা ‘সাবধান! এই গেটে কোনো গেটম্যান নাই। পথচারী ও সকল প্রকার যানবাহন নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন। যে কোন দুর্ঘটনার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকিবে না।’ 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন বলেন, কক্সবাজার রেললাইনে হাতি চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। বনাঞ্চলে কমানো হয়েছে ট্রেনের গতি। এরপরও মাঝেমধ্যে হাতি এসব ওভারপাস ও আন্ডারপাস ব্যবহার না করে রেললাইনে উঠে পড়ছে। তাই এবার আমরা হাতি চলাচলের পথকে আরও নিরাপদ ও নিষ্কণ্টক করতে প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা সেন্সরযুক্ত এমন কিছু রোবটিক ক্যামেরা সংগ্রহ করছি, যেগুলো হাতির অবয়ব শনাক্ত করতে পারবে। চলতি বছরের মধ্যেই হাতি চলাচলের করিডোরগুলোকে আমরা এই ধরনের ক্যামেরার আওতায় আনতে চাই।

তিনি আরও বলেন, রেলওয়েতে লোকবল সংকট একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যার কারণে অনেক লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান দেওয়া যাচ্ছে না। সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়