অপূর্ব চৌধুরী: [২] রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় বাংলাবাজার মোড়ে অবস্থিত ফুটওভার ব্রিজটি অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম ফুটওভার ব্রিজ। মানুষের পারাপারে সুবিধার জন্য প্রায় ২৭ বছর পূর্বে ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। গঠনগত কারণে শুরু থেকেই এই ব্রিজে উঠার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অনীহা ছিল।
[৩] কালের বিবর্তনে এই ফুটওভার ব্রিজটি যেন সাক্ষী গোপালে পরিণত হয়েছে। দিনের বেলায় কেউ রাস্তা পারাপারে বিশাল এই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করলেও রাতে এটি মাদকাসক্তদের জন্য নিরাপদ আখড়াতে পরিণত হয়।
[৪] জানা যায়, বাংলাবাজার মোড় ব্যস্ত সড়ক হওয়ায় পথচারীদের পারাপারের সুবিধার্থে ১৯৯৬ সালে এই ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করেছিল তৎকালীন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি)। নির্মাণের পর থেকেই এটির তেমন ব্যবহার হয় নি। মানুষ একেবারেই ব্রিজটিতে না উঠায় এটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। ফলে ভবঘুরেদের দখলে যাওয়া ও চুরি-ছিনতাই ও মাদক সেবন’সহ নানা অপকর্মের কারণে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া মানুষের মল-মূত্রেও সয়লাব হয়ে থাকে ব্রিজটি। যাতে ছড়ায় প্রকট দুর্গন্ধ।
[৫] সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাবাজার মোড়ের ফুটওভার ব্রিজের চারটি প্রবেশপথ রয়েছে। চারটি প্রবেশপথই ভাসমান দোকানি ও হকারদের দখলে। ফলে নতুন কারও জন্য ব্রিজে ওঠার পথ খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। ব্রিজটির দক্ষিণ-পূর্ব সিঁড়ির মুখে রয়েছে পুরনো বইয়ের দোকান, দক্ষিণ-পশ্চিম সিঁড়ির মুখে চা-নাশতার দোকান। উত্তর-পূর্ব সিঁড়ির মুখে চা-দোকান এবং উত্তর-পশ্চিম সিঁড়ির মুখে জুতা, স্যান্ডেল, রকমারি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। পাশেই সড়কের ওপরে রাখা হয়েছে ময়লার বিশাল কনটেইনার।
[৬] ব্রিজের উপর পড়ে আছে মাদকাসক্তদের ব্যবহার করা অসংখ্য সিরিঞ্জ, ড্যান্ডির পলিথিন, সিগারেটের প্যাকেট, পরিত্যাক্ত গ্যাস লাইট এবং আবাসিক হোটেলের ভিজিটিং কার্ড’সহ নানান অপরিচ্ছন্ন জিনিস। আবার ব্রিজের উপর দিয়ে নেওয়া হয়েছে ডিশ ও ইন্টারনেটের অসংখ্য ক্যাবল। এসব ক্যাবল ব্রিজ থেকে সামান্য একটু উপর দিয়ে টানা হয়েছে, যার ফলে একজন মানুষের পক্ষে ব্রিজের উপর দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে পার হওয়া সম্ভব হয়না।
[৭] পুরান ঢাকার চিত্তরঞ্জন এভিনিউ, বাংলাবাজার, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও ইসলামপুর রোডের সংযোগস্থল গুরুত্বপূর্ণ মোড়টিতে বানানো হয়েছিল ব্রিজটি। ব্রিজের আশেপাশে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার প্রধান ডাক অফিস, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়’সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ এই এলাকায় যাতায়াত করলেও এই ব্রিজটি ব্যবহারে কারোরই আগ্রহ নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হন পথচারীরা।
[৮] স্থানীয়দের দাবি, রাতের বেলায় থাকে ভবঘুরেদের দখলে থাকে ব্রিজ। আশেপাশের ব্যবসায়ীরাও মল-মূত্রত্যাগের প্রয়োজনেই ব্রিজটি ব্যবহার করেন। ড্যান্ডিখোরদের আরামের জায়গা এটি। ব্রিজের নিচে পুলিশ বক্স থাকলেও পুলিশ সদস্যদের কোন তৎপরতা দেখা যায়না। আসলে ব্রিজটির আকৃতি স্বাভাবিক ব্রিজের চেয়ে অনেক বড় হওয়ায় এত সিঁড়ি বেয়ে কেউ উঠেনা। ফলে নাগরিকদের সুবিধার বদলে ব্রিজটি এখন বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে।
[৯] ব্রিজের একটি প্রবেশমুখের পাশে ১৫ বছর ধরে চা বিক্রি করেন মো. আফজাল। তিনি বলেন,আমি কখনো দেখিনি ব্রিজে লোকজন উঠতে। ব্রিজে রাতে ড্যান্ডিখোরদের আনাগোনা বেড়ে যায়। বাধ্য হয়েই সন্ধ্যার পর আমি দোকান বন্ধ করে দেই।
[১০] এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৭নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজী আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, এই ফুটওভার ব্রিজটি লোকজনের কোন কাজে আসেনা। বরং একটি বাজে আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হবে। মেয়র মহোদয় মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন ভেঙে ফেলার জন্য।
প্রতিনিধি/একে