সুজিৎ নন্দী: ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবছর ডেঙ্গু ভয়াবহ রুপ নিতে পারে। তাই বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই আমরা বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সচেতন করা সহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসছি। তবে অতীতের সাথে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে এবছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেকটা কম।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে এখন পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায়ও আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক কম। ডেঙ্গু পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করাই আমাদের লক্ষ্য।
মেয়র বলেন, দশটি অঞ্চলে দশটি টিম এই অভিযান পরিচালনা করবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। এডিসের লার্ভা পেলেই নেয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।
শনিবার উত্তরায় ৫০নং ওয়ার্ডের আওতাধীন দক্ষিণখানে মধ্য আজমপুর এলাকায় এডিস মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে এ কথা বলেন। নিকুঞ্জ এলাকায় অভিযানকালে দুটি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। নিকুঞ্জ-১ এলাকায় বাড়ি দুটির মালিক বিদেশে অবস্থান করায় খিলক্ষেত থানায় দুটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।
বাসা-বাড়ি-অফিসে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আইন অনুযায়ী নিয়মিত মামলা হবে। কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনার বাড়ি বা স্থাপনার ভেতরে, বাইরে, আশপাশে কোথাও পানি জমে থাকলে এক্ষুনি ফেলে দিন। ডেঙ্গু থেকে আপনি সুরক্ষিত থাকুন আপনার পরিবারকে ও প্রতিবেশীকে সুরক্ষিত রাখুন। বাড়িতে লার্ভার চাষ করে শাস্তি না পেয়ে বরং লার্ভার উৎস ধ্বংস করে পুরস্কৃত হোন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ৫০নং ওয়ার্ডের দক্ষিণখানের মধ্য আজমপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছে। মেয়র আতিকুল ইসলাম সরেজমিনে এলাকাটি পরিদর্শন করেন। দেখা গেছে এই এলাকায় অনেকগুলো ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে আছে। একটিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।
এসময় নির্মাণাধীন ভবনটিতে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
নগরবাসীর উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, শুধু সিটি করপোরেশনের পক্ষে পুরোপুরিভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা অতি গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের আন্তরিক সহযোগিতায় গত ঈদে মাত্র ১২ঘন্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। জনগণের সহযোগিতা পেলে আমরা ডেঙ্গুও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো। নিজেদের বাসাবাড়িতে ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার, ডাবের খোসা, চিপসের খোলা প্যাকেট, বিভিন্ন ধরনের খোলা পাত্র, ছাদ কিংবা অন্য কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
সুস্থতার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে মেয়র বলেন, সুস্থতার জন্য সুস্থ পরিবেশের কোনো বিকল্প নেই। আর সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম-সংক্রান্ত সামাজিক আন্দোলনে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
প্রচারাভিযানে মেয়র আতিকুল ইসলাম আজমপুর ও নিকুঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে জনসাধারণকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন এবং নিজে মাইকিং করে সচেতন করেন।
অন্যান্যের মধ্যে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জেনারেল জোবায়দুর রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসহাক মিয়া, ৫০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডি.এম.শামিম, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী ও জাকিয়া সুলতানা এবং নিকুঞ্জ-১ কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
