মহসিন কবির: শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থনৈতিক অবস্থা ছিলো ভঙ্গুর। রিজার্ভ ছিলো তলানিতে। এমন অবস্থায় দেশকে যখন টেনে তোলা হচ্ছে ঠিক তখন বিভিন্ন দাবির চাপে ম্লান হচ্ছে অর্জন। প্রতিনিয়ত দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছে কোন না কোন সংগঠন।
দাবি আদায়ে মুখে স্লোগান আর হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাজধানীর ব্যস্ততম রাজপথ, গুরুত্বপূর্ণ স্থান-স্থাপনা দখল-অবরোধ করে চলছে একের পর এক আন্দোলন। কখনও চলছে কলম বিরতি; কখনও-বা কর্মস্থলে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে পথে পথে বিক্ষোভ। আর এসব কর্মসূচির কারণে প্রায় প্রতিদিনই অচল হয়ে পড়ছে রাজধানী; ভীষণ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।
গতকাল রোববার ছিল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। এদিনও রাজধানীর ব্যস্ততম শাহবাগ মোড়, মতিঝিলসহ অন্তত ৭টি স্থানে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে রাস্তায় নামেন আন্দোলনকারীরা। সঙ্গত কারণেই জনমনে প্রশ্ন জেগেছে- একের পর এক দাবির এই যে জট, এ জট শেষ হবে কবে? কবে দুঃসহ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে রাজধানীবাসীর?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল রবিবার বিকাল পৌনে ৪টা থেকে প্রায় সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় নেতাকর্মীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তারা অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তে গাফিলতি হচ্ছে এবং মূল হত্যাকারীকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গতকাল টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে তার সমর্থকরা। তারা নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা মেরে ডিএসসিসির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। নগর ভবনে থাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার অফিসও বন্ধ। ফলে সেবা প্রত্যাশীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, আমরা অফিসে যেতে পারছি না। কোনো কাজই হচ্ছে না। এদিকে নগর ভবন ও আশপাশের এলাকায় আজ ব্লকেডের ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক-সমর্থকরা।
ঢাকার সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল রবিবার দুপুরে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাশফিক ইসলাম বলেন, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দেওয়া-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদনের আজ শুনানি ছিল। আশা ছিল, আদেশটি বাতিল করা হবে। কিন্তু হাইকোর্টের রায়টি স্থগিত থাকলেও চূড়ান্ত আদেশ আসেনি। পরে আবার শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এতে হতাশ হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
মাশফিক ইসলাম আরও বলেন, পদোন্নতির আদেশ বাতিল করার পাশাপাশি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম চালু করা উচিত। পলিটেকনিকে এখন শিক্ষক সংকট রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে অতিথি শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, আলোচনা করে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবিতে রাজধানীর মতিঝিলে কফিন মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চেয়ারম্যানের অপসারণ নয়তো আরও কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে দেশের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনসহ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে গায়েবানা জানাজা ও প্রতীকী কফিন মিছিলও হয়। মিছিলটি
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু হয়ে ইত্তেফাক মোড় ঘুরে ডিএসই ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর বিনিয়োগকারীরা সেখানে রাস্তা অবরোধ করলে প্রায় ২০ মিনিট যান চলাচল বন্ধ থাকে। মিছিল শেষে বিকাল পৌনে ৪টায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নামাঙ্কিত কফিন নিয়ে প্রতীকী গায়েবানা জানাজা আদায় করেন বিনিয়োগকারীরা।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ঘেরাও করেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে অবস্থিত মাউশির সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। শিক্ষকদের দাবি, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে। সব বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের ঘোষণা দিতে হবে। এ ছাড়া আর্থিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সব বৈষম্য ঘুচিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।