ইমরুল শাহেদ: আশায় আশায় সময় অতিবাহিত হচ্ছে চিত্রকর্মীদের। এই বুঝি চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসবে। অনেকের ধারণা ছিল এই বছরের শুরুর দিকে পরিস্থিতি চলচ্চিত্রের অনুকূলে আসবে। কিন্তু কোনো ছবিই প্রদর্শক ও দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। ‘মৃধা বনাম মৃধা’ বা ‘ছিট মহল’ প্রদর্শক বা দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। সম্ভাবনাময় ছবিগুলোর মুক্তি পিছিয়ে যাচ্ছে। ‘মুখোশ’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ১৪ জানুয়ারি, সেটা বাতিল হয়ে গেছে। ২১ জানুয়ারি তিনটি ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ‘অবাস্তব ভালোবাসা’।
পরিচালক কাজল বর্মণের সঙ্গে ছবিটি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২০১৬ সালে চলচ্চিত্রের জগত ছেড়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। সেখানে বাড়ির সামনে একটি কনফেকশনারির দোকান দিয়েছেন। তা দিয়েই তার সংসার চলে। এভাবেই বদলে যাচ্ছে চলচ্চিত্রের অন্দর মহল। সরকারি অনুদান বা বেসরকারি লগ্নী - কোনোটাই চলচ্চিত্র নির্মাণের গতি ফিরিয়ে আনতে পারছে না। নির্মাতারা আস্থা স্থাপন করতে পারছে না, যে অর্থ লগ্নী হবে সে অর্থ আদৌ ফিরে আসবে কিনা। সিনেমা হলের উপরও নির্মাতারা আস্থা রাখতে পারছেন না। কারণ সিনেমা হলে দর্শক সমাগম এখনো তেমন একটা জমে উঠেনি। আদৌ কি হবে সেটা তারা উপলব্ধি করতে পারছেন না। কোটি টাকা দিয়ে ছবি বানিয়ে লোকসান গুণতে কেউ চাইছেন না। এখন বেশির ভাগ নির্মাতা কাজল বর্মণের মতো বিকল্প পথ খুঁজে নিচ্ছেন। অনেক নির্মাতারই রয়েছে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল। সংশ্লিষ্টরা নিজের চ্যানেলের জন্য কনটেন্ট তৈরি করতে শুরু করেছেন। কেউ নির্মাণ করছেন মিউজিক ভিডিও, কেউ খণ্ড নাটক, কেউ রম্য কনটেন্ট তৈরি করছেন। তাদের উদ্দেশ্য এখন সিনেমা হল থেকে পাওয়া শেয়ারের অর্থ নয়। তারা চান ভিউজ।
পরিচালক সমিতির একজন সদস্য জানালেন, তিনি নিজেই চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন। কিন্তু কোনো ছবিই তিনি ব্যবসা সফল করতে পারেননি। এজন্য তার হাতে থাকা ছবিগুলো নিয়ে তিনি একটি ইউটিউব চ্যানেল করেছেন। বললেন, সেখান থেকে তার এখন প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়।
পরিচালক দেওয়ান নাজমুল ‘উনিশ কুঁড়ি’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। সেটির জন্য এখন কনটেন্ট তৈরি করছেন তিনি। কোনো কোনো নির্মাতা ইতোমধ্যেই নিজস্ব অ্যাপস চালু করেছেন। বর্তমানে চলচ্চিত্রে লগ্নী করা সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া শুরু করেছে ‘সিনেবাজ’ নামে একটি অ্যাপস। অনন্য মামুন আগেই শুরু করেছেন ‘আইথিয়েটার’ নামে একটি অ্যাপস। এভাবেই বদলাতে শুরু করেছে চলচ্চিত্রশিল্পের অন্দর মহল।