ড. মোহাম্মদ আখেরুজ্জামান, টোকিও, জাপান: গবেষক (Researcher) ভিসায় যে সকল বিদেশী জাপানে বসবাস করে তারা বেশীর ভাগই একটা নিদিষ্ট সময়ের জন্য জাপানে আসে কোন বিশেষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকেন। বিশেষ করে জাপানে কোন বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী/ বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয়/আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কোন বিষয়ের উপরে গবেষণা করে থাকেন। অনেক সময় আবার অনেক বিদেশী গবেষণার কাজ করে ইনঞ্জিনিয়ার/আন্তর্জাতিক ব্যবসা (Engineer/ Specialist in Humanities/ International Services) ভিসাও হয়ে থাকে। তবে গবেষণা ভিসার ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি দিক আছে যা বিশেষ ভাবে মেনে চলে জাপানের ইমিগ্রেশনে অথরিটি। এই ভিসা ৫ বছর, ৩ বছর, ১ বছর আবার ক্ষেত্র বিশেষে ৬ মাস কিংবা ৩মাসেরও হয়ে থাকে। সাধারণত ভিসার মেয়াদ কাল নির্ভর করে আপনার চুক্তি পত্রের মেয়াদ কাল কিংবা ধরণের উপর ভিত্তি করে।
গবেষক ভিসার জন্য বিশেষ ভাবে ২টি বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অন্যটি হচ্ছে বেতন ও অন্য সুবিদধা গুলো জাপানিজ কর্মকর্তার সমান হতে হবে।
প্রথমত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার আবার ৪টি বিষয় বিশেষ ভাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
১। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে উচ্চতর ডিগ্রীর গবেষণার বিষয় এবং জাপানের যে প্রতিষ্ঠানে তিনি গবেষক হিসেবে ভিসার জন্য আবেদন করবেন তার বিষয়ের সাথে মিল থাকতে হবে।
২। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে কমপক্ষে ৩বছর গবেষণা কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং জাপানের যে প্রতিষ্ঠানে গবেষক ভিসার জন্য আবেদন করবেন তার সাথে মিল থাকতে হবে। (বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গবেসষণার সময়ও যুক্ত করা যাবে)
৩। জাপানের যেই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভিসার জন্য আবেদন করবেন একই ধরণের গবেষণার উপর কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। (বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গবেসষণার সময়ও যুক্ত করা যাবে)
৪। বিদেশের গবেষণা প্রতিসষ্ঠান থেকে বদলি অথবা স্থান পরিবর্তনের জন্যও এই ভিসা পেতে পারে।
তবে এই গবেষক ভিসার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪বছরের বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কোর্স শেষ করা থাকতে হবে। ডিপ্লোমা ডিগ্রী নিয়ে এই গবেষণা ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে না।
অনেক সময় গবেষক ভিসার জন্য আবেদন করার পরেও ইনঞ্জিনিয়ার/আন্তর্জাতিক ব্যবসা (Engineer/ Specialist in Humanities/ International Services) ভিসা হতে পরে। এই ভিসা প্রাপ্ত বিদেশীরা জাপান অথবা জাপানের বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন বিশেষ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে কোন সরকারী অথবা বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করে তাদের এই গবেষক ভিসা দেয়া হয়।
যদি কেউ জাপানে এই গবেষক (Researcher) ভিসার জন্য আবেদন করতে চান তাহলে প্রথমেই আপনাকে জাপানের সরকারী কিংবা বেসরকারী কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কোম্পানি থেকে স্থায়ী অথবা খণ্ডকালীন কাজের (চাকুরীর) জন্য নিয়োগ পেতে হবে। আপনি যেই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগ পত্র পাবেন সেই প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত প্রাতিষ্ঠানিক কাগজ পত্র, আপনার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সকল কাগজ পত্র সহ জাপানের ইমিগ্রেশন এবং স্থানীয় দুতাবাসে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনার এবং আপনাকে নিয়োগ দেয়া প্রতিষ্ঠানের কাগজ পত্রে কোন ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্য না থাকলে আপনি গবেষক (Researcher) ভিসা পেয়ে যাবেন।
এই ভিসার ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে নিয়োগ দেয়া প্রতিষ্ঠান আপনার জন্য জাপানের ইমিগ্রেশনে COE(Certificate of Eligibility)এর আবেদন করবেন এবং সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে একমাসের কাছাকাছি সময়ে এই ভিসা COE(Certificate of Eligibility)হয়ে যায়। এরপর জাপানের ইমিগ্রেশন থেকে পাওয়া COE(Certificate of Eligibility) এর মূলকপি সহ স্থানীয় জাপান দুতাবাসে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত প্রাতিষ্ঠানিক কাগজ পত্র, আপনার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সকল কাগজ পত্র সহ আবেদন করলে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে। তবে জাপানে অবস্থান করা অবস্থায়ও এই ভিসার জন্য আবেদন করা যেতে পারে।
এই ভিসার মেয়াদ কত দিন হবে সেটা নির্ভর করে আপনার নিয়োগের মেয়াদকাল কতদিন। যেমন আপনার নিয়োগ যদি হয় ১ বছরের জন্য সে ক্ষেত্রে আপনার ভিসার মেয়াদও এক বছরই হবে। কিন্তু যদি চুক্তির মেয়াদ নবায়নের কোন সম্ভবনা থাকে সে ক্ষেত্রে নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে এক বছর, তিন বছর, কিংবা পাঁচ বছরের ভিসা হতে পারে। এই ভিসা প্রাপ্ত বিদেশীগণ তাদের পরিবারসহ জাপানে বসবাস করতে পারবে। জাপানের বাহিরে থেকে এই গবেষক (Researcher) ভিসা নিয়ে জাপানে আসলে অনেক সময় পরিবার সাথে করে নিয়ে আসতে পারেন আবার অনেক সময় জাপানে আসার পরে পরিবারের জন্য ভিসার আবেদন করে অল্প দিনের মধ্যেই পরিবার জাপানে নিয়ে আসতে পারবেন।
উল্লেখ্য এই ভিসা পাওয়ার জন্য জাপানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পড়াশুনা করতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। বিশ্বের যে কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে জাপানের কোন সরকারী কিংবা বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কোম্পানি থেকে স্থায়ী অথবা খণ্ডকালীন কাজের (চাকুরীর)জন্য নিয়োগ পেলে তারা এই গবেষক (Researcher) ভিসা জন্য যোগ্য হবেন। এই সকল বিদেশী নাগরিক পাঁচ বছর চাকুরী করার পর জাপানের নাগরিকত্ব এবং ক্ষেত্র বিশেষে দুই থেকে তিন বছর পরে পয়েন্ট ভিত্তিতে একা কিংবা সপরিবারে জাপানে স্থায়ী বসবাসে(PR➡Permanent Residency) আবেদন করার সুযোগ পাবেন। গবেষক (Researcher) ভিসা থেকে স্থায়ী বসবাসে(PR➡Permanent Residency) অনুমতি পেলে সে এবং তার পরিবার সাড়া জীবন জাপানে বসবাস করতে পারবেন।
আমার আগের লেখাতেও উল্লেখ করেছি যে জাপানের ভিসা অন্য দেশের তুলনায় সহজ এবং সাধারণত কোন কারণ ছাড়া ভিসার আবেদন বাতিল হয় না। তাই বাংলাদেশের সকলকে অনুরোধ করব জাপানের ভিসার আবেদন করার সময় আপনার এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের (জাপানের যেই প্রতিষ্ঠানে আপনি আসবেন) কাগজ পত্র গুলো ভাল ভাবে পরীক্ষা করে নিন। প্রয়োজনে স্থানীয় দুতাবাসের কিংবা কোন অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নিন তাহলে আপনি জাপানের ভিসা থেকে বঞ্চিত হবেন না। ইনশাল্লাহ আগামীতে আবার জাপানের অন্য ধরণের ভিসা নিয়ে অলোচনা করব। চলবে