মো. আরিফুর রহমান: ১৯৭১ সালের এ দিনে মাদারীপুরের সমাদ্দার এলাকায় একটানা ৩৬ ঘণ্টা যুদ্ধ শেষে পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর জেলা। হাজার হাজার মুক্তকামী মানুষ জয় বাংলা স্লোগানে স্লোগানে রাস্তাায় নেমে আসে। বিজয় পতাকা উড়ে বাড়িতে বাড়িতে।
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মাদারীপুরের মুক্তিযোদ্ধারা একের পর এক পরাস্ত করতে থাকে পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের।বিভিন্ন স্থানের যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে পাকবাহিনী ও দোসররা মাদারীপুর থেকে পালিয়ে যাবার কৌশল খুঁজতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা গোপনে জানতে পারেন, পাক হানাদার বাহিনী মাদারীপুরের এ আর হাওলাদার জুট মিলের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে খলিল বাহিনীর প্রধান খলিল খানের নেতৃত্বে ৮ ডিসেম্বর সারারাত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সমাদ্দার ব্রিজের চতুর্দিকে অবস্থান নেয়। তুমুল যুদ্ধ শেষে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী। বিজয় পতাকা উড়ে মাদারীপুরে। শহীদ হন মাদারীপুরের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু। এ যুদ্ধে ২০ পাক হানাদার সেনা নিহত হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান ৫০ বছর পর হলেও মাদারীপুর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্মৃতি স্থম্ভ তৈরি করায় আনন্দিত এবং একই স্থানে একটি মুক্তিযোদ্ধাদের যাদুঘর করা হলে আগামী প্রজন্ম ১৯৭১ ও মুক্তি যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে।
১৯৭১ সালের মাদারীপুর মুক্তিযোদ্ধা কালিন খলিল বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান জানান, আজ আমাদের মাদারীপুুর পাক হানাদার মুক্তদিবস এবং বিজয় দিবস, আমার নেতৃত্বে এবং আমার নামেই এই বাহিনীর নামকরন করে আমার সহযোদ্ধারা। নামকরণ করা হয় খলিল বাহিনী। এবং এই বাহিনীর মাধ্যমে হানাদার বাহিনীদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়।
মাদারীপুর সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদার জানান,মাদারীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঐ সময়ের হানাদার বাহিনীরা আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয় তবে সেদিন আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধারা শহিদ হন, এইদিন আমাদের আনন্দের দিন হলেও আমরা অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের হারিয়েছি বিজয় দিবস আনতে।
মাদারীপুরে মাটিতে এখনও এদেশীয় দোসররা ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। তাই বিজয়ের এ মাসেই সকল যুদ্ধপরাধীসহ রাজাকারা দেশে ও বিদেশ যারা রয়েছে তাদের শাস্তি দিয়ে মাদারীপুরসহ দেশকে কলঙ্কমুক্ত করা উচিত। সম্পাদনা: শান্ত মজুমদার