ড. শোয়েব সাঈদ, ওমিক্রনের চারণভূমি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই ভ্যারিয়েন্টের গতি-প্রকৃতি বুঝার জন্যে আপাতত দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেই তাকাতে হচ্ছে। সংক্রমণ স্বল্পতার কারণে অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে উপসংহারযোগ্য ডাটার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডঃ এঞ্জেলিকের মতে লক্ষণ প্রকাশে ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে একেবারেই ভিন্ন।
দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রাপ্ত ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর তথ্য উপাত্ত বলছে প্রকাশিত লক্ষণগুলো মৃদু। ঠাণ্ডা লাগা বা ফ্লু ধরণের লক্ষণে গা ব্যথা, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা থাকছে। ডেল্টা সহ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের মত শুকনো কাশি, সর্দি বা নাক বন্ধ কিংবা শ্বাসনালী সংক্রমণ থাকছে না, অক্সিজেনের দরকার হচ্ছে না, স্বাদ বা গন্ধ পাবার ক্ষমতাও নষ্ট হচ্ছে না।
অপেক্ষাকৃত কম বয়সী অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫০ বছরের কম বয়সীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এই তথ্য উপাত্ত বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে কতোটা প্রযোজ্য হবে সেটি জানার জন্যে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
ওমিক্রনের দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণের গতি ডেল্টার চেয়ে কয়েকগুন বেশী। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার এই ধারা অন্য দেশেও দেখা যাবে বিষয়টি এরকম নয়। ডেল্টার ভারতীয় সংক্রমণ গতি কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায়নি।
কোভিডে ইতোমধ্যে আক্রান্ত অনেকে ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছে বটে, তবে এই পুনরায় সংক্রমিতরা সহ ভ্যাকসিন দেওয়া আছে যাদের, তাঁদের লক্ষণ গুরুতর কিছু নয় বলে বিক্ষিপ্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
ওমিক্রন ইউরোপ আর আমেরিকায় ছড়িয়েছে যাদের বয়স্ক জনসংখ্যার উল্ল্যেখযোগ্য অংশ ভ্যাকসিনের আওতায় এসেছে। কমিউনিটি সংক্রমণ ব্যাপক হলে বয়স্ক জনসংখ্যাও আক্রান্ত হবে। টিকা দিয়েছে, দেয়নি এমন বয়স্ক জনসংখ্যার ক্ষেত্রে ওমিক্রনের মোড অব একশন কি হবে তা জানতে হল কমিউনিটি সংক্রমণের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। কোভিড লড়াইয়ে অনেক বেশী সক্ষম উন্নত বিশ্ব কমিউনিটি সংক্রমণরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে, নিজেদের জনগণকে রক্ষায় ঝুঁকি নেবে না।
ভয়টা থাকছে তৃতীয় বিশ্বের টিকা না পাওয়া বয়স্ক জনসংখ্যার জন্যে। আর তাই ওমিক্রনের এপিসেন্টার দক্ষিণ আফ্রিকার ডাটার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। ওমিক্রনের মৃদু উপসর্গের তথ্য-উপাত্ত যদি বয়স্ক জনসংখ্যার ক্ষেত্রে সঠিক হয় তবে তা হবে কোভিডাক্রান্ত বিশ্ব বিশেষ করে স্বাস্থ্য আর অর্থনীতির জন্যে সুখবর।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে জরুরি করণীয় হচ্ছে ওমিক্রনের প্রবেশ আর বিস্তাররোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।
লেখকঃ কলামিস্ট এবং মাইক্রোবিয়াল বায়োটেকনোলজিস্ট। কানাডার একটি বহুজাতিক কর্পোরেটে ডিরেক্টর পদে কর্মরত