রাজিয়া সুলতানা জেনি
‘মন্দার’ দেখলাম। যেহেতু অরিজিনাল স্টোরি নয়, তাই স্টোরি নিয়ে আলোচনার কোনো মানে হয় না। আলোচনা একটা ব্যাপার নিয়েই হওয়া উচিত, কতো ভালো অ্যাডাপ্টেশান হয়েছে। আর কিছু আলোচনা করা যেতে পারে চিত্রনাট্য নিয়ে। কিছু মেকিং নিয়ে। আর যেহেতু অনির্বাণ চ্যাটার্জি ডাইরেকশান ফিল্ডে নতুন এলেন, তাই তাঁর পারফরমেন্স নিয়ে কিছু বলা যেতে পারে। এনি ওয়ে, চিত্রনাট্য বেশ ভালো লেগেছে। বিভিন্ন মেটাফোরের ইউজও ভালো লেগেছে। কিছু কিছু জায়গায় মনে হয়েছে, তিনি মেটাফোরের ব্যাপারে কিছুটা অবসেসড। সুযোগ পেলেই ব্যবহার করছেন। আর ড্রোন শটের ব্যবহারের একটা প্রীতি দেখা গেছে। সেটাও খারাপ লাগেনি। ব্যাপারটা তাঁর সিগনেচার মার্ক হিসেবেও দেখা যেতে পারে। কাহিনির গতি খুব মন্থর লাগেনি। তবে কেউ যদি ফাস্ট পেস কাহিনি দেখে অভ্যস্ত হন, তাঁদের কাছে কিছুটা লাগতে পারে। আমি নিজেও সিরিজ চলার সময় মাঝে মাঝে মোবাইলে ফেসবুক দেখেছি। অভিনয় দুর্দান্ত ছিলো সবার। সব মিলিয়ে বলবো, অনির্বাণের ড্রিম ডেবিউ। ফেসবুকে রিভিউ যেসব এসেছে, তার সারাংশ মোটামুটি একই। ভালো বানিয়েছে। কেউ কেউ মাস্টার পিস বলেছেন। আর খুব অল্প আছেন, খারাপ বলেছেন। খারাপ বলাদের একাংশ দেখলাম নেস নিয়ে আপত্তি করেছেন।
ইম্পোর্টেন্স নিয়ে কেউ কেউ বিরক্ত হয়েছেন। ব্যাপারটা খুব জরুরি ছিলো কিনা জানি না। তবে এই সূত্র ধরে সেক্স ব্যাপারটার একটু বেশি ব্যবহার করা গেছে। অনেকের ধারণা, সেজন্যই ব্যাপারটাকে ঢোকানো হয়েছে। আর হৈচৈ এর সিরিজ, কিন্তু সেক্সের ডোজ থাকবে না, হতেই পারে না। তাদের যে গুড উইল বা ব্যাড উইল তৈরি হয়েছে তা একবাক্যে বলতে গেলে সেটা হবে, এখানে যেকোনো সিরিজের সঙ্গে সেক্স দৃশ্য ফ্রি। মন্দারও ব্যতিক্রম নয়। সো, অনির্বাণের সিরিজ হলেও, হৈচৈ এখানে ঘাড়ে চেপে ছিলো। যদি না আইডিয়াটা অনির্বাণের নিজের হয়ে থাকে। পেছনের ঘটনা যাই হয়ে থাক, হি ডিসার্ভস অ্যা হ্যাটস অফ। এর দুটো সিরিজ দেখলাম। দুটোই সিকুয়েল। প্রথমে দেখলাম ‘ইলিগ্যাল’ এর সিকুয়েল। বেশ প্রাইম ফিলিং আছে। কাহিনি আগের পর্বে যেখানে থেমেছিলো তার পর থেকে শুরু করেছে। তবে এবার সেই অর্থে কাহিনি ছিলো না। প্রথম তিন পর্ব তো গেলো চর্বিত চর্বনে। একজন ল’য়ারের শুরুর স্ট্রাগল পর্ব, ভিলেনের চিরাচরিত কুটকাচালী দিয়েই তিন পর্ব পার করে দিয়েছে।
৪র্থ পর্ব থেকে যাও কাহিনি শুরু হবে হবে টাইপ একটা আশা জাগালো সেটাও হারিয়ে গেলো শেষ পর্ব আসতে আসতে। মনে হয়েছে রাইটার নিজেই ইনডিসিশনে ভুগেছে। কোনো স্টোরিকে সামনে আনবে। আর ভিলেন বানিয়েছে ফেসবুক এবং এর সৃষ্ট অ্যালগরিদমকে। সাম্প্রতিক প্রাক্তন ফেসবুক এমপ্লয়ি কর্তৃক উন্মোচিত ফেসবুকের আলোচিত অ্যালগরিদম, যেখানে বলা হয়েছে তারা হেইট স্পিচগুলো প্রমোট করে কারণ, সেখানে হিট বেশি, এনগেজমেন্ট বেশি, সেই অ্যালগরিদমকে টার্গেট করার একটা চেষ্টা ছিলো। কিন্তু ব্যাপারটা ভালোভাবে বোঝানো এবং সেটার সঙ্গে দর্শককে টেনে নেওয়ার জন্য যতোটা সহজবোধ্য করা দরকার ছিলো, সেটা হয়নি। কেন যেন মনে হয়েছে, সেই চেষ্টাও ছিলো না। নায়িকার সোশ্যাল লাইফ, নায়িকার পার্টনারের প্রেম এসব দেখানোই ছিলো মুখ্য উদ্দেশ্য। আর শেষটা ছিলো জাস্ট অযথা। পরের পর্বের জন্য ক্লিফ হ্যাঙ্গার দিতে গিয়ে কাহিনিই এলোমেলো করে দিয়েছে। বেশ ভালোরকম আশাহত করেছে সিরিজটি।
‘ইয়োর অনার’ এর সিকুয়েল দেখলাম এর পরে। এটাও ছিলো আধাগল্প। মনে হয়েছে, চাপে পড়ে দ্বিতীয় সিজন এনেছে। সেভাবে কোনো গল্প নেই। আগের ক্যারেক্টারগুলোকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁদের জীবনে ক্রাইসিস তৈরির চেষ্টা ছিলো। সাসপেন্স সেভাবে আসেনি। আর এন্ডিংও যথারীতি বিরক্তিকর। কাহিনিকারের মাথায় নতুন আইডিয়ার বেশ অভাব লেগেছে। অ্যানাদার ডিসাপয়েন্টমেন্ট। ও, আরেকটা ফিল্মের কথা বলতে ভুলেই গেছি। ধামাকা। মনে হলো ভারতের বিখ্যাত অ্যাংকর অর্ণব গোস্বামীকে ভ্যাঙানোর জন্য স্ক্রিপ্ট লিখতে বসেছিলেন রাইটার। মাঝে পথ হারান। এরপরে আর সেই পথ খুঁজে পাননি। আর যে পথে হেঁটেছেন, তা না হয়েছে স্যাটায়ার, না হয়েছে থ্রিলার। অ্যানাদার ডিজাস্টার।