খুজিস্তা নূর-ই নাহারিন: ইউটিউব চ্যানেলে নুসরাত ফারিয়ার উপস্থাপনায় ‘গধধ ঠং ইড়ঁ’ অনুষ্ঠানটি দেখছিলাম। আরিফ খান জয়কে গেস্ট করে একটি অনুষ্ঠানে ফারিয়া জিজ্ঞেস করছেন, কী করে তিনি মা এবং স্ত্রীকে একসঙ্গে ম্যানেজ করেন? হাসতে হাসতে জয় উত্তর দিলেন, খুব সহজ দু’জনকে গোপনে গিফট দিই, যাতে করে একে অপরের সঙ্গে তুলনা করতে না পারে। আরিফ খান জয়ের উত্তর শুনে আমি হতভম্ব। তরুণ প্রজন্মের কাছে কী ম্যাসেজ যাচ্ছে? এখানে একইসঙ্গে জয় কেবল নিজেকে নয়, মা এবং স্ত্রীকেও ছোট করলেন। অনেক আগে ‘মা বড় না বউ বড়’ সিনেমার নামের সমালোচনা করে লিখেছিলাম মায়ের সঙ্গে স্ত্রীর কখনো তুলনা চলে না। কারণ পুরুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’জন নারী একজন তাঁকে জন্ম দিয়ে গড়ে পিটে মানুষ করে, অপরজন তাঁর সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে এগিয়ে নিয়ে যান। দু’জনই তাঁর শুভ চিন্তক, দু’জনই তাঁকে ভালোবাসে। একজন বয়স্ক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মা অপরজন স্বপ্নঘেরা তরুণী স্ত্রী। দু’জনের মাঝে মতপার্থক্য থাকতে পারে, সামান্য মতবিরোধ বা খুনসুটিও হতে পারে কিন্তু দু’জনকেই বুঝতে হবে তাঁরা দু’জনই উক্ত ভালোবাসার মানুষের জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
তবে পরস্পরকে লুকিয়ে কিছু দেওয়া বা কথা বলা দুর্বল ব্যক্তিসত্তারই বহিঃপ্রকাশ। মা এবং বউ কিছুতেই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নন। প্রয়োজনে দু’জনের সঙ্গে আলাদা কথা বলে বুঝিয়ে বলা। মায়ের একটাই চাওয়া ছেলের সুখ। তবে দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ব থেকে মাকে অকস্মাৎ বঞ্চিত করাও উচিত নয় বউকেও সেটা বুঝতে হবে।
মা কিংবা বউ কখনোই চায় না আপনি ভয়ে লুকিয়ে তাঁকে কিছু উপহার দেন। কারণ ভালোবাসা লুকানোর কোনো বিষয় নয়। বরং সৎসাহস নিয়ে যার যা প্রাপ্য বুঝিয়ে দিলে অন্য কারও মন খারাপ হওয়ার কথা নয়। কিছু ক্ষেত্রে ঝামেলা হলেও ধীরে ধীরে সয়ে যেতে বাধ্য। স্বামী/ছেলের বয়স যাই হোক একইসঙ্গে মা এবং স্ত্রীকে সামাল দেওয়ার দায়িত্ব একান্তই তাঁর। তবে স্ত্রী এবং মাকেও বুঝতে হবে তাঁদের টানাটানিতে যেন স্বামী/ছেলের গলায় ফাঁস হয়ে না দাঁড়ায়। একই অনুষ্ঠানে মা এবং স্ত্রীর সামনে পুত্র/স্বামীকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে কার রান্না বেশি ভালো তাঁর মায়ের নাকি স্ত্রীর? এই প্রশ্নটিও বড় বেশি আপত্তিকর। সরাসরি মা এবং স্ত্রীকে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখানে সাব্বির এবং তাঁর স্ত্রী চাঁদনি অতিরিক্ত স্মার্ট বিধায় দু’জনই বলেছেন মা বেশি ভালো রাঁধেন। কিন্তু সবাই তাঁদের মতো এতো স্মার্টলি হ্যান্ডেল করতে পারছেন না। যেকোনো টেলিভিশন প্রোগ্রামে মানুষ পজেটিভ ম্যাসেজ আশা করে, যা সমাজের অসঙ্গতিকে দূর করে মানুষের মাঝে হৃদ্যতা আর ভালোবাসার বসতি স্থাপন করবে সেখানে এমন দুর্বল অনুষ্ঠান কথাবার্তা মানুষের মাঝে দ্বিধা সৃষ্টি করবে মাত্র। Khugesta Nur E Naharin-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।
আপনার মতামত লিখুন :