শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর, ২০২১, ১০:০৯ রাত
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০২১, ১০:০৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

একটি ওভারপ্রাইসড হসপিটালিটি সেক্টরের গল্প: আরিফ ভূঁইয়া

বাংলাদেশের অগ্রগতির সাথে সাথে এদেশের হসপিটালিটি সেক্টরও বড় হয়েছে। সেবার মান কোথাও কোথাও খুব ভালো হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গড়পড়তা। সেবার মান ভালো না হলেও অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে বেশি চার্জ দিতে হয় এখানে। সেদিন দেখলাম যমুনা টেলিভিশনে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভারত, নেপালকে নিয়ে কয়েকটি পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে এবং সেখানে বাংলাদেশ হসপিটালিটি সেক্টরকে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সেটির আবার পক্ষে বিপক্ষে কয়েকটি মতামত দেখলাম।বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা অনুযায়ী এদেশের হসপিটালিটি সেক্টর অত্যন্ত ব্যয়বহুল। খুব বেশি না, কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ দেই তাহলে বিষয়টি আরেকটু পরিস্কার হবে।

১. রেস্তোরাঁঃ
বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা ইনকাম থেকে আয়ারল্যান্ড এর পার ক্যাপিটা ইনকাম প্রায় ৩৫ গুন বেশি। এখানে ১০-১২ ইউরো (১,০০০-১,২০০ টাকা) দিয়ে খুব ভালো মানের রেস্তোরাঁয় পেট পুরে খাওয়া যায়, ৫-৭ ইউরোতেও (৫০০-৭০০ টাকা) ভালো মানের বার্গার পাওয়া যায়। বাংলাদেশের একটি নরমাল রেস্তোরাঁয় বার্গার খেতে খেতেও এর কাছাকাছি সমান টাকা লাগে। কসমো নামক হাইফাই এই রেস্তোরাঁর বুফেতে ১৫ ইউরোতে যে খাবার খাওয়া যায়, বাংলাদেশের সে খাবার খেতে মিনিমাম ৩,০০০ টাকা (৩০ ইউরো) দিতে হতো আমি নিশ্চিত। একটা স্টেইক খেতে বাংলাদেশে প্রায় ২,০০০ টাকা লাগে, এর চেয়ে মাত্র কয়েকশ টাকা বেশি দিলে এখানে অনেক ভালো স্টেইক খাওয়া যায়।

২. হোটেলঃ
একবার দেশে গিয়ে কক্সবাজারে একটা মোটামুটি ভালো মানের রিসোর্টে গিয়েছিলাম পরিবার সহ। প্রতি রুমে প্রায় ৮,০০০ টাকা গুনতে হয়েছে প্রতিরাতে। আহমরি তেমন কিছুই মনে হয়নি। কয়েক মাস আগে এখানে এধষধিু নামের একটা শহরে যাই, চার তারকা না হলেও এই সমপরিমাণ টাকায় বাংলাদেশের তুলনায় অনেক অনেক ভালো রুমে থেকেছি। আমি এই লিখাটি লিখার আগে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের ৪ তারকা এবং আয়ারল্যান্ডের এর ৪ তারকা হোটেলের খরচ সম্পর্কে বুকিং.কমে খোঁজ নিলাম। একই তারিখে দুই দেশের, প্রায় সমান জনপ্রিয় যায়গায় হোটেল খরচে খুব বেশি পার্থক্য দেখলাম না। বাংলাদেশের হোটেলে এতো বেশি খরচ হবার যৌক্তিক কারণ খুঁজে পেলাম না। বাংলাদেশের ছাত্র ছাত্রীরা ট্যুরে গিয়ে হোটেলে যে টাকা দেয়, ইউরোপীয় ছাত্র ছাত্রীরাও বোধহয় এতো টাকা হোস্টেলে দেয়না।

৩. আভ্যন্তরীণ বিমানঃ
আরেকটি ওভারপ্রাইসড সার্ভিস। ঢাকা থেকে চিটাগং যেতে মাত্র ৩০ মিনিটেরও কম সময় লাগে। কক্সবাজার যেতেও খুব বেশি লাগেনা। কিন্তু ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার ভাড়া দেখেলে চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এখানে রায়ান এয়ার নামের একটি বিমান সংস্থা আছে, আমি নিজে সেই বিমানে ডাবলিন থেকে যুক্তরাজ্যে ৫ ইউরোতেও (৫০০ টাকায়) গিয়েছি। এটা স্পেশাল ফেয়ার ছিলো কিন্তু এমনিতেও সেই বিমানে করে ১২-১৫ ইউরোতে (১,২০০-১,৫০০ টাকায়) এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া যায়। আরেকটু ভালো ভালো এয়ারলাইনস কোম্পানির সেবা নিলেও সেটির আন্তর্জাতিক ভাড়া বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ভাড়ার চেয়েও কম অনেক ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশের জিডিপি পার ক্যাপিটা ২,৫০০ ডলার, সেখানে আয়ারল্যান্ড এর জিডিপি পার ক্যাপিটা প্রায় ৮২,০০০ ডলার। আয়ারল্যান্ড এর জনসংখ্যা অনেক কম, তাই জিডিপি পার ক্যাপিটা বেশি হবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু এর পাশাপাশি আয়ারল্যান্ড এর অর্থনীতি অনেক মজবুত এবং তাই এখানে জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে ইউরোপের অনেক দেশের চেয়েই সচ্ছল। তবুও এই সচ্ছল দেশে থেকেও দেশে গেলে বাংলাদেশের হসপিটালিটি সেক্টরকে ওভারপ্রাইসড মনে হয়। বাংলাদেশের এই সেক্টরের অনেক প্রতিষ্ঠানকেই স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনাকারী এবং অতিমুনাফার মোহে আচ্ছন্ন মনে হয়। এই ফিলিংসটা শুধু যে আমার একার, তাই নয়। আমি আয়ারল্যান্ড এ থাকা অনেক বাংলাদেশির সাথেই কথা বলেছি এই স্পেসিফিক ব্যাপারটাতে এবং প্রত্যেকেই বাংলাদেশের এই ইনডাস্ট্রিকে মারাত্মকভাবে ওভারপ্রাইসড বলে বর্ননা করেছেন।

একদিকে অনেকের পকেটে অসৎ টাকা, তাই তারা পরোয়া করেনা। অন্যদিকে অনেকেই সৎ কিন্তু বাহিরের সাথে কম্পারিজন জানেন না, তাই এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নিয়েছে, অনেকেই আবার শো অফ হিসেবে এসব মেইনটেইন করছেন উপরন্তু সরকারের পক্ষ থেকেও জবাবদিহিতা নেই। এই কারণগুলোর জন্যই এই সেক্টর এখনো এতোটা ওভারহাইপড। এখানে ভোক্তার জন্য ভালো কোন প্যাক্টিস আমি দেখিনা। অপরদিকে মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠান লাভবান হলেও তাতে কিন্তু এই ইনডাস্ট্রি কোনভাবেই সার্বিক ভাবে লাভবান হচ্ছেনা। ইনডাস্ট্রির এই ইনফ্লেশনারি আচরণ সার্বিকভাবে এটিকে মনোপলি বা অলিগোপলির দিকে ধাবিত করছে। ফলশ্রæতিতে কয়েকটি নিদিষ্ট সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এখানে প্রচন্ডরকম গেইন করে (কয়েকজন ধুমধাম উঠে যায়) কিন্তু বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই আস্তে আস্তে সেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ে (দেউলিয়া হয়ে ব্যাবসা গুটিয়ে নেয়)।
লেখক একজন আয়ারল্যান্ড প্রবাসী ব্যাংকার এবং চ্যাটার্ড একাউন্টেন্ট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়