শাহীন খন্দকার:[২] নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলায় চলতি বছর ১৬ হাজার ৪ শত হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১২শত হেক্টর জমিতে রবি শস্য আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন, উপজেলা কৃষিকর্মকর্ত মো. মাহবুবুর রহমান।
[৩] তিন বলেন, পাহাড়ি এই জনপদের কৃষকেরা মিনিকেট, বিআরবি, বিন্নিধান, বিশেষ একজাতীয় ধান যার নাম কালো, এই ধানের চাউলও কালোবর্ণের এবং পোলাও এর ধান চাষ করেছেন। তবে আগাম জাতের আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
[৪] মাহবুবুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যার ফলে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। এজাতের ধানের ফলনে অন্যান্য কৃষকরাও আশার আলো দেখছেন। তিনি বলেন, উপজেলায় এবার আগাম জাতের ধানের মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান-১৭,ব্রি ধান ৭২ ব্রি ধান ৭৪,ব্রি ধান ৮৭,বিনা ৭ এবং ১৬ জাতের ধান।
[৫] সরেজমিনে দেখা যায়, এবার জমিতে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। গাছের শীষ ধানে নুইয়ে পড়ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। যদিও এরই মধ্যে কোন কোন ইউনিয়ণ এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। প্রতিটি মাঠ জুড়ে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা আমন ধানের ডগায় দোল খাচ্ছে এখন হেমন্তের শিশির বিন্দু। দিগন্ত জুড়ে যে দিকে দু’চোখ যায়, শুধু সবুজ আর সবুজ। সবুজের সমারোহে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়।
[৬] ঋতু শরৎকে বিদায় দিয়ে হেমন্তকে বরণ করেছে প্রকৃতি। আর এই পাহাড়ি প্রকৃতির জমিনে বিগত দিনের চেয়ে এবছরই বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, বন্যা এবং পাহাড়ী ঢল না থাকায় ধানের চাষ যেমন হয়েছে, তেমনি রবি ফসল। শাক সবজির ফলনও ব্যাপক হয়েছে।
[৭] উপজেলার প্রতিটি মাঠ জুড়ে ধানের শীষে পড়ছে শীতের শিশির বিন্দু। সকাল হলেই দেখা মিলছে সাদা কুয়াশার ভেলা। এই কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। কালোধান কালো চাউল উৎপাদনকারি কৃষক ফজলুর রহমান রুনু বলেন, বগুড়া বেড়াতে গিয়ে তিনি এই ধানের বীজ সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, ১২ শতাংশ জমিতে ধান চাষে তার ব্যায় হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এই ১২শতাংশ জমিতে সাধারণ ধান হয়ে থাকে প্রায় আটমন। কিন্ত কালোধান তিনি পেয়েছেন ৬ মন হলেও তিনি লাভের মুখ দেখেছেন দ্বিগুণ! প্রতি কেজি চাল বিক্রি করছেন ১ হাজার টাকা আর এককেজি ধান বিক্রি করছেন ৫০০ টাকা।
[৮] রুনু কৃষক বলেন চলতি মৌসুমে তার কাছে থেকে অনেক কৃষক এই ধানের বীজ তার নিকট থেকে সংগ্রহ করে জমিতে চাষ করছেন। কৃষক রুনু আরো জানালেন, ধানটি এসেছে মুলত ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে। বর্তমানে বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে কুমিল্লা ও বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। দূর্গাপুর উপজেলার উত্তর গোপালপুর গ্রামের আদিবাসী নারী কৃষক নিয়তি দ্রুং ও শুকরিতি গাখড়া এবং দাহা পাড়ার গহিম হাজং বলেন, এবার বিন্নি ধানসহ কালোজিরা ধানের ভালো ফলন হয়েছে।
[৮] গহিম হাজং বলেন, ভালো ফসল হলেও সার্বক্ষনিক ভয় হাতির আক্রমনের। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বন্যহাতির দলবেধে এই মৌসুমে ভারতের মেঘালয় ও তোড়া থেকে ফসলে জমিতে হামলা চালায় ধানক্ষেতে। শুধু খেয়েই থাকে না, হাতির দল ধান খাওয়ার পরে দলধরে তারা ফসলের জমিতে গড়াগড়িসহ দৌড়াতে থাকে এতে ঘরে আর ফসলা তোল যায় না। তাই পাকাধানের ক্ষেত রক্ষায় রাতদিন পালাক্রমে পাহাড়া দেওয়া হচ্ছে। হাতির আক্রমন থেকে যদি ধান রক্ষা করতে পারি আগামী একবছর দাহা পাড়ার আদিবাসীসহ সকল সম্প্রদায়ের কৃষকের খাদ্যের অভাব থাকবে না বলে জানালেন তিনি। সম্পাদনা: খালিদ আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :