সোহেল তাজ
৪৬ বছর আগে, ৩ নভেম্বর পাঁচ বছর বয়সের একটি ছোট্ট ছেলে হারালো তার প্রিয় বাবাকে। যার হাত ধরে সে যেতো বাড়ির পাশে আবাহনীর মাঠে। যার হাত ধরে ধানমন্ডির সাতমাসজিদ রোডের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে খুঁজে পেয়েছিলো তার প্রথম স্কুল। টেলিভিশনের পর্দায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আর জাতীয় পতাকা পরিবেশিত হলে যিনি সবসময় মনে করিয়ে দিতেন, দাঁড়িয়ে স্যালুট করে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে। যিনি কোমলভাবে বোঝাবার চেষ্টা করতেন মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের আত্মত্যাগের কথা। যিনি এই ছোট্ট ছেলেটিকে একটি আত্মবিশ্বাসী দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করার গুরুত্ব শেখাবার চেষ্টা করেছিলেন এবং অনুপ্রেরণা যোগানোর চেষ্টা করেছিলেন নানা কায়দায়। এ ছেলেটির জীবনটা হঠাৎ করে পাল্টে গেলো একদিন। ছেলেটি দেখতে পেলো একটি লাশ, তার বাবার লাশ। লাশটি রাখা হলো একটি রুমে আর সেই লাশ দেখতে আসলো হাজার হাজার মানুষ। সেও অবাক হয়ে দেখতে লাগলো সবার সঙ্গে। পরে সেও গেলো বনানী কবরস্থানে। সেখানে সবাই তাকে প্রথমে মাটি দিতে বললো, সেও দিলো। তার কাছে মনে হচ্ছে এটা যেন একটি স্বপ্ন এবং এই স্বপ্নের মধ্য দিয়ে সে ভেসে যাচ্ছে।
আস্তে আস্তে সময় পার হতে লাগলো আর সেই স্বপ্নের আবরণ ধীরে ধীরে কেটে যেতে লাগলো। তারপর থেকে তার মনে খালি প্রশ্ন আর প্রশ্ন। তার কেন বাবা নেই? অন্য সবার তো বাবা আছে। আরও সময় পার হলো কিন্তু প্রশ্নগুলো আরও জটিল হতে লাগলো। কেন মেরে ফেলা হলো তার প্রিয় বাবাকে? তিনি কী অন্যায় করেছিলেন? তাকে জেলে কেন রাখা হয়েছিলো? আর জেলখানায় মেরে ফেললো কারা এবং কেন? এই প্রশ্নগুলো যখন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তখন সে তার মাকে বলতে শুনতো, ‘আমি আমার স্বামী হারিয়েছি আর আমার সন্তানরা তাদের বাবাকে হারিয়েছে, কিন্তু দেশ কী হারালো? আমাদের ক্ষতি থেকে দেশের আরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেলো।’ তারপর ৪৬ বছর পার হয়ে গেলো। ছোটবেলার সেই দুঃখ, কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়েই বছরগুলো পার করলো। সে বুঝতে পারলো যে তার সত্তা তার সেই হারানো বাবার মাঝেই লুকিয়ে আছে।
৩ নভেম্বর ২০২১। আজ ধেকে ৪৬ বছর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী জাতীয় চার নেতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সারকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এম মুনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। বাংলাদেশ তার সত্তা খুঁজে পাবে তখনোই যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন (অব.) এম মুনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামানদের মতো সকল নেতাদের আত্মত্যাগ, অবদান আমরা সঠিক এবং পৃথকভাবে মূল্যায়ন করতে পারবো। তাদের আত্মত্যাগ ও আত্মদান খুলে দিক ইতিহাসের সেই জানালা যার গভীরে ঢুকে এই জাতি খুঁজে পাবে তার সত্তা। Sohel Taj-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।
আপনার মতামত লিখুন :