শিরোনাম
◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ০৫:৫০ বিকাল
আপডেট : ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ০৫:৫০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আগে পুষ্টি পরে চিকিৎসা

লালমনিরহাট. প্রতিনিধি: রোগীদের রোগ নিরাময়ে ওষুধের চেয়ে খাদ্য অভ্যাসই বেশি কার্যকর। গ্রামীন মায়েদের ভ্রান্ত ধারনাকে পরিবর্তন করতে ডা. আজমল হক নিজে চেম্বারে রেখেছেন পুষ্টির ট্রে। চাল, ডাল, সাবান ও ফল থেকে শুরু করে মানুষের খাদ্যে যা প্রয়োজন সব রয়েছে এ পুষ্টির ট্রেতে।

রোগের ধরন দেখে ওষুধ লিখার আগে রোগীদের পুষ্টিকর খাদ্যে মনোনিবেশ করতে শিশু রোগ বিষেজ্ঞ ডা. আজমল হক হাতে কলমে শিখাচ্ছেন রান্না পদ্ধতিও। ওষুধের সাথে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়ছে রোগ নিরাময়ও ঘটছে। তাই শিশুদের দীর্ঘ লাইন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ডা. আজমল হক এ হাসপাতালে শিশু রোগ বিষেজ্ঞ জুনিয়ার কনসাল্টটেন্ট পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি পুষ্টির উপর জোর দেয়ায় রংপুর বিভাগের সেরা চিকিৎসক পুরুস্কারও অর্জন করেন।

জানা গেছে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে মানবদেহে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। গ্রামীন গর্ভবতি মায়েরা পেটের সন্তান মোটা হবে এবং এতে প্রসবে কষ্ট হবে ভেবে খাবার কমে দেন। যা মা ও নবজাতকের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। এ ছাড়াও মা ও শিশুদের শরীরে কোন সমস্যা দেখা দিলে খাদ্য তালিকা থেকে কিছু খাবার বন্ধ করে দেন। ফলে ওই মা ও শিশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারায়। যার ফলে রোগ নিরাময় করতে বেশ বেগ পেতে হয় এবং স্বাস্থ্যহানী ঘটে।

খাদ্য অভ্যাস ও খাদ্য গ্রহনের নিয়ম না জানার কারনে গ্রামীন শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে। যার কারনে মেধার বিকাশও ঘটছে না। পুষ্টিকর খাবার বলতে গ্রামীন লোকজনের ভ্রান্ত ধারনা মাছ, মাংস ও ফল। আসলে তা নয়। একেকটি খাবারে একেকটি পুষ্টিগুন বিদ্যমান। মৌসুমী ফল ও মৌসুমী সবজিতে প্রচুর পরিমান পুষ্টিগুন রয়েছে। গ্রামীন মানুষ মসলা বলতে বুঝে রান্নার সাদ বাড়ানো। যা ঠিক নয়। মসলাও পুষ্টিগন সমৃদ্ধ। তাই কোন রান্নায় কি পরিমান কোন মসলা ব্যবহার করলে খাবারে পুষ্টিগুন ঠিক থাকবে সেটা হাতে কলমে শিখাচ্ছেন ডা. আজমল হক। তাই রোগী দেখার চেম্বারের টেবিলে সাজিয়ে রেখেছেন পুষ্টির ট্রে। যেখানে চাল, ডাল, আটা, তেল, মসলা, বিভিন্ন ফল ও সাবানসহ মানুষের খাদ্য তালিকার সবই রয়েছে।

চেম্বারে আসা রোগী মা ও শিশুদের প্রথমে রান্নার কৌশল আর কোন খাবারে কি পুষ্টি তা হাতে কলমে শিখিয়ে তবেই চিকিৎসার নির্দেশনা দেন ডা আজমল হক। তার রুমে গেলে চিকিৎসকের চেম্বার মনে হবে না। যে কেউ প্রথমে ধারনা করবেন এটি কোন সবজির দোকানের প্রদর্শনী।

৪ মাসের শিশুর জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসা মা জান্নাতি বেগম বলেন, চিকিৎসকের কাছে আসলে আগে বিভিন্ন টেষ্ট করতে বলেন। কিন্তু ডা. আজমল হকের নিয়মটা উল্টো। তিনি আগে জানতে চান বাড়ির খাবার পদ্ধতি। তাই তিনি কোন খাদ্যে কোন পুষ্টি এবং পুষ্টিকর খাবার তৈরীর পদ্ধতিও বর্ননা করেন। সর্বশেষে চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন লিখেন। সেই প্রেসক্রিপশনের উপর লিখেন এ রোগের জন্য কোন পুষ্টিকর খাবারটি খাওয়াতে হবে। তার চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ ভাল।

হাসপাতাল গেটের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ডা. আজমল হক এ হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে রোগীদের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে মা ও শিশুদের ভিড় বেড়েছে এ হাসপাতালে।

ডা. আজমল হোসেন বলেন, গ্রামীন মায়েরা নানান কুসংস্কারে নিমজ্জিত রয়েছেন। এখনও মান্দাতা আমলের চিন্তা ভাবনা নিয়ে চলেন। শিশুদের কিছু হলে ঝাঁড় ফুকে ছুটে যান। পরে অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে হাসপাতালে আসেন। তখন চিকিৎসা দিতে বেশ সময় লাগে। পেটের সন্তান মোটা হওয়ার ভয়ে এখনও গর্ভবতি মাকে কম খাওয়া হয়। যা মা ও নবজাতকের জন্য মারাত্বক ঝঁকি। অথচ গর্ভবতি মায়েদের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। গর্ভের সন্তান বেঁচে থাকে মায়ের খাবার থেকে নির্যাস পেয়ে। তাই দ্বিগুন খাবার প্রয়োজন গর্ভবতি মায়েদের। মৌসুমী ফল আর সবজিতে প্রচুর পুষ্টি। অথচ অজানার কারনে সহজে পাওয়া এ পুষ্টি থেকেও বঞ্চিত থাকেন গ্রামীন মা ও শিশুরা। মসলা শুধু তরকারির সাদ বাড়ায় না, পুষ্টিগুনে ভরপুর এসব মসলা।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে এসে এমন কুসংস্কার দেখে চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিবর্তন নিয়ে এসেছি। আগে পুষ্টির উপর জোর দেয়া হচ্ছে। পরে চিকিৎসা। তাই টেবিলে পুষ্টির ট্রে সাজিয়ে রেখেছি। চিকিৎসা নিতে আসা মায়েদের হাতে কলমে পুষ্টিকর খাদ্য ও তা রান্নার কৌশল বর্ননা করা হয়। এখানে দেখে মায়েরা বাসায় গিয়ে শিশুদের এ ভাবে খাদ্য অভ্যাস করলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে। ঠিক তেমনি শিশুদের মেধারও বিকাশ ঘটবে। শিশুরা ভাল থাকলে সুস্থ্য থাকবে আগামীর বাংলাদেশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়