ইউসুফ মিয়া: [২] করোনার মহামারীকে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রাজবাড়ী জেলায় করোনাকালে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বাল্য বিয়ে। সরকারি তথ্য অনুযায়ীই করোনাকালে রাজবাড়ীতে ৯’শ ৩১ জন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। জেলায় বহু সংখ্যক বাল্য বিবাহ হওয়ার বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবকেরা দায়ী বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
[৩] জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, করোনার মহামারীর শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত রাজবাড়ী সদর উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪’শ ৬ জনের বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। স্কুল পর্যায়ে বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে ২’শ ৪৩, মাদ্রাসার ১’শ ৬১ ও কলেজের ২জন রয়েছে।
[৪] জেলার পাংশা উপজেলায় বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে ১’শ ৩২ জন। এর মধ্যে স্কুল পর্যায়ের ৩২, মাদ্রাসার ৭০ ও কলেজের ৩০ জন রয়েছে। বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১’শ ৫৭ জন। স্কুল পর্যায়ের ১শত ১১ জন ও মাদ্রাসার ৪৬ জন রয়েছে। জেলার কালুখালী উপজেলায় বাল্য বিবাহ হয়েছে ৭২ জনের। তার মধ্যে স্কুল পর্যায়ের ৬২ জন ও মাদ্রাসার ১০ জন রয়েছে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় বাল্য বিবাহ হয়েছে ১শত ৬৪ জনের। তার মধ্যে স্কুল পর্যায়ের ৮০ জন ও মাদ্রাসার ৮০ জন ও কলেজের ৪ জন রয়েছে।
[৫] সব মিলিয়ে জেলার ১’শ ৫০টি স্কুলের মধ্যে ৫’শ ২৮ জন, ৭৩টি মাদ্রাসার মধ্যে ৩’শ ৬৭ ও ২৯টি কলেজের মধ্যে ৩৬ জন শিক্ষার্থী এপর্যন্ত বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে।
[৬] রাজবাড়ী সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হাসান বলেন, করোনার কারণে রাজবাড়ী সদরে বাল্য বিবাহ বেড়েছে। তবে আমরা প্রতি বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করি। যাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সচেতন হয় এবং বাল্য বিবাহ না দেয় কিন্ত পরিবার তাদের নিজেরাই গোপনে বাল্য বিবাহ দিয়ে থাকেন।
[৭] রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, রাজবাড়ী জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো করোনা কালিন সময়ে বন্ধ থাকায় বিভিন্ন কারণে বাল্য বিয়ে হয়েছে। তার মধ্যে করোনার জন্য দীর্ঘ দিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকা, পারিবারিক সচেতনতার অভাব, দারিদ্রতা, পিতা-মাতা অভিভাবকের ইচ্ছায় শিক্ষার্থীরা বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। বাল্য বিয়ের ব্যাপারে শিক্ষার্থী ও অভিভাবদের আরো বেশী সচেতন হতে হবে। তাহলেই বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে।
[৮] রাজবাড়ী জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন জানান, করোনা কালীন সময়ের ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল-কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠন বন্ধ থাকার অজুহাতে যদি কোন শিক্ষার্থীর বাল্য বিবাহ হয় তাহলে তার আর লেখাপড়া হয় না। সকলকে বাল্য বিবাহের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
[৯] অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোঃ মাহাবুর রহমান শেখ জানান, দেশের করোনাকালিন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটেছে। বাল্য বিবাহ রোধে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। নিকাহ রেজিস্ট্রারদের বাল্য বিবাহের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা: হ্যাপি