শিরোনাম
◈ ‘আমি একজন হতভাগী, পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’ ◈ গুলিবিদ্ধ এরশাদ উল্লাহর খোঁজ নিলেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, দ্রুত সুস্থতা কামনা ◈ ভারতীয় সীমান্তে সক্রিয় চক্র, দেখতে আসল কিন্তু জাল টাকা! (ভিডিও) ◈ নিউ ইয়র্কের মেয়র মামদানি উগান্ডার ক্রিকেট লিগে খেলেছেন ◈ জামায়াত নেতার ‘নো হাংকি পাংকি’ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করলেন মাসুদ কামাল ◈ ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডর: বাংলাদেশ ঘিরে কৌশলগত চাপ বাড়াতে ভারতের নতুন পদক্ষেপ ◈ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ক্লাব নিয়ে ঢাকায় হবে সুপার কাপ ফুটবল  ◈ ‌ক্রিশ্চিয়া‌নো রোনালদোর কাছে সৌদি আর‌বের চেয়ে স্পেনে গোল করা সহজ ◈ কয়েকশ কারখানা বন্ধ ও লাখো শ্রমিক বেকার, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের ◈ বাংলাদেশি কোম্পানির বিদেশে বিনিয়োগ ১৮ দেশে, স্থিতি ৩৫ কোটি ডলার

প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০২১, ০১:৫২ রাত
আপডেট : ২৭ অক্টোবর, ২০২১, ০১:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

ঢাকা টাইমস: কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দিন দিন বাড়ছে অপরাধ। সম্প্রতি দুটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডে সাতজন নিহতের ঘটনায় সেখানে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এই অবস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশও করেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবকিছুই করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক সহায়তা কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে বিশ্বের বৃহৎ আশ্রয় শিবিরে সমন্বিতভাবে ঝুঁকি প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে বিশ্বাস করে ইইউ প্রতিনিধি দল।

মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে দেন মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিশনার জানে লেনোচিক। প্রতিনিধি দলটি প্রথমে কুতুপালংয়ে জাতিংসঘের ট্রানজিট সেন্টারে যায়। যেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এবং কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এরপর তারা ক্যাম্প-১৮ তে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের পাঠদান কার্যক্রম দেখেন ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিশনার জানে লেনোচিক বলেন, ‘এটি বিশ্বের বৃহৎ আশ্রয় শিবির। এখানে সীমাবদ্ধতার শেষ নেই। অর্থনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা যেমন আছে শিক্ষা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক মুহিবুল্লাহসহ সাত রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ড আমাদের অবাক করেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সজাগ আছি। সমন্বিতভাবে এসব ঝুঁকি প্রতিরোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে বলে বিশ্বাস করি।’

এদিকে ঢাকায় মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা সবধরনের প্রচেষ্টা নিচ্ছি। সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে তাদের বৈধতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। যাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো লোক প্রবেশ করতে না পারে। তারা যাতে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হয় এবং দলবেঁধে এখান থেকে বের হতে না পারে সেজন্য কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ক্যাম্পগুলোতে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে যাতে তারা সব সময় ক্যামেরার আওতায় থাকে। এগুলো করা হচ্ছে যাতে এখানে পরিসুন্দর একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। যাতে একটা নিরাপত্তার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরের ঘটনাগুলো কারা ঘটাচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের আরও জানতে হবে।’

গত ২৯ আগস্ট কক্সবাজারের উখিয়ায় লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি চালিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তারা এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে৷ শনিবার খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান- এবিপিএন৷ তবে পরিকল্পনাকারী পর্যন্ত এখনো পৌঁছাতে পারেনি পুলিশ৷ তাদের তথ্য অনুযায়ী, এই হত্যা মিশনে অংশ নেয় ১৯ জন৷ এদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন অস্ত্রধারী৷ পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে কয়েক মিনিটেই কিলিং মিশন শেষ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে খুনিরা৷

গত শুক্রবার ভোররাত সোয়া ৪টার দিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ১৮ নম্বর ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করে দুর্বত্তরা। তারা সবাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক।

এই দুটি ঘটনার পর আতঙ্কে আছেন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। ১৯ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা হাসান আলী বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে আমরা আতঙ্কেই ছিলাম৷ এরপর আবার পাশের ক্যাম্পে ছয়জন খুনের পর আমরা আসলে পরিবার নিয়ে শঙ্কার মধ্যেই আছি৷ পুলিশ পাহারা দিচ্ছে, কিন্তু সাধারণ রোহিঙ্গারা খুব আতঙ্কে আছেন।’

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত টেকনাফ ও উখিয়া থানায় ৮৯ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন৷ এসব ঘটনায় ৮০টি মামলা হয়েছে৷ এর বাইরে ২৪ জন রোহিঙ্গা বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন৷ সর্বশেষ শনিবার মারা গেছেন ছয়জন৷

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। এর আগেও বিভিন্ন সময় দলে দলে রোহিঙ্গারা এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। এতে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক এখন কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে। রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের জন্য বোঝায় পরিণত হয়েছে।

বারবার চেষ্টা করেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারায় কক্সবাজারের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু করে সরকার। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত বছরের ৪ ডিসেম্বরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর শুরু হয়। এ পর্যন্ত ছয় দফায় ১৮ হাজার ৩৩৪ জন শরণার্থীকে স্থানান্তর করেছে সরকার। মোট এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়